বিদেশে উচ্চশিক্ষা
এসএসসি পাস করে স্কলারশিপে পড়াশোনা চীনে, কীভাবে নেবেন প্রস্তুতি, জেনে নিন খুঁটিনাটি
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৪৪ PM
বর্তমানে উচ্চশিক্ষার জন্য চীন বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি স্বপ্নের দেশ, যেখানে তুলনামূলকভাবে সহজেই ফুল-ফ্রি স্কলারশিপ পাওয়া সম্ভব। বিশেষ করে এসএসসি পাসের পরই বিদেশে পড়াশোনার সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করছে। বিশেষ করে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ও বিভিন্ন টেকনিক্যাল কোর্সে ফুল স্কলারশিপ ও মাসিক বৃত্তিসহ (Monthly Stipend) পড়ার ব্যবস্থা আছে, যেখানে ইংরেজি বা চাইনিজ মাধ্যমে ক্লাস হয়।
তবে মূলত এইচএসসি/এ-লেভেল (১২ বছরের শিক্ষা) প্রয়োজন হলেও কিছু ক্ষেত্রে এসএসসি (১০+২) বা সমমানের যোগ্যতা দিয়েও ডিপ্লোমা প্রোগ্রামে আবেদন করা যায়, যার জন্য ভালো GPA, সুস্থ স্বাস্থ্য ও সঠিক ভিসার (X1/X2) আবেদন প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়।
তবে বাস্তবে কী ধরনের সুযোগ রয়েছে, কত টাকা লাগে এবং স্কলারশিপ কি সত্যিই পাওয়া যায়—তা নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি আছে। আজ আমরা এসএসসি পাসের পরই কিভাবে চীনে পড়াশোনা করা যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।
এসএসসি পাস করেই কি চীনে পড়া যায়?
এসএসসি পাসের পর সরাসরি ব্যাচেলর ডিগ্রিতে ভর্তি হওয়া বা পূর্ণ স্কলারশিপ পাওয়ার সুযোগ খুবই সীমিত। তবে সুযোগ একেবারে নেই তা নয়। শিক্ষার্থীরা সাধারণত ডিপ্লোমা/ভোকেশনাল বা ফাউন্ডেশন প্রোগ্রামে ভর্তি হতে পারে।
এই কোর্সগুলো সম্পন্ন করার পর তারা ব্যাচেলর প্রোগ্রামে আবেদন করতে পারে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় টিউশন ফি ছাড় বা আংশিক স্কলারশিপও দিয়ে থাকে।
আরওে পড়ুন: জেনে নিন বিশ্বসেরা ১০ ফুল-ফ্রি স্কলারশিপ সম্পর্কে
সুযোগ ও প্রোগ্রাম
ডিপ্লোমা প্রোগ্রাম (৩ বছর মেয়াদি): এসএসসি পাস শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে প্রচলিত অপশন। এই কোর্সে ফুল স্কলারশিপের সুযোগ রয়েছে, যেখানে প্রথম বছর চায়নিজ ভাষা শেখানো হয় (১+২ বছর মেয়াদি)। তিন বছরের ডিপ্লোমা সম্পন্ন করার পর দুই বা চার বছরের বিএসসি প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়ার সুযোগ থাকে। তবে সব কলেজেই ব্যাচেলর ট্রান্সফারের সুযোগ নেই—এটি নির্ভর করে প্রতিষ্ঠান ও তাদের articulation agreement আছে কি না।
ভাষা মাধ্যম: ইংরেজি, চায়নিজ, বাইলিঙ্গুয়াল (ইংরেজি + চায়নিজ)।

যোগ্যতা ও শর্তাবলি
*শিক্ষাগত যোগ্যতা: ডিপ্লোমার জন্য SSC (১০ বছরের শিক্ষা)। ব্যাচেলরের জন্য HSC/A-Level (১২ বছরের শিক্ষা)।
*GPA: সাধারণত ৬০–৭০ শতাংশ নম্বর বা তার বেশি। রেজাল্ট যত ভালো, স্কলারশিপ পাওয়ার সুযোগ তত বেশি।
*বয়স: ডিপ্লোমা সাধারণত ১৬–২২ বছর।
*স্বাস্থ্য: আবেদনকারীকে সুস্থ হতে হবে।
*ভাষা: IELTS বাধ্যতামূলক নয়, তবে থাকলে সুবিধা। HSK ডিপ্লোমার প্রথম বছরেই শেখানো হয়।
আরও পড়ুন: বিদেশে উচ্চশিক্ষা: জেনে নিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুল-ফ্রি ১৬ স্কলারশিপ সম্পর্কে
সুযোগ-সুবিধা
১. সাশ্রয়ী খরচ: ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান বা দক্ষিণ কোরিয়ার তুলনায় চীনে পড়ার খরচ অনেক কম।
২. স্কলারশিপ: বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রাদেশিক স্কলারশিপ, বেল্ট অ্যান্ড রোড স্কলারশিপসহ নানা সুযোগ থাকে।
৩. উচ্চমানের কারিগরি শিক্ষা: ডিপ্লোমা কোর্সগুলো চীনের ইন্ডাস্ট্রি-ভিত্তিক উন্নত প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে তৈরি।
৪. ক্যারিয়ার সুযোগ: ডিপ্লোমা শেষে বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক বাজারে চাকরি পাওয়া সহজ হয়।
৫. উচ্চশিক্ষার পথ: ডিপ্লোমার পর ২ বা ৪ বছরের স্নাতক প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
৬. সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা: ভিন্ন সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার দারুণ সুযোগ।
৭. ভাষাগত দক্ষতা: প্রথম বছরেই চায়নিজ ভাষা শেখানো হয়, যা ভবিষ্যতের জন্য অনেক উপকারী।
আরও পড়ুন: জেনে নিন মধ্যপ্রাচ্যের ১১ স্কলারশিপ সম্পর্কে
খরচ কেমন?
