ধর্ম ও নৈতিকতা বাঙালির জীবনবোধ, সংস্কৃতি ও সামাজিক কাঠামোর এক গভীর ভিত্তি। বাংলাদেশ একটি ধর্মীয়ভাবে বৈচিত্র্যময় দেশ, যেখানে ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ ঐতিহাসিকভাবে সহাবস্থান করে এসেছে। ধর্মীয় শিক্ষা ও নৈতিক মূল্যবোধ ব্যক্তি চরিত্র গঠনের পাশাপাশি সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এজন্য বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ও নাগরিক জীবনে ধর্ম ও নৈতিকতা বিষয়টি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
বাংলাদেশে ইসলামের আগমন ঘটে প্রায় এক হাজার বছর আগে সুফি সাধক, বণিক ও মুসলিম শাসকদের মাধ্যমে। সুফি দরবেশরা শান্তি, সহমর্মিতা, সাম্য ও মানবকল্যাণের বার্তা প্রচার করেন, বাংলার সমাজে তা গভীর প্রভাব ফেলে। পাশাপাশি হিন্দু ধর্ম হাজার বছর ধরে বাঙালির সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যকে লালন করেছে। বৌদ্ধ ধর্ম অশোক যুগ থেকে শুরু করে পাল যুগ পর্যন্ত বাংলায় ব্যাপকভাবে বিকশিত হয় এবং বৌদ্ধ সংস্কৃতি সাহিত্য, স্থাপত্য ও জ্ঞানচর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খ্রিষ্টান ধর্ম মূলত পর্তুগিজ মিশনারি ও ইউরোপীয় আগমনের মাধ্যমে বাংলায় বিস্তার লাভ করে। এ বৈচিত্র্য বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত, বিশ্বব্যাপী তা প্রশংসিত।
বাংলাদেশের সংবিধানেও ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক নাগরিক তার নিজ ধর্ম পালন ও প্রচারের অধিকার রাখে। তবে ধর্মের মূল শিক্ষা শুধু আচার পালনে সীমাবদ্ধ নয় বরং নৈতিকতা, সৎকর্ম, মানবতা, সহমর্মিতা ও ন্যায়ের চর্চাই প্রকৃত ধর্মীয় চেতনার ভিত্তি। এ নৈতিক মূল্যবোধ পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংগঠন ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের মাধ্যমে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়ে।
বাংলাদেশের স্কুল–কলেজে ধর্ম ও নৈতিকতা শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে সত্যবাদিতা, ন্যায়পরায়ণতা, পরোপকার, দায়িত্ববোধ ও সমাজের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ গড়ে তোলা। নৈতিক শিক্ষা তরুণ প্রজন্মকে শুধু একজন ভালো মানুষ নয়, বরং সুশৃঙ্খল নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্র ও সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে সহায়তা করে।
বর্তমান বৈশ্বিক যুগে অশান্তি, ধর্মীয় কুসংস্কার ও বিভাজন মোকাবিলায় ধর্মের মানবিক মূল্যবোধ আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ধর্মের নামে সহিংসতা বা ঘৃণা নয়, বরং শান্তি, সম্মান ও সহনশীলতাই হওয়া উচিত আমাদের পথচলা। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের গৌরব এবং এটি ভবিষ্যতেও আমাদের জাতীয় শক্তি হিসেবে কাজ করবে।
সবশেষে, ধর্ম ও নৈতিকতার সমন্বয় আমাদের সমাজে শান্তি, ন্যায্যতা ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় অপরিহার্য। এ নৈতিক ভিত্তিই আমাদের ব্যক্তিজীবন, পরিবার ও রাষ্ট্রকে আরও সুশৃঙ্খল ও কল্যাণময় পথে এগিয়ে নিতে পারে।
দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস গুরুত্বের সঙ্গে ধর্ম ও নৈতিকতা বিভাগে প্রকাশ করে সংবাদ, বিশিষ্টজনের লেখা ও বিশ্লেষণ। এ ছাড়াও ধর্মের আলোকে জীবনের নানা দিক নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।