বিশ্ববিদ্যালয়-মেডিকেলে ভর্তি সহায়ক বইয়ের বাজার প্রায় ৫০০ কোটি টাকা

ভর্তিচ্ছুকদের বই নিজেরাই প্রকাশ করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কোচিং সেন্টারগুলো
ভর্তিচ্ছুকদের বই নিজেরাই প্রকাশ করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কোচিং সেন্টারগুলো  © প্রতীকী ছবি

দেশে দিন দিন বড় হচ্ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সহায়ক বইয়ের বাজার। শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি ও প্রতিযোগিতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে ভর্তি সহায়ক বইয়ের চাহিদাও বেড়েছে। বর্তমানে দেশে এ ধরনের বইয়ের বাজার অন্তত ৫০০ কোটি টাকা। নানা কৌশলে কয়েকটি চক্র শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েও নিচ্ছে।

ভর্তি সহায়ক বইয়ের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন  মেডিকেল ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্নগুলো নিয়ে লেখা প্রশ্নব্যাংকগুলোর মূল্য গড়ে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের বিভিন্ন সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নব্যাংক গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। এছাড়া ইংরেজি, ইংরেজি ভোকেবোলারি, বাংলা ও সাধারণ জ্ঞানের বই কোম্পানি ভেদে ৩০০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি মেরিন, নার্সিং, গুচ্ছ প্রকৌশল, গুচ্ছ কৃষি ও গুচ্ছ বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতির সহায়ক বইভেদে মূল্য ৪৫০ থেকে এক হাজার টাকা। 

বাজার পর্যালোচন করে দেখা গেছে, স্নাতক লেভেলের ভর্তি সয়াহক বইয়ের বার্ষিক বাজার ৪৬০-৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অর্ধেক বই বিক্রি করে বিভিন্ন কোচিং সেন্টার। তারা নিজেদের শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথক বই ছাপিয়ে তা প্রদান করে। এসব বইয়ের দাম ভর্তি ফির সঙ্গে যোগ করে নেয়া হয়। প্রতিবছর নতুন করে লাখ লাখ শিক্ষার্থী এইচএসসি পাস করে ভর্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী বইয়ের বাজার কিছুটা কমবেশি হয়ে থাকে।

স্নাতক লেভেলের ভর্তি সয়াহক বইয়ের বার্ষিক বাজার ৪৬০-৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অর্ধেক বই বিক্রি করে বিভিন্ন কোচিং সেন্টার। তারা নিজেদের শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথক বই ছাপিয়ে তা প্রদান করে। এসব বইয়ের দাম ভর্তি ফির সঙ্গে যোগ করে নেয়া হয়। প্রতিবছর নতুন করে লাখ লাখ শিক্ষার্থী এইচএসসি পাস করে ভর্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী বইয়ের বাজার কিছুটা কমবেশি হয়ে থাকে।

ভর্তিচ্ছুকদের বই নিজেরাই প্রকাশ করে কোচিং সেন্টারগুলো ফায়দা লুটায় সংকটে পড়েছেন ভর্তি সহায়ক বইয়ের প্রকাশকেরা সংশ্লিষ্টদের মতে, এখন কোচিং সেন্টারগুলো নিজেদের উদ্যোগে ভর্তি সহায়তা বই প্রকাশ ও বিক্রি করছে। শিক্ষার্থীদের কাছে এই বই বাধ্যতামূলকভাবে বিক্রি করায় তারা আর বাজার থেকে অন্য বই কিনছে না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রকাশকরা, যারা দীর্ঘদিন ধরে মানসম্মত ভর্তি সহায়ক বই প্রকাশ করে আসছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থী জুহায়ের আনজুম সাকি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমরা যখন কোচিংয়ে ভর্তি হয়েছি, তখন আমাদের থেকে একসঙ্গে ফি নেয়া হয়েছে। পরে কোচিং থেকেই এক সেট বই দিয়েছে। এখন বিষয় অনুযায়ী টপিকভিত্তিক নোট সরবরাহ করছে। তবে আলাদা করে আমার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নব্যাংক কিনে সেটা থেকেও প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

জানা গেছে, বর্তমানে অনেক ব্যক্তি যারা ব্যক্তিগতভাবে কোচিং করান, তারাও নিজেদের নামে বই প্রকাশ করছেন। এর ফলে গাইড ও নোট বই প্রকাশে যুক্ত প্রকাশকরাও বিক্রির সংকটে পড়েছেন।

