ঢাবি হল ভিপির অডিও ফাঁস
ক্যান্টিন রাখতে চাইলে ২ লাখ বা এর আশেপাশে একটা অঙ্ক দিতে হবে
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৫৮ AM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কবি সুফিয়া কামাল হলের ক্যান্টিন মালিকের কাছে ক্যান্টিন চালু রাখার বিনিময়ে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে হল সংসদের সহ-সভাপতি (ভিপি) সানজানা চৌধুরী রাত্রির বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে ক্যান্টিন মালিক আবদুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে রাত্রির একটি কথোপকথনের অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে।
জানা গেছে, সুফিয়া কামাল হলে আবাসিক ছাত্রীদের জন্য দুটি ক্যান্টিন রয়েছে। গত ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের পর একটি ক্যান্টিনের মালিককে নানা অভিযোগে ক্যান্টিন ছাড়তে হয়। অন্য ক্যান্টিনটির মালিকানা টিকিয়ে রাখতে মালিকের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা দাবির অভিযোগ উঠে ভিপি রাত্রির বিরুদ্ধে।
ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এটি গত ২৬ অক্টোবর সুফিয়া কামাল হল গেটের বাইরে রাস্তার পাশে ক্যান্টিন মালিক মামুন ও রাত্রির সরাসরি সাক্ষাতের সময় রেকর্ড করা হয়।
রেকর্ডে শোনা যায়, রাত্রি মামুনকে বলেন, ‘কতদিন লাগবে আপনার টাকা দিতে?’ মামুন তখন পারিবারিক আর্থিক দুরবস্থার কথা উল্লেখ করে কিছুটা সময় চান। উত্তরে রাত্রি বলেন, ‘ঠিক আছে। আজকে ২৬ তারিখ। এই মাস তো ৩১ দিনের। আপনি তাহলে আমাকে ৩১ তারিখের মধ্যে জানান। আপনি এগ্রি করছেন কিনা সেটা আগে এনশিউর করতে হবে।’
মামুন অনুনয়-বিনয় করলে রাত্রি আরও বলেন, ‘কিছু হয়তো কনসিডার করা যাবে। আপনি চেষ্টা করছেন দেখেই এটা কনসিডার করছি।’
তখন মামুন বলেন, ‘আপু আপনি তো দেখছেন আমি কতটা পরিশ্রম করছি।’
প্রত্যুত্তরে রাত্রি বলেন, ‘আজকে আমি চাইলে একটা ডিসিশন নিয়ে আসতে পারতাম, বাকিরা কিছু না— আমিই মূলত দেখছি যে আপনি কতটুকু ডেভেলপ করছেন কিংবা আপনার চেষ্টা কতটুকু। যদি ঠিকঠাক মনে হয়, সেক্ষেত্রে আপনাকে সাস্টেইন করানোর জন্য যেটা করা লাগে সেটা করব।’
তখন ক্যান্টিন মালিক মামুন বলেন, ‘আপু, লাস্ট কত হলে হবে? আমি আমার যতটুকু অ্যাবিলিটি আছে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। আপনি তো জানেন আমার পারিবারিক অবস্থা।’
তখন রাত্রি বলেন, ‘আমি আরও ১০ মাস আছি তো। আমি দেখব। আপনি এখন যান এবং চিন্তা করেন যেটা বলেছি সেটা। আর অ্যামাউন্ট আশেপাশে একটু কম হলেও চলবে।’
এর আগে অভিযোগ জানিয়ে ক্যান্টিন মালিক আবদুল্লাহ আল মামুন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমি সুফিয়া কামাল হলের দ্বিতীয় তলার ক্যান্টিন পরিচালনা করতাম। পরে হল সংসদের ভিপি সানজানা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের ভালোভাবে ক্যান্টিন পরিচালনা করার পরামর্শ দিতেন। পরে একদিন বলছে আপনি অন্য ক্যান্টিন দেখেন, ক্যান্টিন টিকিয়ে রাখতে হলে দুইলাখ টাকা লাগবে।
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগ আবারও তাদের ঐতিহাসিক সহিংস চরিত্রে ফিরে এসেছে: ছাত্রশক্তি সভাপতি
