আওয়ামীপন্থি ৪৭১ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের বিবৃতি

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ওপর হামলায় জড়িতদের বিচার দাবি

গত রবিবার এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কর্মসূচিতে হামলা করে পুলিশ
গত রবিবার এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কর্মসূচিতে হামলা করে পুলিশ  © সংগৃহীত ও সম্পাদিত

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গত রবিবার এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল (আওয়ামীপন্থি) ৪৭১ শিক্ষক। তারা ওই হামলায় জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবিও জানিয়েছেন। গত সোমবার (১৩ অক্টোবর) এক যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে তারা এসব দাবি জানান। 

শিক্ষকরা বলছেন, এটি শুধুমাত্র একটি হামলা নয়, এটি চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘৃণ্য দৃষ্টান্ত। এ ধরনের ঘটনা শিক্ষকতার মর্যাদা, মানবাধিকার, অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত। এমন ঘৃণ্য আচরণ সভ্য সমাজে কল্পনাতীত!

বিবৃতিতে প্রগতিশীল শিক্ষকরা বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগ ও শঙ্কার সাথে লক্ষ্য করছি যে, গত এক বছর ধারাবাহিকভাবে সারাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক পর্যন্ত সব স্তরের শিক্ষক সমাজ একের পর এক নির্মম মব সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন। গ্রেফতার, হত্যা মামলাসহ নানাধরণের মিথ্যা মামলা, শিক্ষকদের চরিত্র হনন, কালার ট্যাগিং, শত শত নিরপরাধ শিক্ষককে কর্মক্ষেত্রে কদর্য ভাষায় আক্রমণসহ শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। জাতি গড়ার কারিগর শিক্ষককে রশি হাতে আবদ্ধ করা হয়েছে, পাদুকা গলায় ঝোলানো হয়েছে, এমনকি রাস্তায় টেনে-হিঁচড়ে কেড়ে নেওয়া হয়েছে হাতের কলম। অপমানিত, শারীরিকভাবে নির্যাতিত শিক্ষককে বাধা দেওয়া হয়েছে কর্মস্থলে প্রবেশে এবং জীবননাশের হুমকিও প্রদান করা হয়েছে। জাতির বিবেক ও কণ্ঠস্বর আজ কারাবন্দি।

তারা বলেন, শুধু তাই নয়, জেলখানা ও আদালতেও হয়রানি করা হচ্ছে যার যেন কোনো জবাবদিহিতা নেই। ফলে শিক্ষক সমাজ আজ চরম আতঙ্ক, নিরাপত্তাহীনতা ও পীড়াদায়ক পরিস্থিতির মধ্যে জীবনযাপন করছেন। পবিত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রথিতযশা শিক্ষকবৃন্দকে পদত্যাগে বাধ্য করা, বয়কট করা এবং চাকুরিচ্যুত করা, অ্যাকাডেমিক শাস্তির মতো ঔদ্ধত্যপূর্ণ শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। শিক্ষকতা আজ অবজ্ঞা, অবমাননা, সহিংসতার চরম ঝুঁকিতে পড়া অনিরাপদ ও বিপজ্জনক পেশায় রূপান্তরিত হয়েছে। মর্যাদা, সম্মানের পরিবর্তে শিক্ষা ক্ষেত্র আজ মব সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য।

তারা আরও বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষকবৃন্দকে নগ্নভাবে অপমান করা হচ্ছে। রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্লিপ্ততা ও সম্পূর্ণ পক্ষপাতমূলক আচরণ এ-পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে। স্বাধীন বাংলাদেশে শিক্ষকদের ওপর মব সন্ত্রাসে দমন-পীড়নের এ-প্রক্রিয়া বিশ্ব ইতিহাসে নজিরবিহীন একটি ঘটনা। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তো ধ্বংস হবেই, এবং তার সঙ্গে সঙ্গে ধ্বংস হবে একটি জাতির সম্ভাবনা, উন্নয়ন ও আত্মমর্যাদা। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের ইতিহাস লেখা হয়েছে এই শিক্ষকবৃন্দের কলম, বলিষ্ঠ কণ্ঠ ও অসাম্প্রদায়িক জ্ঞানের লড়াই এবং রক্তের বিনিময়ে। এই সমাজকে ধ্বংস করার কোন সুযোগ কারোরই নেই। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে শিক্ষকদের ওপর এরকম ন্যক্কারজনক হামলা জাতি কখনও দেখেনি, বিশ্ববাসীও দেখেনি, এটি শুধুমাত্র পাকিস্তান আমলে ঘটেছে।

আরও পড়ুন: ২০% বাড়ি ভাড়া চাইছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা, সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা কত শতাংশ পান?

দাবি জানিয়ে তারা বলেন, শিক্ষকবৃন্দের উপর হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে, গ্রেফতারকৃত শিক্ষকবৃন্দকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, শিক্ষক নির্যাতন নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে, আহত শিক্ষকদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে এবং মব সন্ত্রাস দমন করতে হবে। সেই সাথে জোরপূর্বক পদত্যাগ করানো, চাকরিচ্যুত, সাময়িক বহিষ্কার, অ্যাকাডেমিক বিরত রাখা, মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত ও বয়কটকৃত সব শিক্ষকবৃন্দকে কর্মক্ষেত্রে সসম্মানে ফিরিয়ে আনতে হবে। বন্ধ করতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাক স্বাধীনতা চর্চায় হস্তক্ষেপ।

বিবৃতি প্রদানকারী শিক্ষকরা হলেন- অধ্যাপক ড. এম অহিদুজ্জামান, অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক, অধ্যাপক ড. মো: আখতারুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, প্রফেসর ড. মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম, প্রফেসর ড. হাবিবুর রহমান, প্রফেসর ড. পূর্বা ইসলাম, প্রফেসর ড. এম. জেড মামুন, অধ্যাপক ড. আ. ক. ম. জামাল উদ্দিন, অধ্যাপক ড. জান্নাতুল ফেরদৌস, প্রফেসর ড. লায়লা আরজুমান বানু, অধ্যাপক ড. শবনম জাহান, অধ্যাপক ড. আফজাল হোসেন, অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম খান, অধ্যাপক ড. হারুনর রশীদ খান, অধ্যাপক ড. তৌহিদা রশীদ, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজমল হোসেন ভূঁইয়া, অধ্যাপক ড. জামিলা এ চৌধুরী, অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন, অধ্যাপক ড. কাজল কৃষ্ণ ব্যানার্জি, অধ্যাপক মশিউর রহমান, অধ্যাপক ডাঃ আহসান হাবীব হেলাল, প্রফেসর ড. মোঃ আসাদুজ্জামান, অধ্যাপক ড. সিতেশ চন্দ্র বাছার, প্রফেসর ড. আব্দুল আউয়াল, অধ্যাপক ম. মনিরুজ্জামান, অধ্যাপক ড. আবদুর রাজ্জাক খান, অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আক্তার, অধ্যাপক ড. হোসেন মনসুর, অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান, অধ্যাপক ড. সুব্রত সাহা, অধ্যাপক ড. জসিম উদ্দিন, ড. সিদ্ধার্থ দে, ড. মাহবুব আলম প্রদীপ, অধ্যাপক ড. রাফিউল ইসলাম, অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান, অধ্যাপক আসাদুজ্জামান, অধ্যাপক ড.ওসমান গণি তালুকদার, প্রফেসর ড. আহসানুল আম্বিয়া, অধ্যাপক ড. আবুল মনসুর আহাম্মদসহ আরও অনেকে…। 


সর্বশেষ সংবাদ