বিদেশে উচ্চশিক্ষা: আবেদনপ্রক্রিয়া থেকে ফান্ডিং পাওয়া—সার্বিক বিষয়ে পরামর্শ
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২৫, ০৭:২৯ PM , আপডেট: ১৮ আগস্ট ২০২৫, ১১:৩২ AM
বিদেশে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন অনেকেরই থাকে, কিন্তু সে স্বপ্ন পূরণের পথ অনেক সময় কল্পনার চেয়েও বেশি জটিল হয়। কোথা থেকে শুরু করবেন, কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন, কোন ভুলগুলো এড়িয়ে চলবেন—এসব প্রশ্নে অনেকে দিশেহারা হয়ে পড়েন। আমিও একসময় ঠিক এই অবস্থায় ছিলাম—বিসিএসের প্রস্তুতি দিয়ে পরে বিদেশে পড়ার সিদ্ধান্ত নিই, ফলে সময়ও নষ্ট হয়েছে অনেক। কিন্তু ধাপে ধাপে নিজের চেষ্টায় আবেদনপ্রক্রিয়া থেকে ফান্ডিং পাওয়া পর্যন্ত এগিয়ে গিয়ে আমেরিকায় গ্র্যাজুয়েট টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে পড়ার সুযোগ পেয়েছি। নিজের সেই অভিজ্ঞতা থেকেই শেয়ার করছি কিছু বাস্তব পরামর্শ, যা হয়তো আপনার যাত্রাকে আরও সহজ করে তুলবে।
১. আপনি শুরুতেই একটা লক্ষ্য সেট করে ফেলুন আপনি দেশে চাকরি করতে চান নাকি দেশের বাইরে যেতে চান। নিজেকে সেভাবে প্রস্তুত করুন। এ ক্ষেত্রে আমি ভুল করেছিলাম, প্রথমে ২টা বিসিএস দিয়েছি। পরে ট্র্যাক চেঞ্জ করেছি। এভাবে আমার সময় নষ্ট হয়েছে।
২. রিসার্স মেথডলজি কোর্সে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিন। আর সিলেবাস দেখুন। আমাদের সিলেবাস যথেষ্ট ভালো, কিন্তু আমাদের প্র্যাক্টিস ভালো না। সিনিয়রদের শিট কপি করা থেকে বের হয়ে এসে নিজের সৃজনশীলতা ও জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন। এখন থিসিস চালু হয়েছে। থিসিস যেন করতে পারেন সেভাবে সিজিপিএ রাখার চেষ্টা করতে হবে। এই জার্নিতে থিসিস অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অষ্টম সেমিস্টারের পরীক্ষা হওয়ার আগেই IELTS/TOEFL দিয়ে রাখুন। সম্ভব হলে GRE দিন।
আরও পড়ুন: জেনে রাখুন বিশ্বসেরা ২৯ স্কলারশিপের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট
৩. আমাদের সম্পর্কে সবচেয়ে নেগেটিভ ও কমন ধারণা হচ্ছে আমাদের ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আমরা বাইরে যেতে পারব না। কিন্তু আপনি অবশ্যই যেতে পারবেন। USA-এর বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে রিলিজিয়ন স্টাডিজ নামে একটা সাবজেক্ট আছে, যেখানে ফান্ডিংও দেয়। আপনাকে শুধু খুঁজে বের করতে হবে। প্রফেসরদের মেইল করতে হবে। আপনার পটেনশিয়ালটিকে খুঁজে বের করে নিজেকে একটা মেইলে প্রেজেন্ট করতে হবে। এখন আপনার ইচ্ছা আপনি কোন সাবজেক্টে পড়তে চান। চাইলে আমাদের ট্র্যাকেই থাকতে পারেন আবার সোশ্যাল সাইন্সেও সুইচ করতে পারেন। চাইলে আপনি MBA-তেও যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনি ফুল ফান্ডিং পাবেন না (MBA-তে ফান্ডিং কম থাকে, নিজেদের স্টুডেন্টদেরই ফান্ডিং সিকিওর করতে হিমশিম খেতে হয়)। আমাদের অষ্টম ব্যাচের লুসি আপু, সেল্ফ ফান্ডে MBA করছেন আমেরিকায়।
