মানবসভ্যতার অগ্রগতির মূল শক্তি উদ্ভাবন। যুগে যুগে সমাজের পরিবর্তন ঘটেছে সৃজনশীল মানুষের নতুন চিন্তা, নতুন প্রযুক্তি ও নতুন ধারণার মাধ্যমে। আজকের বিশ্বে প্রযুক্তি, চিকিৎসা, যোগাযোগ, কৃষি, এমনকি সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও দেশগুলোর উন্নতির মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে উদ্ভাবন। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মও সেই অগ্রযাত্রার অংশ। তাদের মাঝে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে, রয়েছে নজরকাড়া সাফল্যের ইতিহাস।
বাংলাদেশে উদ্ভাবনের গল্প নতুন নয়। স্বাধীনতার পরপরই দেশের মানুষ খাদ্যঘাটতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কৃষিতে নানামুখী পরিবর্তন আনে। নতুন জাতের ধান, মাছ চাষে উদ্ভাবনী পদ্ধতি, সোলার এনার্জি ব্যবহার, গ্রামীণ ব্যাংকের সামাজিক ব্যবসা—এসবই উদ্ভাবনের ফল। এরপর ধীরে ধীরে প্রযুক্তি খাত, তথ্যপ্রযুক্তি, জ্বালানি, স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি সবক্ষেত্রেই নতুন নতুন উদ্যোগ দেখা যায়। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রুয়েট, কুয়েট, চুয়েট, আইইউবিটি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, শাবিপ্রবি এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও তরুণ শিক্ষার্থীরা তৈরি করছেন নানা আবিষ্কার। কৃষি ক্ষেত্রে তাদের উদ্ভাবন বহুল প্রশংসীত।
তরুণদের উদ্ভাবনী শক্তি বিকাশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে শিক্ষা ও গবেষণা। যে শিক্ষা শুধু চাকরিপ্রার্থী তৈরি করে, তা দেশের জন্য পর্যাপ্ত নয়; প্রয়োজন সমস্যা সমাধানমুখী শিক্ষা। বিজ্ঞান চর্চায় তরুণদের আগ্রহ বাড়াতে হলে ল্যাবরেটরি, গবেষণা তহবিল, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং বিশ্ববিদ্যালয়–শিল্পখাত সংযোগকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। স্কুল-কলেজ পর্যায়ে বিজ্ঞান মেলা, রোবটিক্স প্রতিযোগিতা, স্টার্টআপ এক্সিলারেটর কিংবা কোডিং প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজন তরুণদের চিন্তাশক্তিকে আরও উজ্জীবিত করবে।
বাংলাদেশে ইতিমধ্যে স্টার্টআপ সংস্কৃতি দৃশ্যমান হয়েছে। অনলাইন পেমেন্ট, ই-কমার্স, কৃষি প্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা প্রযুক্তি ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে তরুণ উদ্যোক্তারা সফল। অনেকেই বৈশ্বিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করছেন এবং কর্মসংস্থান তৈরি করছেন। সরকারি উদ্যোগ ‘স্টার্টআপ বাংলাদেশ’ কিংবা ‘ইনোভেশন ডিজাইন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনারশিপ একাডেমি’ তরুণ উদ্ভাবকদের শক্তি বাড়িয়েছে।
উদ্ভাবনের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো, এটি ভবিষ্যৎ বদলাতে পারে। দেশের জ্বালানি সংকট, শিক্ষাব্যবস্থা, কৃষি, পরিবেশ, যানজট, স্বাস্থ্যসেবাসহ নানা সমস্যার টেকসই সমাধানও তরুণদের নতুন চিন্তার ওপর নির্ভর করে। এজন্য আমাদের প্রয়োজন এমন একটি সমাজ, যেখানে নতুন ধারণাকে স্বাগত জানানো হবে, ব্যর্থতাকে শেখার অংশ হিসেবে গ্রহণ করা হবে, আর তরুণদের স্বপ্ন দেখার ও তা বাস্তবায়নের সুযোগ দেওয়া হবে।
উদ্ভাবনের পথ কোনোভাবেই সহজ নয়। এ পথে রয়েছে পরীক্ষা, ব্যর্থতা ও নতুন করে শুরু করার সাহস। কিন্তু সম্ভাবনা অসীম। সঠিক শিক্ষা, গবেষণায় বিনিয়োগ, স্টার্টআপবান্ধব নীতি, এবং উদ্ভাবনমুখী সমাজ গড়ে তুলতে পারলে বাংলাদেশ উদ্ভাবনের এক শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে। আমাদের তরুণরাই সেই ভবিষ্যৎ নির্মাণের কেন্দ্রবিন্দু।
উদ্ভাবনকে এগিয়ে নিতে গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস-এর ‘উদ্ভাবন’ বিভাগ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ-তরুণীদের সৃজনশীল আবিষ্কার, গবেষণা, স্টার্টআপ উদ্যোগ এবং বৈজ্ঞানিক সাফল্যগাথা নিয়মিতভাবে পাঠকের সামনে তুলে ধরে। পাশাপাশি নতুন উদ্ভাবক, প্রযুক্তি উদ্যোক্তা এবং গবেষণা প্রকল্পের গল্প প্রকাশ করে দেশের উদ্ভাবনী পরিবেশকে আরও সমৃদ্ধ করে। সৃজনশীলতার আগুন যেন থেমে না যায়, উদ্ভাবনের আলো যেন আরও অনেক জীবন বদলে দেয়, এ হোক আগামী দিনের অঙ্গীকার।