প্রকাশনা খাতের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, এক সময় ভর্তি সহায়তা বই ও নোট বইয়ের প্রকাশনায় বড় প্রতিযোগিতা থাকলেও এখন বাজারের বড় অংশ দখল করে নিয়েছে কোচিং সেন্টারগুলো। এর প্রভাবে ক্ষুদ্র প্রকাশকরা টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।

দেশে বর্তমানে দুই ধরনের প্রকাশককে বেশি দেখা যায়। একদিকে সৃজনশীল প্রকাশক; যারা গল্প, কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ ও নিবন্ধ প্রকাশ করেন; অন্যদিকে গাইড ও নোট বই প্রকাশকরা। কিন্তু দুই শ্রেণিরই এখন বিপাকে পড়তে হচ্ছে। বিভিন্ন কারণে সৃজনশীল প্রকাশকরা পাঠক হারাচ্ছেন, আর গাইড বই প্রকাশকরা বাজার হারাচ্ছেন।

প্রকাশনা জগতের অনেকেই মনে করছেন, পরিস্থিতি বদলাতে হলে বই প্রকাশনা ও বিতরণ ব্যবস্থায় সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা ফিরিয়ে আনা জরুরি। কোচিং সেন্টারের একচেটিয়া আধিপত্য বন্ধ না হলে, সৃজনশীল প্রকাশনা যেমন হুমকির মুখে পড়বে, তেমনি দেশের সামগ্রিক বই শিল্পও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

জানা গেছে, এ বছর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল বিপর্যয়ের প্রভাব পড়েছে শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট প্রতিটি খাতে। বিশেষত ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিমূলক বইয়ের বাজারে এর বড় প্রভাব দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশে শিক্ষা খাতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত অন্যতম বড় অর্থনৈতিক শাখা হচ্ছে বইয়ের বাজার। প্রতি বছর এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের পর ভর্তির জন্য সহায়ক বইগুলোর বিক্রি বেড়ে যায়। তবে এ বছর বই বিক্রির হার অন্যান্য বছরের তুলনায় নগণ্য।

প্রশ্নব্যাংকগুলোর মূল্য গড়ে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের বিভিন্ন সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নব্যাংক গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। এছাড়া ইংরেজি, ইংরেজি ভোকেবোলারি, বাংলা ও সাধারণ জ্ঞানের বই কোম্পানি ভেদে ৩০০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি মেরিন, নার্সিং, গুচ্ছ প্রকৌশল, গুচ্ছ কৃষি ও গুচ্ছ বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতির সহায়ক বইভেদে মূল্য ৪৫০ থেকে এক হাজার টাকা। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এবারের গড় পাসের হার দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫৮.৮৩ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় ১৮.৯৫ শতাংশ কম। এ বছর ৬৯ হাজার ৯৭ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ শিক্ষার্থী। প্রায় অর্ধেক পরীক্ষার্থীর পাস করতে না পারা এবং জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা কমায় শিক্ষাব্যবস্থার মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

রাজধানীর নীলক্ষেত, বাংলাবাজারসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বই বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফল প্রকাশের পর অন্যান্য বছর বই কিনতে আসা শিক্ষার্থীর ভিড় বেড়ে যায় কিন্তু এ বছর তা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। বিশেষ করে যারা ভালো ফলের আশায় ছিল, তাদের অনেকেই এখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। ফলে তারা নতুন কোর্স বা ভর্তি প্রস্তুতির বই কেনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।

নীলক্ষেতের বই বিক্রেতা মনিরুল আলম বলেন, ‘এই সময়টাতে সাধারণত আমরা ভর্তি প্রস্তুতির বই বিক্রিতে ব্যস্ত থাকি। কিন্তু এ বছর দোকানে তেমন ভিড়ই নেই। যারা ফেল করেছে তারা বই কিনছে না। যারা কম জিপিএ নিয়ে পাস করেছে, তারাও কী করবেন সেটা এখনো অনিশ্চিত।’

একই অবস্থা বাংলাবাজারের পাইকারি বইয়ের দোকানগুলোতেও। ভর্তি পরীক্ষার সহায়ক বইগুলোর অন্যতম প্রকাশক প্রতিষ্ঠান জয়কলি পাবলিকেশন্সের বিক্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, নেই চিরচেনা সেই ব্যস্ততা। গ্রাহকের আনাগোনা বেশ কম। বিক্রয়কর্মী বলেন, অন্যান্য বছর এই সময়ে আমাদের যে ব্যস্ততা থাকে, সেই তুলনায় এখন একেবারেই কম। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্ডারও কম এসেছে।

