উচ্চশিক্ষা কোনো দেশের শুধু একটি শিক্ষাগত ধাপ নয়, এটি ভবিষ্যৎ উন্নয়ন, উদ্ভাবন, মানবসম্পদ গঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের এই শিক্ষা একটি জাতির মনন, চিন্তা, বিজ্ঞান, গবেষণা ও নৈতিক চেতনার ভিত্তি স্থাপন করে। যে দেশে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা যত শক্তিশালী হয়, সে দেশ তত বেশি জ্ঞানসমৃদ্ধ, আধুনিক ও মানবিক হয়ে ওঠে।
বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার ইতিহাস তুলনামূলকভাবে পুরোনো। ব্রিটিশ ভারতের সময় থেকেই এই অঞ্চলে উচ্চশিক্ষার সূচনা ঘটে। ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ বলা হতো, এটি উপমহাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে বিশাল ভূমিকা রেখেছে। পাকিস্তান শাসনামলেও দেশে উচ্চশিক্ষার কিছু প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠত হয়। স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবুর রহমান উচ্চশিক্ষাকে রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম অগ্রাধিকার হিসেবে দেখেন। ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় আইন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নতুনভাবে সংগঠিত করে, গবেষণা ও শিক্ষাকে নেয় শক্তিশালী কাঠামোর আওতায়। পরবর্তীকালে বিভিন্ন অঞ্চলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯২ সালের প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি অ্যাক্টের মাধ্যমে। এর আগে উচ্চশিক্ষার সুযোগ সীমিত ছিল, বিশেষত শহরের বাইরে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ায় উচ্চশিক্ষা গণতান্ত্রিক হয়। গ্রামের শিক্ষার্থীও এখন নিজের পছন্দমতো বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নিতে পারে। বর্তমানে দেশে ৫০টির বেশি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রায় ১০০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এছাড়াও আছে বিশেষায়িত ইনস্টিটিউট ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার পরিসর এখন আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বিস্তৃত ও বহুমুখী।
উচ্চশিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। এটি শুধু ডিগ্রি নয়, এখানে গড়ে ওঠে একজন শিক্ষার্থীর নেতৃত্বগুণ, যুক্তিবোধ, গবেষণার মনোভাব, মানবিক চেতনা ও পেশাগত সক্ষমতা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণার মাধ্যমে অর্থনীতি, কৃষি, জলবায়ু, স্বাস্থ্য, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিতে নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করে। সরাসরি তা দেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে। বইমেলা, বিতর্ক, নাটক, সংগীত, বিজ্ঞানচর্চা ইত্যাদি সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনের জন্মও হয় উচ্চশিক্ষার পরিবেশেই।
বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা নিয়ে নানা জটিলতা আছে। মানসম্মত শিক্ষক সংকট, গবেষণার সীমাবদ্ধতা, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, বাস্তবসম্মত পাঠ্যক্রমের অভাব এবং কর্মসংস্থানহীনতা অনেক সময় উচ্চশিক্ষাকে কাঙ্ক্ষিত গতি দেয় না। তবুও প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ তরুণ–তরুণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে যায় নতুন স্বপ্ন নিয়ে। তাদের চোখের আলো, তাদের শেখার ইচ্ছে, তাদের গবেষণার ক্ষুধাই তৈরি করছে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।
বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা নেহায়াত কম নয়। সেসবের মধ্যে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মানসম্পন্ন শিক্ষা নিয়ে বিতর্কও আছে। এ ছাড়াও বাজেট ও বিনোযোগেরও স্বল্পতা আছে। তবুও দেশের অগ্রগতি ও কল্যাণে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম।
সর্বোপরি, উচ্চশিক্ষা শুধু ভবন বা ক্যাম্পাস নয়, এটি একটি জাতির জ্ঞানভিত্তিক যাত্রার সূতিকাগার। যে দেশ তার বিশ্ববিদ্যালয়কে যত ভালোবাসে ও যত বিনিয়োগ করে, সে দেশের ভবিষ্যৎ তত উজ্জ্বল হয়।
দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস বরাবরই উচ্চশিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করছে সংবাদ, প্রতিবেদন, ফিচার থেকে শুরু করে নানা কিছু। বাংলাদেশে যত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে, সবগুলো প্রতিষ্ঠানের সর্বশেষ সংবাদ এখানে গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করা হয়। শুধু দেশের বিশ্ববিদ্যালয় নয়, পৃথিবীর নানা দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদও এখানে পাঠক পাবেন। এ বিভাগে অন্যান্য উপবিভাগুলো হলো ‘স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়’, ‘সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়’, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়’, ‘প্রকৌশল ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’, ‘মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়’, ‘কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়’ ও ‘আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়’।