শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গনের সঙ্গে বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ জড়িত। শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবক মিলিয়ে জ্ঞানচর্চার অন্যতম পীঠস্থান বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষাঙ্গন বলতে শুধু স্কুল–কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয় নয় বরং একটি বিস্তৃত জ্ঞানভিত্তিক পরিবেশকে বোঝানো হয়। যেখানে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, গবেষণা, সংস্কৃতি ও মুক্তচিন্তার চর্চা মিলেমিশে একটি সমাজের ভবিষ্যৎ গড়ে ওঠে। এটি একটি দেশের মনন, মূল্যবোধ, বিজ্ঞানচিন্তা ও মানবিকতার কেন্দ্র। এজন্য শিক্ষাঙ্গন শুধু কোনো ইট-কাঠের ভবন নয়, এটি একটি জাতির মেরুদণ্ডও।
বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনের ইতিহাস বহু পুরোনো। ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক ঐতিহ্যের অংশ। ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপমহাদেশে এক সময় ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ নামে পরিচিত ছিল। এর আগে ১৮৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা কলেজ, ১৮৬০ সালে জগন্নাথ স্কুল (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়), ১৮৭৫ সালে নটর ডেম কলেজ, ১৮৮৪ সালে রাজশাহী কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশের শিক্ষার ভিতকে শক্তিশালী করেছে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান।
স্বাধীনতার পর শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন অধ্যায় শুরু হয়। ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় আইন উচ্চশিক্ষাকে নতুন করে সংগঠিত করে। পরবর্তী সময়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে ৫০টির বেশি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, প্রায় ১০০টির মতো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এবং লক্ষাধিক স্কুল–কলেজ রয়েছে।
শিক্ষাঙ্গন গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কয়েকটি মূল কারণ আছে। অর্থনীতি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সাহিত্য, ইতিহাস, রাজনীতি ইত্যাদি যে কোনো ক্ষেত্রেই সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রয়োজন সুদক্ষ ও শিক্ষিত মানুষ। শিক্ষাঙ্গন সেই মানুষই তৈরি করে। সহনশীলতা, নেতৃত্ব, দায়িত্ববোধ, গণতান্ত্রিক চর্চা এসব দক্ষতা গড়ে ওঠে শিক্ষাঙ্গনের মধ্যেই। শিক্ষার্থীরা এখানে নিজের মত প্রকাশ করতে শেখে এবং অন্যের মতকে সম্মান করতে শেখে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণা ছাড়া চলতে পারে না। কৃষি, চিকিৎসা, প্রকৌশল, অর্থনীতি, পরিবেশ ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই দেশের উন্নয়নের জন্য গবেষণা অত্যন্ত জরুরি, আর তা হয় শিক্ষাঙ্গনেই। এ ছাড়াও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, যেমন বইমেলা, বিতর্ক, থিয়েটার, সংগীত, বিজ্ঞান উৎসব এসবই প্রথম জন্ম নেয় শিক্ষাঙ্গনের ভেতর। এখান থেকেই গড়ে ওঠে একটি সচেতন ও সংস্কৃতিবান প্রজন্ম।
সবচেয়ে বড় কথা, শিক্ষাঙ্গন একটি জাতির মানসিকতার প্রতিচ্ছবি। যে দেশের শিক্ষাঙ্গন শক্তিশালী, সেই দেশের গণতন্ত্র, অর্থনীতি ও সমাজ সবই শক্তিশালী হয়। বাংলাদেশে শিক্ষাঙ্গন নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে তা বলা যায়। অপর্যাপ্ত পরিকাঠামো, রাজনৈতিক প্রভাব, শিক্ষক সংকট বা কর্মসংস্থানের সমস্যা, বাস্তবসম্মত শিক্ষানীতির অভাব থাকলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ।
প্রতিদিন অগণিত শিশু-কিশোর, তরুণ–তরুণী স্কুলে, কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছে নতুন জ্ঞান, নতুন স্বপ্ন, নতুন সম্ভাবনা নিয়ে। তারাই তো আগামী দিনের নেতা, বিজ্ঞানী, শিক্ষক, শিল্পী, সাংবাদিক, উদ্যোক্তা। তাদের স্বপ্নে বীজ বুনে দেয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোই।
দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস দেশের শিক্ষাঙ্গনের যেন আয়না। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংবাদ, প্রতিবেদন, ফিচার নিয়মিত প্রকাশ করে গণমাধ্যমটি। দেশের শিক্ষাঙ্গন, শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের এক প্রিয় প্রতিষ্ঠান এটি। ‘শিক্ষাঙ্গন’ বিভাগে উপবিভাগগুলো হলো ‘স্কুল’, ‘কলেজ’, ‘মাদ্রাসা’, ‘কারিগরি’, ‘ইংরেজি মাধ্যম’ ও ‘উপানুষ্ঠানিক’। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত সর্বশেষ সব নিউজ, প্রতিবেদন গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করা হয়।