হাঙ্গেরিতে উচ্চশিক্ষা: বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য সাশ্রয়ী ও সম্ভাবনাময় এক গন্তব্য
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৫, ০৩:১০ PM , আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৫, ০৭:০৬ PM
ইউরোপের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে বিশ্বখ্যাত দেশ হাঙ্গেরি এখন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের কাছে উচ্চশিক্ষার একটি জনপ্রিয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। উন্নতমানের শিক্ষা, তুলনামূলকভাবে কম খরচ, সহজ ভিসাপ্রক্রিয়া এবং আন্তর্জাতিক কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা—সব মিলিয়ে হাঙ্গেরিতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ একটি চমৎকার সিদ্ধান্ত হতে পারে।
হাঙ্গেরিতে উচ্চশিক্ষা কেন
*ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যরাষ্ট্র;
*ইংরেজি মাধ্যমে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি পর্যায়ে পড়াশোনা;
*তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী ব্যয়ে জীবনযাপন ও শিক্ষার সুযোগ;
*Stipendium Hungaricum-সহ বিভিন্ন পূর্ণ স্কলারশিপ;
*শেনজেনভুক্ত অন্যান্য দেশে সহজে ভ্রমণ;
*পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম কাজের সুবিধা;
*ডিগ্রি শেষ করে ৯–১২ মাসের চাকরি অনুসন্ধান ভিসা;
*চাকরি পাওয়ার পর স্থায়ী বসবাসের সুযোগ (পার্মানেন্ট রেসিডেন্স);
আরও পড়ুন: বিদেশে উচ্চশিক্ষা: জেনে নিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুল-ফ্রি ১৬ স্কলারশিপ সম্পর্কে
খরচ ও স্কলারশিপ
১. নিজ খরচে (Self-funded) পড়াশোনা করলে—
*টিউশন ফি: বছরে প্রায় ১,৫০০–৫,০০০ ইউরো (বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয়ভেদে ভিন্ন হতে পারে);
*বাসস্থান ও দৈনন্দিন ব্যয়: মাসে প্রায় ৩০০–৬০০ ইউরো (বুদাপেস্টে কিছুটা বেশি);
২. স্কলারশিপের সুযোগ—
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য ইউরোপীয় দেশটিতে রয়েছে পর্যাপ্ত বৃত্তির সুযোগ। অধিকাংশ বৃত্তিতে টিউশনসহ বাসস্থান ও পরিবহনের অর্থের জোগান হয়ে যায়। এগুলোর মধ্যে সব থেকে জনপ্রিয় হচ্ছে স্টাইপেন্ডিয়াম হাঙ্গারিকাম স্কলারশিপ। প্রতিবছর প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীকে এই বৃত্তি দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: কানাডায় উচ্চশিক্ষা: জেনে নিন দেশটির সেরা ১০ বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে
সুযোগ-সুবিধা—
*সম্পূর্ণ টিউশন ফি মওকুফ;
*মাসিক উপবৃত্তি;
*স্নাতক (Bachelor): ৪৩,৭০০ ফোরিন্ট (~১১০ ইউরো);
*স্নাতকোত্তর (Master): ৪৩,৭০০ ফোরিন্ট (~১১০ ইউরো);
*পিএইচডি (PhD): ১,৪০০০০–১,৮০০০০ ফোরিন্ট (~৩৭০–৪৭০ ইউরো);
*আবাসনের সুবিধা বা হোস্টেল ভাতা;
*স্বাস্থ্যবিমা সুবিধা;
*পরিবার নিয়ে যাওয়ার সুযোগ (বিশেষ করে পিএইচডি পর্যায়ে);
আরও পড়ুন: বিদেশে উচ্চশিক্ষা: অস্ট্রেলিয়ায় স্কলারশিপ পাওয়ার উপায়, সুযোগ-সুবিধাসহ নানা বিষয়
ভাষাদক্ষতা—
*অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে IELTS (৬.০–৬.৫) বা TOEFL প্রয়োজন;
*কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে Medium of Instruction (MOI) গ্রহণযোগ্য;
*অনেক প্রতিষ্ঠানে Duolingo বা PTE পরীক্ষার স্কোরও বৈধ;
হাঙ্গেরির স্টুডেন্ট ভিসাপ্রক্রিয়া
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অফার লেটার পাওয়ার পরই স্টাডি ভিসার কাজ শুরু করতে হবে। হাঙ্গেরির দীর্ঘমেয়াদি জাতীয় ভিসাই (টাইপ ডি) মূলত এখানে স্টুডেন্ট ভিসা। এই ভিসায় শুধু হাঙ্গেরিতে একবার প্রবেশে ৯০ দিনের বেশি থাকার অনুমতি পাওয়া যায়।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র—
