আওয়ামী লীগ আবারও তাদের ঐতিহাসিক সহিংস চরিত্রে ফিরে এসেছে: ছাত্রশক্তি সভাপতি
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:২০ AM , আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:২০ AM
জাতীয় ছাত্রশক্তির সভাপতি জাহিদ আহসান বলেছেন, গণ-অভ্যুত্থানের পর এক বছরেরও অধিক সময় অতিবাহিত হলেও, দেশ যখন সংস্কার, বিচার ও একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে অগ্রসর হচ্ছে, তখন আওয়ামী লীগ আবারও তাদের ঐতিহাসিক সহিংস চরিত্রে ফিরে এসেছে। ককটেল বিস্ফোরণ, যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগসহ সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনাবলির জন্ম দিচ্ছে ঘোষণা করে। সোমবার (১০ নভেম্বর) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজ অ্যাকাউন্টে একটি স্ট্যাটাসে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ফেসবুক পোস্টে জাহিদ আহসান লেখেন, আওয়ামী লীগ এই অঞ্চলের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং মুক্তির সংগ্রামের ধারাকে ধারণ না করে উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রসার ঘটিয়েছে। দলটি স্বাধীনতার ইতিহাসে বিদ্যমান বিভিন্ন নেতৃত্ব ও মতধারাকে অস্বীকার করে শেখ মুজিবের একক নেতৃত্বের পূজার সংস্কৃতি তৈরি করেছে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনাকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে আওয়ামী লীগ নিজেই। মুক্তিযুদ্ধোত্তর সময়ে তারা মুক্তিকামী সকল শক্তিকে পাশ কাটিয়ে একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে জাতির গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করেছে। পরবর্তীকালে শেখ হাসিনা ও তাঁর অনুসারীরা মুক্তিযুদ্ধের নাম ব্যবহার করে রাজনৈতিক বিরোধীদের ‘রাজাকার’ ট্যাগ দিয়ে দমন-নির্যাতনের সংস্কৃতি চালু করেছে।
তিনি বলেন, ২০০৮ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত সময়ে আওয়ামী লীগ একের পর এক রাষ্ট্রীয় দমননীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের নজির স্থাপন করেছে। বিডিআর হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বরের মর্মান্তিক ঘটনা, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যা, তিনটি অবৈধ নির্বাচন— সব ক্ষেত্রেই আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী ও দমনমূলক আচরণের পরিচয় দিয়েছে। বিরোধী দলকে দমন করতে তারা অগ্নিসন্ত্রাস, তথাকথিত জঙ্গি নাটক ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে জনমত নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়েছে। বিশেষত গত বছরের জুলাই মাসে সংঘটিত গণহত্যায় সহস্রাধিক নাগরিক নিহত ও হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছে।
আরও পড়ুন: নির্বাচনে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে বিচারিক ক্ষমতা চায় সেনাবাহিনী
সরকারের ব্যর্থতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুঃখজনকভাবে, অভ্যুত্থানের পর যাদের হাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব অর্পিত হয়েছিল, তাঁরা আওয়ামী লীগের অতীত অপরাধের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন। দলটিকে নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি, ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠনের কোনো সুস্পষ্ট রূপরেখা এখনো নেই। বরং বহু সহিংস দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির ইন্ধন আওয়ামী লীগের অবৈধ ব্যবসা ও সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার দাবি জানিয়ে জাহিদ বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত আওয়ামী নেতা-কর্মীরা জামিনে মুক্ত হচ্ছেন। দলের অবৈধ অর্থনৈতিক কাঠামোও অক্ষত রয়েছে, যার ফলে তারা এখনও বিপুল অর্থ ব্যয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার প্রচেষ্টা চালাতে সক্ষম হচ্ছে। উপরন্তু, উপদেষ্টা পরিষদেরই কেউ কেউ আওয়ামীলীগের অবৈধ ব্যাবসা টিকিয়ে রাখছেন বলে শোনা যায়। এসব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করতে হবে।
নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজও দেখা যাচ্ছে, যেখানে বোমা হামলাকারীরা ধরা পড়েছে, সেসব ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে ছাত্র-জনতা। পুলিশের ভূমিকা সেখানে অত্যন্ত সীমিত। প্রশ্ন ওঠে—দেশকে নিরাপদ রাখার দায়িত্ব যদি ছাত্রদের কাঁধে বর্তায়, তবে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর অস্তিত্বের প্রয়োজন কী?
জাতীয় ছাত্রশক্তির অবস্থান জানিয়ে জাহিদ আহসান বলেন, জাতীয় ছাত্রশক্তি দেশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও জনগণের নিরাপত্তা রক্ষায় সদা সচেষ্ট থাকবে। আওয়ামী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জীবন বাজি রেখে হলেও আমরা পিছপা হব না, ইনশাআল্লাহ। ইতোমধ্যেই আমাদের নেতাকর্মীরা নিজ নিজ এলাকায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। সাংগঠনিক সব শক্তি নিয়োগ করে আমরা গণ-অভ্যুত্থানের অর্জনকে রক্ষার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাব। একইসঙ্গে, আমরা দাবি জানাই— গত বছরের জুলাই মাসে সংঘটিত গণহত্যাসহ সব মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় আনা হোক।