বাংলায় ইসলাম বিস্তারে কৃষি ও পরিবেশ ভূমিকা রেখেছিল: সেমিনারে বক্তারা

ঢাবিতে বাংলায় ইসলামের বিস্তার: কৃষি ও পরিবেশের সম্ভাব্য প্রভাব শীর্ষক সেমিনার
ঢাবিতে বাংলায় ইসলামের বিস্তার: কৃষি ও পরিবেশের সম্ভাব্য প্রভাব শীর্ষক সেমিনার  © সৌজন্যে প্রাপ্ত

মধ্যযুগীয় বাংলায় প্রচলিত জলজ ধান চাষাবাদ ধানের উৎপাদন দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়। এই উৎপাদন বৃদ্ধির সম্ভাবনা কাজে লাগাতে মুসলিম সুফি-পীরদের নেতৃত্বে বহু অঞ্চলে বনভূমি পরিষ্কার করে নতুন আবাদযোগ্য জমি তৈরি করা হয়। দীর্ঘ এই কৃষি-নির্ভর রূপান্তর প্রক্রিয়া স্থানীয় কৃষিজীবী জনগোষ্ঠীকে ধীরে ধীরে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করেছিল। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক, বিশিষ্ট আর্কিওলজিস্ট ও আর্কিওবোটানিস্ট ড. মিজানুর রহমানের এক গবেষণাভিত্তিক আলোচনায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।

গতকাল শনিবার (৭ ডিসেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার অডিটরিয়ামে “বাংলায় ইসলামের বিস্তার: কৃষি ও পরিবেশের সম্ভাব্য প্রভাব” শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে সেন্টার ফর বেঙ্গল স্টাডিজ (সিবিএস)। এ সেমিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ড. মিজানুর রহমান।

বক্তব্যে তিনি বাংলায় ইসলামের আগমন ও বিস্তার নিয়ে প্রচলিত বয়ানগুলোকে আর্কিওলজিকাল ও আর্কিওবোটানিক্যাল প্রমাণের আলোকে পুনর্বিবেচনা করেন। তরবারির জোরে ইসলাম বিস্তার বা পূর্ববর্তী কোনো ধর্ম থেকে ব্যাপক ধর্মান্তরের ধারণাকে তিনি প্রশ্নবিদ্ধ করেন।

ড. মিজানুর রহমান বাংলায় ইসলামের বিস্তারে কৃষিকে প্রধান নির্ধারক উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করেন। তার উপস্থাপিত আর্কিওলজিকাল তথ্য অনুযায়ী, মধ্যযুগীয় বাংলায় প্রচলিত জলজ ধান বা ওয়েট রাইস চাষাবাদ ধানের উৎপাদনকে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়। এই উৎপাদন বৃদ্ধির সম্ভাবনা কাজে লাগাতে মুসলিম সুফি-পীরদের নেতৃত্বে বহু অঞ্চলে বনভূমি পরিষ্কার করে নতুন আবাদযোগ্য জমি তৈরি করা হয়। দীর্ঘ এই কৃষি-নির্ভর রূপান্তর প্রক্রিয়া স্থানীয় কৃষিজীবী জনগোষ্ঠীকে ধীরে ধীরে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করেছিল বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

তিনি ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে নদীর গতিপথ পরিবর্তন এবং নতুন চর জেগে ওঠার ফলে মধ্যযুগে বিস্তীর্ণ আবাদযোগ্য ভূখণ্ড সৃষ্টি হয়। এই নতুন কৃষিযোগ্য জমিতে মোগল সেনাবাহিনীর অবস্থান, বসতি স্থাপন এবং কৃষিকাজে অংশগ্রহণ ইসলামের বিস্তারে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ড. রহমানের বক্তব্যে উঠে আসে যে কৃষি উৎপাদন, পরিবেশগত পরিবর্তন এবং আঞ্চলিক জনপদের রূপান্তর বাংলায় ইসলামের প্রসারকে বোঝার ক্ষেত্রে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে।

সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন মোহাম্মদ কাওসার আহমেদ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় জাদুঘরের সাবেক কিউরেটর ড. মুহাম্মদ আলমগীর, সিবিএস-এর নির্বাহী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, এবং গবেষক ও নীতিনির্ধারকসহ আরও অনেকে।

আলোচকরা উল্লেখ করেন- কৃষি, পরিবেশ এবং জলবায়ুর এই আন্তঃসম্পর্ক বাংলার সামাজিক ইতিহাস ব্যাখ্যায় নতুন মাত্রা যোগ করে এবং ভবিষ্যৎ গবেষণার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি তৈরি করে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence