স্লুইসগেটের স্রোতে বিদ্যুৎ উৎপাদন, আলো ছড়াচ্ছেন মনিরুল
- বরগুনা প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২৫, ০৯:২৫ AM , আপডেট: ১৫ আগস্ট ২০২৫, ১১:০২ AM
বরগুনায় নদীর জোয়ার-ভাটার সময় স্লুইস গেট দিয়ে পানি প্রবেশের স্রোতকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছেন মো. মনিরুল ইসলাম নামে এক উদ্ভাবক। তার এমন উদ্ভাবনকৃত বিদ্যুতে একসঙ্গে জ্বলছে প্রায় অর্ধশতাধিক বৈদ্যুতিক লাইট। তিন মাসের প্রচেষ্টায় নদীর পানির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তার এ সফল উদ্ভাবনে এলাকাবাসী গর্বিত ও আনন্দিত।
মনিরুল ইসলাম বরগুনা সদর উপজেলার ৬ নম্বর বুড়িরচর ইউনিয়নের পুরাকাটা এলাকার বাসিন্দা। তিনি ওই এলাকার স্থানীয় বাজারের একজন জ্বালানি তেলের ব্যবসায়ী। ২০০৬ সাল থেকে ব্যবসার পাশাপাশি প্রাকৃতিক শক্তিকে ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভাবনমূলক গবেষণা শুরু করেন। সর্বশেষ তিন মাসের চেষ্টায় সম্পূর্ণ নিজস্ব চিন্তায় মাত্র ৭০ হাজার টাকা ব্যয় করে লোহা দিয়ে কিছু যন্ত্রাংশ তৈরি করেন তিনি। পরে পায়রা নদীতে থাকা একটি স্লুইস গেটে সেগুলো স্থাপন করেন। আর সেখান থেকেই এখন জোয়ারের পানি প্রবাহের স্রোতের মাধ্যমে সফলভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছেন তিনি।
সরেজমিনে সদর উপজেলার পুরাকাটা এলাকার পায়রা নদীর সঙ্গে থাকা স্লুইস গেট ঘুরে দেখা গেছে—জোয়ারের সময় নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে স্লুইসের মাধ্যমে ছোট নদী ও খালে পানি প্রবেশ করছে। এ পানি প্রবাহের সময় সৃষ্ট স্রোতকে কাজে লাগাতে স্লুইস গেটের মুখে লোহার তৈরি নিজের উদ্ভাবিত বিশেষ ধরনের একটি ফ্যান বসিয়েছেন মনিরুল। পানির স্রোতের ধাক্কায় ওই ফ্যান ঘুরলেই তৈরি হচ্ছে বিদ্যুৎ। স্বল্প পরিসরে উদ্ভাবিত বিদ্যুতের মাধ্যমেই স্লুইস গেটটির পাশে একসঙ্গে তিনি জ্বালিয়েছেন অর্ধশতাধিক বৈদ্যুতিক লাইট। দৃশ্যটি দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন পথচারী ও স্থানীয়রা।
দিনে দু’বার জোয়ারে নদীর স্রোত বেড়ে যাওয়ায় ২৪ ঘণ্টায় ১৫–১৮ ঘণ্টা নিরবিচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা ছগির হোসেন বলেন, “ভাবতেও পারিনি নদীর স্রোত দিয়ে আমাদের গ্রাম আলোয় ভরে উঠবে। মনির ভাই অসাধারণ কাজ করেছেন।”
ওয়ার্কশপ মেকানিক মো. জাহিদ জানান, পদ্ধতিটি খুবই সাশ্রয়ী। বড় আকারে বাস্তবায়ন হলে খরচ আরও কমে আসবে এবং বেশি মানুষ উপকৃত হবে।
উদ্ভাবক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘২০০৬ সাল থেকে দেশপ্রেম থেকেই বিভিন্ন ধরনের উদ্ভাবনী চিন্তা শুরু করেছি। পরে জ্বালানি তেল কেনার খরচ বাঁচাতে নদীর জোয়ার-ভাটাকে ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে কাজ শুরু করি। বর্তমানে আমার উদ্ভাবিত যন্ত্রে নদীর পানির উচ্চতা ৫ ফুট ব্যবধান হলেই পানির স্রোতে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। তবে আরেকটু সংযোজন করলে মাত্র ৩ ফুট উচ্চতার ব্যবধানেও বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ উদ্ভাবনটি যদি মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া যায় তাহলে এক সময় জলবিদ্যুৎ দিয়ে পুরো বাংলাদেশ আলোকিত করা সম্ভব হবে। বিদ্যুতের জন্য জ্বালানি তেল ও কয়লা ব্যবহারে যে খরচ হতো তা আর লাগবে না। একবার শুধু জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ স্থাপন করলেই ব্যয়হীনভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যাবে।’
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, ‘মনিরুলের এই উদ্যোগ প্রমাণ করে—সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী শক্তি থাকলে সীমিত সম্পদ দিয়েও বড় পরিবর্তন আনা যায়। সুযোগ পেলে আমরা অবশ্যই সহযোগিতা করব।’