বাংলাদেশে ‘ভর্তি পরীক্ষা’ শুধু একটি পরীক্ষাই নয়, এটি লাখো শিক্ষার্থীর জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। স্কুল থেকে কলেজ, কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি প্রতিটি স্তরেই ভর্তি পরীক্ষা যেন স্বপ্নের সিঁড়ি। মেধা, পরিশ্রম আর মানসিক দৃঢ়তার সমন্বয়ে যে পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়, তার ফলাফল শুধু একটি আসন নয়, বরং একটি নতুন জীবনের দরজা।
স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা বহু পরিবারে প্রথম বড় শিক্ষা-চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে নামী স্কুলগুলোতে আসনসংখ্যা সীমিত হওয়ায় প্রতিযোগিতা শুরু হয় খুব শৈশবেই। কেউ কেউ এটিকে অতি-চাপ মনে করেন, আবার অনেক পরিবার এটিকে শিশুর মৌলিক শিক্ষাজীবনের প্রথম মাইলস্টোন হিসেবে দেখেন। যেভাবেই দেখা হোক, এটিই বাংলাদেশের শিক্ষাজীবনে ‘প্রতিযোগিতা’ শব্দটির প্রথম ব্যবহার।
কলেজ ভর্তি অনেকটাই নম্বরভিত্তিক হলেও এখনো গুরুত্বপূর্ণ। ভালো কলেজে জায়গা পাওয়া মানে শুধু ভালো পড়াশোনা নয় বরং একটি অনুকূল পরিবেশ, নতুন দিগন্ত এবং ভবিষ্যৎ লক্ষ্য গঠনের প্ল্যাটফর্ম। বিশেষ করে বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য তিন ধারায় সঠিক কলেজ নির্বাচন শিক্ষার্থীর পরবর্তী পথচলায় গভীর প্রভাব ফেলে।
সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক ও মানসিকভাবে চ্যালেঞ্জিং হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। প্রতি বছর লক্ষাধিক শিক্ষার্থী দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একটি আসনের জন্য লড়ে যায়। কখনো এক আসনের বিপরীতে ৫০ থেকে ১৫০ জন পর্যন্ত লড়াই করে। এক অর্থে, এটি দেশের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষাগুলোর একটি। চিকিৎসা, প্রকৌশল, কৃষি, বিজ্ঞান, কলা প্রতিটি ক্ষেত্রেই সেই তীব্র প্রতিযোগিতার চাপ শিক্ষার্থীদের ওপর প্রবল মানসিক বোঝা সৃষ্টি করে।
ভর্তি পরীক্ষা মেধাবিকাশের একটি প্ল্যাটফর্ম, তবু ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কিছু প্রশ্নও আছে। শিক্ষাব্যবস্থায় সমতা কতটা নিশ্চিত হচ্ছে? গ্রামের মেধাবী শিক্ষার্থী কি একই সুযোগ পাচ্ছে? কোচিং-নির্ভর প্রস্তুতির কারণে অর্থনৈতিক বৈষম্য কি বাড়ছে? অনেকে মনে করেন, ভর্তি পরীক্ষাকে আরও আধুনিক, ন্যায়সংগত ও শিক্ষার্থী-বান্ধব করার সুযোগ আছে।
ভর্তি পরীক্ষা বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে প্রস্তুত করে কঠিন বাস্তবতার জন্য। এখানে তারা শেখে সময় ব্যবস্থাপনা, মানসিক স্থিতি, প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা এবং নিজের সামর্থ্যের সর্বোচ্চ ব্যবহার। ব্যর্থতা যেমন হতাশা আনে, তেমনই সফলতা নতুন স্বপ্নকে ডানা দেয়। সবচেয়ে বড় কথা, ভর্তি পরীক্ষা কখনোই জীবনের শেষ পরীক্ষা নয় বরং বড় যাত্রার শুরু।
বাংলাদেশের ভর্তি পরীক্ষার সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক দুটি ক্ষেত্র হলো মেডিকেল ও বুয়েট ভর্তি পরীক্ষা। প্রতি বছর এক আসনের বিপরীতে এখানে লড়াই করেন শতাধিক শিক্ষার্থী। মেডিকেলে ভর্তির জন্য এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা দেশের সবচেয়ে বড় সমন্বিত পরীক্ষা। প্রায় লক্ষাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। অন্যদিকে বুয়েট ভর্তি পরীক্ষা দেশের প্রকৌশল শিক্ষার শিখর হিসেবে বিবেচিত হয়। অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভর্তি পরীক্ষাগুলোও তীব্র প্রতিযোগিতাময়। অংশ নেন অসংখ্য শিক্ষার্থী। তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে একজন শিক্ষার্থী ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেন।
বাংলাদেশের শিক্ষাজীবনে ভর্তি পরীক্ষা এখনো একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। শিক্ষার্থীর স্বপ্ন, পরিবারের প্রত্যাশা এবং জাতির ভবিষ্যৎ সব মিলিয়ে ভর্তি পরীক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে জড়িত অনেক কোচিং সেন্টার, জড়িত অসংখ্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থী।
দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস-এর গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ ‘ভর্তি পরীক্ষা’। এখানে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা পান বিভিন্ন তথ্য ও পরামর্শ। সংবাদ, প্রতিবেদন, ফিচার, সাক্ষাৎকার থেকে শুরু করে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের অন্যতম আকর্ষণ এটি। এ বিভাগের উপ-বিভাগগুলো হলো ‘নিত্য তথ্য’, ‘পরামর্শ’, ‘অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণ’ ‘প্রশ্ন সমাধান’ ও ‘মডেল টেস্ট’।