স্কলারশিপ না পেলে নিজ খরচে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য চীনে ব্যয় তুলনামূলকভাবে কম।
*টিউশন ফি: ২.৪–৭.০ লাখ টাকা;
*আবাসন: ৫০,০০০–১.২ লাখ টাকা;
*জীবনযাপন: মাসে ২০,০০০–৩০,০০০ টাকা;
*ভিসা, মেডিকেল, টিকেট: ৮০,০০০–১ লাখ টাকা;
মোট মিলিয়ে বছরে প্রায় ৩.৫–৫.৫ লাখ টাকা লাগতে পারে। স্কলারশিপ পেলে টিউশন ও আবাসন ফি মওকুফ হওয়ায় খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।
ভিসা ও আবেদন প্রক্রিয়া
*ভিসা: চীনে পড়াশোনার জন্য X1 (দীর্ঘমেয়াদী) বা X2 (স্বল্পমেয়াদী) স্টাডি ভিসা নিতে হয়।
*আবেদন: চীনা দূতাবাস বা কনস্যুলেটে আবেদন করতে হয়।
*ফরম: JW201 বা JW202 ফরম প্রয়োজন হয়।
আরও পড়ুন: বিদেশে পড়তে যাওয়ার আগে ১৫টি করণীয় সম্পর্কে জেনে নিন
আবেদনের ধাপসমূহ
১. প্রথমে স্টাডি ইন চায়না পোর্টাল (https://apply.studyinchina.edu.cn/) বা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে আবেদন করতে হবে।
২. পছন্দের কোর্স নির্বাচন।
৩. প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড।
৪. বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক অনুমোদন।
৫. JW201/JW202 ফরম সংগ্রহ।
৬. স্টুডেন্ট ভিসা (X1) আবেদন।
৭. চীনে যাত্রা।
আবেদনের যোগ্যতা (বিশেষভাবে স্কলারশিপের জন্য)
*অ্যাকাডেমিক ভালো রেজাল্ট।
*চীনা ভাষায় HSK বা ইংরেজিতে IELTS স্কোর।
*মেডিকেল ফিটনেস সার্টিফিকেট।
*সুপারিশপত্র ও স্টেটমেন্ট অব পারপাস (SOP)।
*পুলিশ ক্লিয়ারেন্স।
*পরিষ্কার ব্যাংক স্টেটমেন্ট (২,৫০০ USD বা প্রতিষ্ঠান যা চায়)। এসএসসি পাস শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ভাষাজ্ঞান ও GPA যত ভালো হবে, সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনাও তত বৃদ্ধি পাবে।
আরও পড়ুন: বিদেশে উচ্চশিক্ষা: আবেদনপ্রক্রিয়া থেকে ফান্ডিং পাওয়া—সার্বিক বিষয়ে পরামর্শ
ভিসার আবেদনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
*পাসপোর্ট (দুটি খালি পৃষ্ঠাসহ চীনে পৌঁছার দিন থেকে ন্যূনতম ছয় মাস মেয়াদসম্পন্ন)।
*সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে সদ্য তোলা রঙিন ছবি (আকার ৪৮/৩৩ মিলিমিটার)।
*চীনা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অফার লেটার।
*ফরম জেডব্লিউ ২০২।
*স্কলারশিপ বা স্পন্সরশিপ পেয়ে থাকলে তার প্রমাণপত্র। এখানে ব্যাংক স্টেটমেন্টের মাধ্যমে দেখাতে হবে যে চীনে পড়াশোনার জন্য কমপক্ষে প্রথম বছরের তহবিল ২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার।
*পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ।
*শিক্ষাগত যোগ্যতার যে সনদের কপি।
*ব্যক্তিগত বিবৃতি বা অধ্যয়ন পরিকল্পনা। প্রতিটি নথির ফটোকপির সঙ্গে তার মূলকপিগুলো সঙ্গে নিতে হবে। কোনো নথি বাংলায় হলে তা ইংরেজিতে নোটারাইজ করে নিতে হবে।