বিদেশে উচ্চশিক্ষা: অস্ট্রেলিয়ায় স্কলারশিপ পাওয়ার উপায়, সুযোগ-সুবিধাসহ নানা বিষয়

অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে চাইলে জানুন খুঁটিনাটি নানা বিষয়ে
অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে চাইলে জানুন খুঁটিনাটি নানা বিষয়ে  © সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়া ওশেনিয়া মহাদেশের একটি দ্বীপরাষ্ট্র, যার মূল ভূখণ্ড তাসমানিয়া ও ছোট ছোট বহু দ্বীপ নিয়ে গঠিত। উন্নত জীবনমান, মানসম্মত শিক্ষা এবং নিরাপদ পরিবেশের কারণে এটি বিশ্বের অন্যতম সেরা উচ্চশিক্ষার গন্তব্য। ক্যানবেরা, সিডনি, মেলবোর্ন, ব্রিসবেন, অ্যাডিলেড ও পার্থে অবস্থিত আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। তুলনামূলক সহজ ভিসাপ্রক্রিয়া ও খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ থাকায় অস্ট্রেলিয়া মেধাবী শিক্ষার্থীদের কাছে এক জনপ্রিয় গন্তব্য।

উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নিতে চাইলে অনেক শিক্ষার্থীর-ই প্রথম পছন্দ হয়ে ওঠে অস্ট্রেলিয়া। উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা ও উচ্চমানের জীবনযাত্রার ফলে এখানকার পড়াশোনা কিছুটা ব্যয়সাপেক্ষ হলেও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপের সুযোগ। এসব স্কলারশিপ শিক্ষার ব্যয়ভার অনেকটাই কমিয়ে আনে এবং গুণগত শিক্ষার পথ সহজ করে তোলে। আজ আমরা অস্ট্রেলিয়ায় স্কলারশিপ পাওয়ার উপায় নিয়ে বিস্তারিত জানব।

অস্ট্রেলিয়ার উল্লেখযোগ্য নানা স্কলারশিপ—

১. অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস স্কলারশিপ

আবেদনের সময়: প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত; 

২. বব হেমন্ড রিসার্চ স্কলারশিপ

আবেদনের সময়: কোর্সভেদে আবেদনের সময়সীমা আলাদা হয়ে থাকে;

৩. ইউনিভার্সিটি অব সিডনি ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ স্কলারশিপ

আবেদনের সময়: সারা বছরই খোলা থাকে তবে ভিন্ন ভিন্ন ডেডলাইন ওয়েবসাইটে নোটিশের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়;

৪. ম্যাকোয়ারি ইউনিভার্সিটি ইন্টারন্যাশনাল স্কলারশিপ

আবেদনের সময়: সারা বছরই খোলা থাকে তবে ভিন্ন ভিন্ন ডেডলাইন ওয়েবসাইটে নোটিশের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়;

৫. কার্টিন ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপ

আবেদনের সময়: কোর্সভেদে আবেদনের সময়সীমা আলাদা হয়ে থাকে;

৬. এডিলেইড স্কলারশিপ ইন্টারন্যাশনাল

আবেদনের সময়: ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত;

৭. আরটিপি স্কলারশিপ

আবেদনের সময়: সারা বছরই খোলা থাকে তবে ভিন্ন ভিন্ন ডেডলাইন ওয়েবসাইটে নোটিশের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়;

৮. ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্ন গ্র্যাজুয়েট রিসার্চ স্কলারশিপ

আবেদনের সময়: সেপ্টেম্বরে শুরু হয় কিন্তু ডেডলাইন নির্ভর করে বাছাই করা কোর্সের ওপর;

৯. জন অলরাইট ফেলোশিপ

আবেদনের সময়: ফেব্রুয়ারি থেকে জুন;

এসব ছাড়াও নানা ধরনের স্কলারশিপ রয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়। 

আরও পড়ুন: স্কলারশিপে পড়ুন মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে, বছরে মিলবে ৪৬ লাখ টাকা

সুযোগ-সুবিধা—

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব স্কলারশিপগুলোর মধ্যে বেশ বৈচিত্র্য আছে। এগুলোতে প্রায় সরকারি অনুদানগুলোর কাছাকাছি সুবিধা দেয়া হয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় ও কোর্সের ভিত্তিতে প্রতিমাসে বা বছরে সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে থাকা-খাওয়ার খরচসহ নগদ অর্থের পরিমাণ কম-বেশি হয়। টিউশন ফি মওকুফ করা হয় শতকরা ১০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত।

গবেষণা কার্যক্রম শুরু করার জন্য অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার সার্বিক ভ্রমণ ভাতা ও থিসিস ভাতা প্রদান করে থাকে। এ ছাড়া রয়েছে নির্ভরশীল শিশুর ভাতাসহ চিকিৎসা ভাতা, ম্যাটারনিটি এবং প্যাটারনিটি লিভ।

অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডসে বলতে গেলে প্রায় সবকিছুই বিনা মূল্যে দেয়ার ব্যবস্থা করেছে অস্ট্রেলিয়ার সরকার। এর মধ্যে রয়েছে দেশটিতে যাওয়ার জন্য বিমান ভাড়া ও ফিরতি টিকেট, পড়াশোনার সামগ্রিক খরচ, আবাসন ও খাওয়ার খরচসহ মাসিক নগদ অর্থ। এ ছাড়া নারী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য থাকে বিশেষ সুবিধা।