আব্দুল্লাহ আরও বলেন, টাকা দেয়ার জন্য একমাস সময় দেন ভিপি। যদি একমাসের মধ্যে টাকা দিতে পারি তাহলে ক্যান্টিন পরিচালনা করতে পারব। নয়তো পারব না। আমি গরিব মানুষ এত টাকা কোথায় পাব। আমি ওনাকে বলেছি আমার যতটুকু অ্যাবিলিটি আছে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সানজানা চৌধুরী রাত্রি বলেন, এমন কোনো কিছুই হয়নি। শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে হল প্রশাসন ও হল সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা হলের ক্যান্টিনসহ অন্যান্য দোকানগুলোতে অভিযান পরিচালনা করি এবং সত্যতা প্রমাণিত হয়। সকল অভিযোগের প্রমাণসহ হল প্রশাসনের কাছে জমা দেই। হল প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নেবে বলে জানায়। এখন হল থেকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে জানার পর থেকে আমাকে ও হল সংসদকে নৈতিকভাবে হেয় করার জন্য এই ধরনের মিথ্যা অভিযোগ ছড়াচ্ছে।
তিনি বলেন, হল সংসদ ক্যান্টিন থাকবে কি থাকবে না সেই এখতিয়ার রাখে না। আমরা যখনই হল প্রশাসন ও হল সংসদকে সাথে নিয়ে ক্যান্টিন পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি। তখনই একটা পক্ষ আমার বিরুদ্ধে এ ধরনের মিথ্যা বক্তব্য ছড়াচ্ছে। আমার মনে হয় যারা পরিবর্তনকে পছন্দ করছে না অথবা শিক্ষার্থীদের ভালো চায় না তারাই এ ধরনের প্রপোগান্ডা ছড়াচ্ছে। তাছাড়া ক্যান্টিন মালিকের সঙ্গে আমার এ ধরনের কোনো কথাই হয়নি।
এ বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সালমা নাসরীন জানান, আমি দুই লাখ টাকার ব্যাপারে কিছু জানি না। তবে আমার কাছে এটা বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না। আমি হল সংসদের সভাপতি ও আমি হল সংসদের প্রতিনিধিদের সাথে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেব ক্যান্টিন মালিক থাকবে কি থাকবে না। এখানে চাঁদা দাবি করার কোনো প্রশ্নই উঠে না।
তিনি বলেন, প্রথম ক্যান্টিন মালিককে আমরা নিয়ম অনুযায়ী বাদ দিয়েছি এবং নতুন একজনকে ভাড়া দিয়েছি। কিন্তু আরেকটি ক্যান্টিনের মালিকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে আমার উপস্থিতিতে ক্যান্টিন মালিককে ১ সপ্তাহের আল্টিমেটাম দিয়েছি কিন্তু তার খাবারের মানের কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে আবার অভিযোগ উঠেছে । তাই আমি ক্যান্টিন পরিবর্তনের নোটিশ দিয়েছি।
এ বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সালমা নাসরীন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমি দুই লাখ টাকার ব্যাপারে কিছু জানি না। তবে আমার কাছে এটা বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না। আমি হল সংসদের সভাপতি ও আমি হল সংসদের প্রতিনিধিদের সাথে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেব ক্যান্টিন মালিক থাকবে কি থাকবে না। এখানে চাঁদা দাবি করার কোনো প্রশ্নই উঠে না।
তিনি বলেন, প্রথম ক্যান্টিন মালিককে আমরা নিয়ম অনুযায়ী বাদ দিয়েছি এবং নতুন একজনকে ভাড়া দিয়েছি। কিন্তু আরেকটি ক্যান্টিনের মালিকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে আমার উপস্থিতিতে ক্যান্টিন মালিককে ১ সপ্তাহের আল্টিমেটাম দিয়েছি কিন্তু তার খাবারের মানের কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে আবার অভিযোগ উঠেছে । তাই আমি ক্যান্টিন পরিবর্তনের নোটিশ দিয়েছি।