মোসাদ সদর দপ্তরে ইরানের সেই হামলায় নিহত হয়েছিল ৩৬ জন
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:১৬ AM
গত জুন মাসে ১২ দিনের যুদ্ধে ইসরায়েলি হামলার দ্রুত ও নিখুঁত পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় গোয়েন্দা-সংস্থা মোসাদের ৩৬ জন প্রাণ হারিয়েছিল এবং হাইফার তেল-শোধনাগারও ইরানি বোমা হামলায় দুই বার অচল হয়ে পড়েছিল বলে ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী। তাছাড়াও, হাইফার ইসরাইলি তেল-শোধনাগার এখনও অচল হয়ে আছে বলে ইসরাইলি কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন।
ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী মোহাম্মাদ নায়িনি গত রবিবার ১২ দিনের ওই যুদ্ধে ইসরায়েলি ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, ইসরায়েল তেহরানের একটি তেল ডিপোতে হামলা চালানোর ৫ ঘণ্টা পরই হাইফার তেল-শোধনাগারে দুই দফায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ইসরায়েল আমাদের একটি গোয়েন্দা দপ্তরে হামলা চালানোর পর আমরা মোসাদের সদর-দপ্তরে হামলা চালাই এবং এতে ৩৬ ইহুদিবাদী দখলদার নিহত হয়।
তিনি জানান, ইসরায়েলের বিমান প্রতিরক্ষার-ব্যুহ ও স্তরগুলো অত্যাধুনিক মার্কিন প্রযুক্তি-সজ্জিত হওয়া সত্ত্বেও ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর নিখুঁত লক্ষ্য-ভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলাগুলো ঠেকাতে ব্যর্থ হয় এবং তা ইসরায়েলের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এখন স্বীকার করছেন যদিও প্রথম দিকে ইসরায়েল এইসব খবর গোপন রাখার নির্দেশ দিয়েছিল।
নায়িনি বলেছেন, ইসরায়েলের ২০০ থেকে ২৫০টি জঙ্গি বিমান, রাডার-সাইট, যুদ্ধ-জাহাজ ও সমন্বিত বিমান-প্রতিরক্ষার স্তরগুলো একাধিক টার্গেটের ওপর নিখুঁত হামলার পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে ছোঁড়া ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর একটিকেও ঠেকাতে পারেনি, যদিও প্রথম দিকে ইসরায়েল দাবি করেছিল যে ইরান কার্যকর পাল্টা হামলা চালাতে সক্ষম নয়, অথচ ইরানের এইসব ক্ষেপণাস্ত্রের প্রতিটিই আনুপাতিক মাত্রার চেয়েও ইসরায়েলের অনেক বেশি ক্ষয়ক্ষতি সাধন করে।
আরও পড়ুন: এক্স-কে ১৪০ মিলিয়ন ডলার জরিমানা, সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ ট্রাম্প
তিনি ১২ দিনের যুদ্ধ চলাকালে ইরানের 'সত্য-প্রতিশ্রুতি বা অঙ্গীকার-৩' শীর্ষক অভিযানের প্রকৃতি তুলে ধরতে গিয়ে জানান, এই অভিযানটি ছিল অত্যন্ত জটিল ও সমন্বিত যেখানে ক্ষেপণাস্ত্র ছাড়াও ড্রোন, ইলেকট্রনিক সমরাস্ত্র ও সাইবার সক্ষমতাগুলোকে বহু দফা-ভিত্তিক বা সিরিজ হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে পরিপূর্ণ পরিস্থিতিগত সচেতনতা নিয়ে এবং তা সম্ভব হয়েছে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের কার্যকর প্রয়োগের ভিত্তিতে, আর এসব নিখুঁত ও সূক্ষ্ম কাজে জড়িত ছিলেন ইরানের মহাকাশ গবেষণা কার্যক্রম ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অত্যন্ত উচ্চ-মানের প্রশিক্ষিত প্রকৌশলীরা যাদের অনেকেরই বয়স ত্রিশ-এর মধ্যে। ১২ দিনের যুদ্ধে তারা ইরানের নিজস্ব প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরতে পেরেছেন অপ্রচলিত ও বহুমুখী সংগ্রামের কৌশল প্রয়োগ করে।
১২ দিনের ওই যুদ্ধে ইরানের অপারেশনাল, প্রযুক্তিগত ও তথ্যগত শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়গুলোকে দৃষ্টান্তসহ তুলে ধরতে গিয়ে তার বক্তব্যের একাংশে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী মোহাম্মাদ নায়িনি বলেছেন, আমাদের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও অবকাঠামোগুলোতে নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে, যেমন, ৩২-তলা উঁচু ইসরায়েলি স্টক-এক্সচেঞ্জের ডাটা-সেন্টার ভবনকে আমরা নিশানা করেছিলাম এবং দেখা গেছে নিশানাগুলোকে তাক করে আঘাত-হানা ক্ষেপণাস্ত্রগুলো হুবহু ঠিক নিশানার স্থানে বা জায়গামতই আঘাত হেনেছে। অর্থাৎ আমাদের ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর ধ্বংসাত্মক ক্ষমতাগুলো ছিল ব্যাপক। আর এসবই সম্ভব হয়েছে ইরানের তরুণ সামরিক প্রকৌশলী ও ড্রোন-অপারেটরদের সাহসিকতা, ত্যাগ ও আন্তরিকতার কারণে।
জেনারেল নায়িনি আরও বলেছেন, আমরা এটা দেখিয়েছি যে ইরানের বিরুদ্ধে যে কোনো আগ্রাসন তাৎক্ষণিক, সমানুপাতিক ও অত্যন্ত কার্যকর পাল্টা প্রতিশোধের শিকার হবে এবং আমাদের প্রতিরক্ষা-কৌশলে রয়েছে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, অসমমাত্রিক অভিযান ও জনগণের সম্পৃক্ততা-কেন্দ্রীক অভিযোজনের সমন্বয়। শত্রুপক্ষের বিমান বাহিনীর অনেক বেশি পরিমাণগত শ্রেষ্ঠত্ব থাকা সত্ত্বেও ইরান মূলত ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও সাইবার দক্ষতাগুলোর ওপর নির্ভর করে ইসরায়েলকে যুদ্ধ-বিরতি চাইতে বাধ্য করতে সক্ষম হয় বলে তিনি ইঙ্গিত করেন।
তথ্যসূত্র: পার্স টুডে।