৪. আপনি একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিজের মেধার সাক্ষরতা রেখে অনার্স শেষ করে দেশের বাইরে যাওয়ার চিন্তা করছেন। আপনি কেন এজেন্সির কাছে যাবেন? আমরা এখানে সবচেয়ে বড় ভুল করি। এজেন্সি আমাদের শেখায় আপনার এই ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে বাইরে যেতে পারবেন না। আমি প্রতিটা স্টেপ নিজে করেছি। অ্যাপ্লাই করা থেকে বাসা ঠিক করা সবই।
৫. প্রফেসরদেরকে মেইল করতে থাকুন ৩০০/৪০০ প্রফেসরকে মেইল করবেন। এর মাঝে আপনি কখনো রিপ্লাই পাবেন না—আবার রিপ্লাই পাবেনও, কিন্তু বলবে ফান্ডিং নাই, আপনাকে হায়ার করবে না। ওকে, নো প্রবলেম। তবুও আপনাকে রিপ্লাই করেছে। এত এত মেইলের মাঝে আপনাকে কেউ না কেউ বলবে আপনার প্রোফাইল ভালো লেগেছে, এটাকে গ্রিন সিগন্যাল ধরে এগোতে হবে। একটা জুম মিটিং ম্যানেজ করার চেষ্টা করতে হবে। মিটিংয়ের আগে স্লাইড রেডি করে নিজেকে প্রিপেয়ার করুন। স্লাইড তৈরি করতে হবে, প্রিভিয়াস স্টাডি, কারেন্ট রিসার্চ প্রজেক্ট, ফিউচার রিসার্স সম্পর্কে কমপ্লিট ধারণা দিতে হবে। কোনো কোর্সে রেজাল্ট বেশি খারাপ থাকলে সেটার লজিক্যাল রিজন বলে দেবেন। আমার অ্যারাবিক কোর্সে ২.২৫ ছিল। আমি লজিক্যাল এক্সপ্লেইনেশন দিয়েছিলাম মিটিংয়ে। প্রফেসরদের মেইল করতে হবে আমেরিকান অফিস সময়ে, বাংলাদেশের অফিস সময়ে না। অ্যাক্টিভ থাকতে হবে, প্রফেসর রিপ্লাই দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রিপ্লাই দিতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়। ৩টা জুম মিটিং ম্যানেজ করেছিলাম, ২টায় ফান্ডিং পেয়েছি। ১টায় রিজেক্ট, অতএব পজিটিভ এর পাশাপাশি নেগেটিভ কিছুও আসতে পারে মাথায় রাখতে হবে।
আরও পড়ুন: বিদেশে উচ্চশিক্ষা: রেফারেন্স লেটার কী, রেফারেন্স লেটারে কী লেখা থাকে
৬. SOP-আপনার সম্পর্কে আপনি ভালো জানেন নাকি আমি ভালো জানি? না কোনো এজেন্সি ভালো জানে? আপনি ভালো জানেন, আপনি জানেন আপনার ভেতর কী কোয়ালিটি আছে, আপনি আন্ডারগ্র্যাড এ কোন কোর্সে কী শিখেছেন আপনার থেকে ভালো দুনিয়ায় কেউ জানে না। SOP নিজে লিখুন, চ্যাটজিপিটি বা AI থেকে নেবেন না। রিজেক্ট হওয়ার পসিবলিটি থাকবে ৯৯ শতাংশ। প্রতিটি ইউনিভার্সিটির জন্য ভিন্ন ভিন্ন SOP করতে হবে। SOP লেখার আগে আপনার আন্ডারগ্র্যাড সিলেবাস অ্যানালাইসিস করবেন এবং যেখানে অ্যাপ্লাই করতে চান ওই বিভাগের ওভারভিউ অ্যানালাইসিস করবেন। ফ্যাকাল্টিদের প্রোফাইল ও গুগল স্কলার থেকে তাদের রিসার্চ পেপার পড়বেন। এরপরে নিজের থিসিস ও রিসার্চ মেথডোলজি কোর্সে কী শিখছেন, থিসিসের ফাইন্ডিংস কী ছিল এটা দেবেন। আমি ২ পেজের SOP লিখতে ৬ মাস সময় নিয়েছি। প্রতিটি ওয়ার্ড অ্যানালাইসিস করেছি। এই SOP কারও সঙ্গেই শেয়ার করবেন না।
৭. USA-এর ক্ষেত্রে LOR খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। জেনেরিক না দেওয়া ভালো।
৮. রিজিউমি করতে প্রফেসরদের ওয়েবসাইট ফলো করুন।
মেহনাজ পারভীন, গ্র্যাজুয়েট টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট (সোশিওলজি),
ফ্লোরিডা আটলান্টিক ইউনিভার্সিটি