বাংলাদেশের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থাকে কার্যকর, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করতে শিক্ষা প্রশাসনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা শুধু জ্ঞান অর্জনের মাধ্যম নয়; এটি দেশের মানবসম্পদ গঠনের ভিত্তি, অর্থনীতি ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোর অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। তাই শিক্ষাব্যবস্থার নীতি নির্ধারণ, পর্যবেক্ষণ, বাস্তবায়ন, মূল্যায়ন এবং প্রয়োজন হলে সংস্কার ইত্যাদি কার্যক্রমের দায়িত্বই মূলত শিক্ষা প্রশাসনের ওপর ন্যস্ত।
বাংলাদেশে শিক্ষা প্রশাসনের কাঠামো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি), মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ), বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি), এবং বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড। সরকারি শিক্ষার পাশাপাশি বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রমও এই কাঠামোর আওতায় বিভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রিত ও পর্যবেক্ষিত হয়।
শিক্ষা প্রশাসন বিভাগ শিক্ষাবর্ষ, পাঠ্যক্রম-সিলেবাস, পরীক্ষা ব্যবস্থা, শিক্ষক নিয়োগ ও বদলি প্রক্রিয়া, বেতন কাঠামো, পদোন্নতি, কোটা নীতি, শিক্ষার্থীর অধিকার, ক্যাম্পাস নিরাপত্তা, গবেষণা ও একাডেমিক স্বাধীনতা, ডিজিটাল শিক্ষা, স্মার্ট ক্লাসরুম, শিক্ষা বাজেট এবং সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক অনিয়মসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণাভিত্তিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করে। অনিয়ম-দুর্নীতি, ভর্তি বাণিজ্য, প্রশ্নফাঁস, শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগে স্বজনপ্রীতি—এসব বিষয়ে অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রকাশ করাও এ বিভাগের অন্যতম দায়িত্ব।
এ ছাড়া শিক্ষা প্রশাসন নিয়মিতভাবে প্রকাশ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি, লটারি ফল, পরীক্ষার সময়সূচি ও ফলাফল, শিক্ষানীতি পরিবর্তনের ব্যাখ্যা, আইনি নির্দেশনা, উচ্চশিক্ষা ও বৃত্তি সংক্রান্ত তথ্য, শিক্ষক সংগঠন ও অভিভাবক ফোরামের কার্যক্রম, এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার নীতিমালা। নতুন শিক্ষা ব্যবস্থা (২০২৩), ক্রেডিট ট্রান্সফার, মূল্যায়ন পদ্ধতি, STEM শিক্ষা, TVET ও কারিগরি খাতের উন্নয়নকেন্দ্রিক পরিবর্তনগুলোও এ বিভাগের আলোচনায় গুরুত্ব পায়।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক, গবেষক, নীতিনির্ধারক এবং সাংবাদিক—সবার জন্য নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র হিসেবে কাজ করে এই বিভাগ। এর মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পায়, সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা মেলে, এবং জনসচেতনতা তৈরি হয়। সামগ্রিকভাবে, শিক্ষা প্রশাসন বিভাগ শুধু তথ্য পরিবেশন করে না, বরং সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য শুদ্ধ, ন্যায়সঙ্গত ও আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।