ফলাফল বিপর্যয়ের কারণে প্রকাশনা ও বিক্রেতা উভয়েই ধাক্কা খাচ্ছে। অনেক প্রকাশক যেসব বইয়ের নতুন সংস্করণ ছাপানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তারা এখন তা স্থগিত রেখেছেন। কারণ বাজারের চাহিদা কোন দিকে যাবে, তা কেউ নিশ্চিত নন।

জয়কলি পাবলিকেশন্সের ম্যানেজার কমল বলেন, ‘অবস্থা খুব খারাপ, এ বছরের ব্যবসার পর হয়তো কোম্পানি বন্ধ করে দিতে হবে। শুধু আমাদের না, সবারই অবস্থা খারাপ। এ পরিস্থিতি বিগত কয়েক বছর ধরে তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা ভর্তির জন্য কোচিং করছে। ওই কোচিংগুলো নিজেদের প্রকাশিত বই শিক্ষার্থীদের কাছে বিক্রি করছে, ফলে তারা বাজারের বই কিনছে না। ব্যক্তিগতভাবে কোচিং করান, এমন ব্যক্তিরাও এখন বই প্রকাশ করছে। ফলে বাজারের ভর্তি সহায়ক বইয়ের বিক্রি আশঙ্কাজনক হারে কমছে।’

‘একাডেমিক বইয়ের বাজার ৩–৪ হাজার কোটি টাকার। তবে সমিতি প্রকাশনীগুলোর বিক্রির হিসাব রাখে না, শুধুমাত্র বইয়ের গুণগত মান নিশ্চিতে কাজ করে। একই সঙ্গে কপিরাইট ইস্যুতে অভিযোগ পেলে যাচাই-বাছাই করে পদক্ষেপ নেয়’ -মোহাম্মদ গোলাম এলাহী জাহিদ, সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি

তিনি বলেন, ‘এই বছরের উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল বইয়ের বাজারে আরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। অনেক শিক্ষার্থী এ বছর পাস করতে পারেনি, তারা তো ভর্তি হবে না, তাই প্রস্তুতির বই কেনার প্রশ্নই আসে না। এরপর আসে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও কম। গত বছরের তুলনায় এই সংখ্যা সাড়ে ৭৬ হাজারের কম। ফলে অনেক শিক্ষার্থীই বই কেনা থেকে বিমুখ থাকবে।’

নামকরা প্রকাশক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোম্পানির বইগুলো তথ্যবহুল, ফলে বইগুলো একটু বড় এবং দামও বেশি। কিন্তু কোচিং বা ব্যক্তি উদ্যোগে প্রকাশিত বইগুলো বিশেষ বিশেষ তথ্য ছোট করে প্রকাশ করে। সেখানে বিভিন্ন টেকনিক দিয়ে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করা হয়, ফলে তাদের বই ছোট এবং দামও কম।

প্রতি বছর লাখ লাখ শিক্ষার্থী ভর্তিযুদ্ধে যুক্ত হয়। এ বছর সাত লাখের বেশি শিক্ষার্থী এইচএসসি পাস করেছে। তারা ভর্তির জন্য কোচিং কিংবা বাজার থেকে বই কিনবে। সে হিসেবে এই বইয়ের বাজার কয়েক শত কোটি টাকার। যদিও বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির (বাপুস) কাছে এই বইয়ের বাজার নিয়ে সুনির্দিষ্ট হিসাব নেই।

বাপুসের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ গোলাম এলাহী জাহিদ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘একাডেমিক বইয়ের বাজার ৩–৪ হাজার কোটি টাকার। তবে সমিতি প্রকাশনীগুলোর বিক্রির হিসাব রাখে না, শুধুমাত্র বইয়ের গুণগত মান নিশ্চিতে কাজ করে। একই সঙ্গে কপিরাইট ইস্যুতে অভিযোগ পেলে যাচাই-বাছাই করে পদক্ষেপ নেয়।’

আরও পড়ুন: চাকরিতে ‘রাজনৈতিক পরিচয় যাচাই’ প্রথা এখনো বহাল, বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেই সংস্কার সুপারিশের

তিনি বলেন, ‘একাডেমিক বইয়ের বাজার অনেক বড়। প্রতিবছর নতুন শিক্ষার্থী আসছে, বাজার থেকে বই কিনছে। কোচিং সেন্টার থেকে হোক কিংবা বাজার থেকে, তারা কিন্তু বই কিনছে। তাই এই ধরনের বইয়ের বাজার বাড়ছে, তবে বড় কোম্পানিগুলো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে।’