*কমপক্ষে দুটি ফাঁকা পৃষ্ঠাসহ ন্যূনতম ছয় মাসের মেয়াদসম্পন্ন বৈধ পাসপোর্ট;
*সম্পূর্ণ এবং স্বহস্তে স্বাক্ষরিত ভিসা আবেদনপত্র;
*সদ্য তোলা ৩ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি;
*হাঙ্গেরিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অফার লেটার, যেখানে নির্বাচিত প্রোগ্রামের নাম, সময়কাল, শুরুর তারিখ এবং টিউশন ফি উল্লেখ থাকবে;
*টিউশন ও জীবনযাত্রার খরচের জন্য পর্যাপ্ত তহবিলের প্রমাণপত্র (৩ থেকে সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৮০০ ইউরো);
*ন্যূনতম ৩০ হাজার ইউরোর (৩৮ লাখ ১৪ হাজার ৩৪৬ টাকা) চিকিৎসাবিমা;
*হাঙ্গেরি ফ্লাইটের টিকিট;
*শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র;
*জীবনবৃত্তান্ত (সিভি);
*মোটিভেশন লেটার;
আরও পড়ুন: জেনে রাখুন বিশ্বসেরা ২৯ স্কলারশিপের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট
পরিবার নিয়ে যাওয়ার সুযোগ—
*স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি শিক্ষার্থীরা স্বামী/স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে যেতে পারেন;
*স্বামী/স্ত্রী কাজের অনুমতি পেতে পারেন;
*সন্তানরা হাঙ্গেরির স্থানীয় স্কুলে ভর্তি হতে পারে;
পড়াশোনা শেষে—
*চাকরি খোঁজার জন্য ৯–১২ মাসের ভিসা পাওয়া যায়;
*চাকরি পেলে ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন;
*নির্দিষ্ট সময় পর স্থায়ী বাসিন্দা (PR) হওয়ার সুযোগ;
*পুরো ইউরোপজুড়ে চাকরি করার পথ খুলে যায়;
আবেদনের সময় ও প্রস্তুতি
অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বছরের সাধারণত দুটি সময়ে ভর্তি নেওয়া হয়। একটি হচ্ছে সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া ফল সেমিস্টারে এবং আরেকটি ফেব্রুয়ারিতে স্প্রিং সেমিস্টারে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদনপদ্ধতি ভিন্ন, যা ভর্তির মৌসুমগুলোয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। নথি আপলোড ও আবেদন ফি দেওয়ার মাধ্যমে আবেদনপ্রক্রিয়া এই অনলাইন পোর্টালগুলোর মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হয়। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় নথিপত্রগুলো নির্দিষ্ট সময়সীমার আগেই ডাকযোগে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসে পাঠাতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আবেদনপ্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে স্কাইপে বা জুমের মাধ্যমে অনলাইনে সাক্ষাৎকারও নেওয়া হয়ে থাকে।
প্রয়োজনীয় নথিপত্র—
*অনলাইনে পূরণকৃত সম্পূর্ণ আবেদন;
*ইংরেজিতে অনূদিত বিগত পরীক্ষার সনদের প্রতিলিপি;
*মোটিভেশন লেটার;
*ব্যক্তিগত আইডি বা পাসপোর্টের কপি;
*২ থেকে ৩ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি;
*ন্যূনতম ২ কপি অ্যাকাডেমিক রেফারেন্স লেটার;
*হালনাগাদ সিভি;
এর বাইরেও সংশ্লিষ্ট প্রোগ্রামের ওপর নির্ভর করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অতিরিক্ত নথি চাইতে পারে।
আরও পড়ুন: বিদেশে উচ্চশিক্ষা: রেফারেন্স লেটার কী, রেফারেন্স লেটারে কী লেখা থাকে
হাঙ্গেরির সেরা কিছু বিশ্ববিদ্যালয়
*সেজেড ইউনিভার্সিটি;
*ডেব্রেসেন ইউনিভার্সিটি;
*ইওত্ভস লোর্যান্ড ইউনিভার্সিটি;
*বুদাপেস্ট ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি অ্যান্ড ইকোনমিকস;
*পেচ ইউনিভার্সিটি;
*করভিনাস ইউনিভার্সিটি অব বুদাপেস্ট;
*হাঙ্গেরিয়ান ইউনিভার্সিটি অব এগ্রিকালচার অ্যান্ড লাইফ সায়েন্সেস;
*জ্যাকেনি ইসৎভান ইউনিভার্সিটি;
*মিশকল্টস ইউনিভার্সিটি;
*প্যানোনিয়া ইউনিভার্সিটি।