ড. হাফিজুর রহমান © সংগৃহীত ও টিডিসি সম্পাদিত
তুরস্কের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে থাকা জামায়াত ইসলামীর আমিরের ডাকে সাড়া দিয়ে দেশে ফেরেন ড. হাফিজুর রহমান। দলটির পক্ষ থেকে গাজীপুর-৬ (টঙ্গী, গাছা, পূবাইল) আসনে প্রাথমিক মনোনয়নও পেয়েছিলেন তিনি। তবে তিনি জানিয়েছেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচনে তিনি অংশ নিচ্ছেন না। তবে গাজীপুরের ছয়টি আসনেই তিনি নির্বাচনী কাজ করবেন। সেই সঙ্গে গাজীপুরের মানুষের উন্নয়নে কাজ করে যাবেন।
আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) রাতে নিজের ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, ‘আসসালামু আলাইকুম। আপনারা জানেন যে, আমি গাজীপুর–৬ আসনে জামায়াত মনোনীত এমপি প্রার্থী ছিলাম। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক আমাদের আসনটি বাতিল হয় এবং বর্তমানে এটি আগের মতো গাজীপুর–২ আসনের অন্তর্ভুক্ত। এখানে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে আগেই ঘোষিত হয়েছেন মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির হোসেন আলী ভাই।
সুতরাং আমি এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি না। তবে মুহতারাম আমিরে জামায়াতের নির্দেশক্রমে আমি গাজীপুরের পাঁচটি আসনেই সময় দেবো এবং গাজীপুরের মাটি ও মানুষের উন্নয়নে আমার জায়গা থেকে কাজ করে যাবো, ইনশাআল্লাহ। পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে আমার পরিকল্পনা আছে—সময়-সুযোগ পেলে আমার অতীত ও বর্তমানের প্রিয় সহকর্মীরা যে যে আসনে নির্বাচন করছেন, সে সব আসনগুলোতে যাওয়ার চেষ্টা করবো।
আরও পড়ুন: স্বামীর কবরের পাশে চিরনিদ্রায় খালেদা জিয়া
এর বাইরে দীর্ঘমেয়াদে কিছু প্রতিষ্ঠান ডেভেলপ করার এবং পলিসি লেভেলে কিছু কাজ করার ইচ্ছা আছে। জাতীয় নির্বাচনের পরপরই কিংবা দ্রুততম সময়ের মধ্যে একাডেমিয়ায় ফেরার চিন্তাও আছে। সব মিলিয়ে আপনাদের দোয়া চাই।
গাজীপুর–৬ আসনে অসংখ্য মানুষ আমাকে সময় দিয়েছেন, রাত-দিন পরিশ্রম করেছেন। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে যে পরিমাণ ভালোবাসা আমি পেয়েছি, তা কল্পনাতীত। বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের কাছ থেকেও যে সমর্থন পেয়েছি, তা আমাকে পুলকিত করেছে। আমি আপনাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞ এবং প্রত্যেককে ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ জানাই। আমি আপনাদের পাশে থেকে কাজ করে যেতে চাই এবং আপনাদের এই ভালোবাসার প্রতিদান দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাবো, ইনশাআল্লাহ। আপনারা আমাকে আপনাদের দোয়ায় রাখবেন।’
প্রসঙ্গত, ড. হাফিজুর রহমানের জন্ম গাজীপুর জেলার কালনী গ্রামে। পড়ালেখার হাতেখড়ি কালনী ইসলামিয়া ফাজিল (বিএ) মাদ্রাসায়, যেখানে তিনি ষষ্ঠ শ্রেণিতে (উপজেলা পরিষদ) বৃত্তি লাভের পাশাপাশি অষ্টম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় পুরো প্রতিষ্ঠানে প্রথম স্থান অর্জন করেন। এরপরের দেশের পড়াশোনার প্রায় পুরো সময়টাই কাটিয়েছেন টঙ্গীতে। তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার টঙ্গী শাখা থেকে দাখিল ও আলিম পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করার পাশাপাশি তা’মীরুল মিল্লাত থেকে ফাজিল ও কামিলও সম্পন্ন করেন। ২০১৪ সালে তুরস্ক সরকারের স্কলারশিপে মনোনীত হয়ে গাজী বিশ্ববিদ্যালয়ে (আঙ্কারা) পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য তুরস্কে যান এবং ২০২০ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
তিনি ২০২১ সালে তুরস্কের তোকাত গাজি ওসমান পাশা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন এবং বর্তমানে অধ্যাপনায় নিয়োজিত আছেন। পাশাপাশি ২০২৫ সালের জুলাই মাস থেকে সিঙ্গাপুরের নানইয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির স্কুল অব সোশ্যাল সায়েন্সেস-এ ভিজিটিং স্কলার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। পেশায় একাডেমিশিয়ান ও গবেষক হলেও লেখালেখি তার শখ। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকে নিয়ে বাংলায় লেখা প্রথম বই ‘এরদোয়ান : দ্য চেঞ্জ মেকার’, আমার দেখা তুরস্ক এবং ইসলামী রাজনীতি তত্ত্বে রাষ্ট্র ধারণা; এই তিনটি বই-ই বেস্টসেলার তালিকায় স্থান পেয়েছে। এর বাইরে বিশ্বখ্যাত জার্নালগুলোতে তার লেখা পিয়ার-রিভিউড আর্টিকেল, বুক চাপ্টার, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাডেমিক কনফারেন্সে অংশ নিয়েছেন।