এইচএসসির ফলাফল ভর্তি সহায়তা বইয়ের বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এটা সত্য, ফলাফল বিপর্যয়ের একটা বড় প্রভাব এই বাজারে পড়বে। যারা ভালো রেজাল্ট করতে পারেনি তারা আশানুরূপ বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা মেডিকেল কলেজে ভর্তিযুদ্ধে অংশ নিতে পারবে না। ফলে বই কেনার ক্ষেত্রেও তারা পছন্দ পরিবর্তন করবে। সার্বিকভাবে এই ধরনের বই বিক্রি কমবে।’

বইয়ের বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গণঅভ্যুত্থানের পর গত দুই বছরে দেশের বই শিল্প নিম্নমুখী। কাগজের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি মুদ্রণ খরচও বেড়েছে। এ ছাড়া গত কয়েক মাস যাবৎ বিক্রিও কম।

এদিকে এইচএসসি ফলাফলের প্রভাব পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিংগুলোতেও। ফলাফল প্রকাশের পর এসব কোচিংয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশ কম। রাজধানীর ফার্মগেট এলাকার নামকরা একটি মেডিকেল ভর্তি কোচিং সেন্টারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে কম। অন্য বছরে ফলাফল প্রকাশের পরই ভর্তি হতে আসে অসংখ্য শিক্ষার্থী, কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন। পাশাপাশি ইতোমধ্যে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের অনেকে আশানুরূপ ফলাফল করতে পারেনি। তাদের মধ্যেও হতাশা কাজ করছে।’

আরও পড়ুন: এমফিল বাদ দেওয়া আমাদেরকে মাইনাস করার মাস্টারপ্ল্যান: জবি ছাত্রদল আহবায়ক

তিনি আরও জানান, যাদের ফলাফল মেডিকেলে ভর্তির চাহিদা অনুযায়ী হয়নি, তাদের জন্য আলাদাভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য একটি ফ্রি কোর্স অফার করেছে ওই কোচিং সেন্টার।

ভর্তি সহায়ক বইয়ের পাশাপাশি বিক্রি কমেছে চাকরির প্রস্তুতিমূলক বইয়ের। এক্ষেত্রেও বিভিন্ন কোচিং সেন্টারকে দায়ী করছেন বড় কোম্পানিগুলো। কোচিং সেন্টারের নিজস্ব বইয়ের কারণে বাজারের বই বিক্রিতে ভাটা পড়েছে বলে অভিযোগ তাদের।

প্রকাশনী ব্যবসার দুর্দিন জানিয়ে কথাসাহিত্যিক ও প্রকাশনী সংস্থা দিব্য প্রকাশের প্রধান মঈনুল আহসান সাবের বলেছেন, ‘গত বছরের জুলাই থেকে বইয়ের ব্যবসা বলে আর কিছু নেই। সবাই, যারা ক্রেতা আর কি, তাদের হাতে হয় পয়সা নেই কিংবা তারা অন্যকিছু নিয়ে ব্যস্ত। এখন এদেশে কতকিছু নিয়ে মানুষের ব্যস্ততা! তা, তা হলে আমরা, অধিকাংশ প্রকাশকরা কী করি! যারা মুজিব কর্নারে আর বিভিন্ন গোপন প্রজেক্টে বই বিক্রি করে জীবনের বাদবাকি সময়ের কামানো কামিয়ে নিয়েছেন, তাদের কথা বাদ। কথা শুধু আমাদের , যারা টিমটিম করে টিকে আছি। ব্যবসা থেকে আয় হচ্ছে, আমার যা প্রয়োজন তার চারভাগের একভাগ।’

তিনি বলেন, ‘এই একভাগ নিয়ে আর এগনো যাচ্ছে না। কতজন কতরকম চাকরিতে ঢুকে গেছেন। হাসিহাসি মুখে অফিস করছেন, কিংবা করছেন না। নিশ্চয় তারা আমার চেয়ে যোগ্য। আমি মফিজই যোগ্য হয়ে উঠতে পারিনি। তবে এও ঠিক, একবছর ধরে এই চাপ আর নেয়া যাচ্ছে না। ফেইসবুকে এসে হাসাহাসিও আর আনন্দ দিচ্ছে না। অনেকটাই যেন ট্রমার মধ্যে আছি। এই অবস্থা দূর না হওয়া পর্যন্ত ফেইসবুক থেকে দূরে থাকি। নিজের গ্লানির কাছে থাকি।’


সর্বশেষ সংবাদ