আরও পড়ুন: বিনা খরচে উচ্চশিক্ষার সুযোগ অস্ট্রেলিয়ায়, বছরে মিলবে ৩২ লাখ টাকা

আবেদনের যোগ্যতা—

অস্ট্রেলিয়ার বেশির ভাগ স্কলারশিপ দেওয়া হয় কেবল স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি প্রোগামগুলোতে। প্রোগ্রামভেদে একেক রকম সুবিধা পাওয়া যায়। বেশির ভাগ স্কলারশিপ স্নাতকোত্তর পর্যায়ের হওয়াতে ব্যাচেলরের সনদ চাওয়া হয়ে থাকে। এখানে ভালো সিজিপিসহ অ্যাকাডেমিক রেকর্ডের পাশাপাশি গুরুত্ব পায় ইংরেজি ভাষাদক্ষতা ও টিউশন ফি চালানোর সক্ষমতার প্রমাণপত্র।

এ ছাড়াও অ্যাকাডেমিক ভালো ফলাফল, ইংরেজি ভাষাদক্ষতা ও টিউশন ফি দেওয়ার সক্ষমতার প্রমাণ সবার আগে বিবেচ্য। পাশাপাশি আবেদনকারীর নির্বাচিত বিষয়, বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদিও গুরুত্ব রাখে। কিছু স্কলারশিপ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে পাঠ্যক্রমবহির্ভূত কার্যক্রম এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডের রেকর্ডও সুবিধা হিসেবে কাজ করে। যে বিষয়ে স্নাতকোত্তরের জন্য আবেদন করা হয়েছে সে বিষয় সংশ্লিষ্ট কোনো কাজে ন্যূনতম চার বছরের অভিজ্ঞতা দেখাতে হবে। সর্বোপরি আবেদনের সঙ্গে গবেষণার ভবিষ্যত সম্ভাবনার স্বপক্ষে ডেভেলপমেন্ট ইম্প্যাক্ট প্ল্যান প্রেরণ করতে হবে।

সামরিক পদে চাকরিরত কেউ অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্বের জন্য আবেদনকারীরা আবেদন করতে পারবেন না।

ভাষাদক্ষতার ক্ষেত্রে আইইএলটিএস স্কোর কমপক্ষে ৬.৫ চেয়ে থাকে যেখানে মডিউলগুলোতে (রিডিং, রাইটিং, লিসেনিং ও স্পিকিং) ব্যান্ড স্কোর নূন্যতম ৬ হতে হবে। তবে নারী, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তি ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের আবেদনকারীরা আইইএলটিএস স্কোর ৬.০ দেখিয়ে আবেদন করতে পারবেন। আইইএলটিএসের পাশাপাশি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে পিটিই (পিয়ার্সন টেস্ট অব ইংলিশ) চেয়ে থাকে, যার স্কোর হতে হয় ন্যূনতম ৫৮। টোফেল-এর পেপার বেজড টেস্টে কমপক্ষে ৫৮০ এবং কম্পিউটার বেজড টেস্টে কমপক্ষে ২৩৭ নম্বর পেতে হবে। 

আরও পড়ুন: জেনে রাখুন বিশ্বসেরা ২৯ স্কলারশিপের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট

আবেদনপ্রক্রিয়া—

অস্ট্রেলিয়ায় স্কলারশিপের আবেদন মঞ্জুর হওয়ার পরেও শিক্ষার্থীকে স্টুডেন্ট ভিসায় আলাদা করে আবেদন করতে হয়। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার জন্যই যে অস্ট্রেলিয়াতে যাওয়া হচ্ছে তা স্টুডেন্ট ভিসার আবেদনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। এর পরেই আসে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও থাকা-খাওয়ার খরচ বহনের আর্থিক সচ্ছলতার ব্যাপারটি।

শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অথবা স্কলারশিপের ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনেই আবেদন করতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে ওয়েবসাইটে দেওয়া নীতিমালা খুঁটিনাটি স্পষ্টভাবে অনুসরণ করতে হবে।

প্রতিটি আবেদনের জন্য ব্যক্তিগত প্রোফাইল বা সিভি, স্টেটমেন্ট অব পারপাস, রিকমেন্ডেশন লেটার গুরুত্বপূর্ণ নথি। এগুলোর নমুনা সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটেই স্কলারশিপের বিজ্ঞপ্তি চলাকালীন আবেদন ফর্মের সঙ্গেই সরবরাহ করা থাকে।

আবেদনপত্রের অংশে যাবার আগে কোন কোন ক্ষেত্রে আগেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে কম্পিউটারের স্ক্রিনে আসা কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হতে পারে। সতর্কতার সঙ্গে সেগুলোর যথাযথ উত্তর প্রদানের মাধ্যমে আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে। অতঃপর প্রয়োজনীয় সব নথি আপলোড করে অনলাইনের আবেদনের সার্বিক কাজ সম্পাদন করা যাবে।

আবেদন মঞ্জুর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবেদনের সময় প্রদত্ত শিক্ষার্থীর ই-মেইলে তা জানিয়ে পরবর্তী নির্দেশনা পাঠানো হবে।


সর্বশেষ সংবাদ