স্বামীর কবরের পাশে চিরনিদ্রায় খালেদা জিয়া

৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:১৩ PM , আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:৫০ PM
জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে দাফন করা হয় খালেদা জিয়াকে

জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে দাফন করা হয় খালেদা জিয়াকে © বিএনপির ফেসবুক পেজ থেকে

যাদের অধিকার আদায়ের লড়াই ও দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বারবার গ্রেপ্তার হয়েছেন, জেল খেটেছেন, সেই অগণিত মানুষের চোখের জল, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় বিদায় নিয়ে স্বামী সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সংসদ ভবনের উত্তর প্লাজা এলাকার ‘জিয়া উদ্যানে’ স্বামী জিয়ার মাজার কমপ্লেক্সেই সমাহিত হলেন দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়া।

বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দাফন সম্পন্ন হয়।

দীর্ঘদিন ধরে গুরুতর অসুস্থতায় ভোগা খালেদা জিয়া গতকাল মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোর ছয়টায় রাজধানীর বসুন্ধারা এলাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।

বিপুল মানুষের অংশগ্রহণে জানাজার পর সংসদ ভবন থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় জাতীয় পতাকায় মোড়া লাশবাহী গাড়িতে করে খালেদা জিয়ার মরদেহ জিয়া উদ্যানে নেওয়া হয়। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বিশেষ একটি বাহনে (কফিন বিয়ার) করে খালেদা জিয়ার মরদেহ সাবেক রাষ্ট্রপতি ও তার স্বামী জিয়াউর রহমানের সমাধির কাছে নেওয়া হয়।

সমাধির কাছাকাছি নেওয়ার পর খালেদা জিয়ার মরদেহবাহী কফিন কাঁধে করে কবরে নিয়ে যান সেনা, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সদস্যরা। এরপর সবার আগে মায়ের কবরে নামেন তারেক রহমান। এরপর খালেদা জিয়া ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দারসহ বিএনপির কয়েকজন নেতা কবরে মরদেহ নামান। ওপরে বিএনপির দলীয় পতাকা মেলে ধরে তারেক রহমান ও শামীম ইস্কান্দার কবরে বাঁশ বিছিয়ে দেন। এরপর তারেকসহ অন্যরা উঠলে পিডব্লিউডির অনুমোদিত কয়েকজন বাঁশের ওপর চাটাই বিছিয়ে দেন। এরপর মাজার কমপ্লেক্স মসজিদের ইমামের উপস্থিতিতে সবার আগে তারেক রহমান মায়ের কবরে মাটি ছিটিয়ে দেন। এরপর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা কবরে মাটি দেন।

আরও পড়ুন: পেশায় ব্যবসায়ী নুর, বার্ষিক আয়ে ছাড়িয়ে গেলেন তারেক-শফিকুর-নাহিদকেও

এরপর একেএকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে উপদেষ্টাদের মধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, উপদেষ্টা আসিফ নজরুলসহ অন্যরা, সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান ও বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন কবরে মাটি দেন। 

পরিবারের নারী সদস্যদের মধ্যে তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমান, মেয়ে জাইমা রহমান, ছোট ভাই আরাফাত রহমানের স্ত্রী শামিলা রহমান সিঁথি, তার বড় মেয়ে জাহিয়া রহমান, ছোট মেয়ে জাফিরা রহমানসহ অন্য সদস্যরাও কবরে মাটি দেন। পুরো দাফন প্রক্রিয়া চলার সময় পরিবারের নারী সদস্যরা নির্ধারিত দূরত্বে দাড়িয়ে শোক ও শ্রদ্ধা জানান। এ সময় অনেককে হাউমাউ করে কাঁদতে দেখা যায়। 

কবরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে তিন বাহিনীর পক্ষ থেকে দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সশস্র সালাম জানানো হয়। সেনাবাহিনীর পক্ষে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর পক্ষে নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান ও বিমানবাহিনীর পক্ষে বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন খালেদা জিয়ার কবরের বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। তিন বাহিনীর সুসজ্জিত একটি দল সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে গান স্যালুট দেয়।

দাফনের আগে বেলা ৩টা ২ মিনিটে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে খালেদা জিয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তার জানাজায় দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও লাখ লাখ সাধারণ মানুষ অংশ নেন।

৮০ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার, ফুসফুস, হৃদযন্ত্র, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি লন্ডনে চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ হয়ে দেশে ফেরেন তিনি। কিন্তু গত ২৩ নভেম্বর রাতে আবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। টানা ৩৭ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর গতকাল তিনি মারা যান।

গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে এসে ৪১ বছর দলকে নেতৃত্ব দেন খালেদা জিয়া। ১৯৮২ সালে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন এবং ১৯৮৪ সালের কাউন্সিলের মাধ্যমে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপির চেয়ারপাসন নির্বাচিত হন। এর পর থেকে মৃত্যুর দিন পর্যন্ত দলের চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করেন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই নেত্রী। বিএনপি চেয়ারপারসনের দায়িত্বে থাকার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনবার দেশের নেতৃত্ব দেন খালেদা জিয়া। সামরিক স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনের পর খালেদা জিয়া হয়ে উঠেন এ দেশের গণমানুষের কাছে ‘আপসহীন নেত্রী’। তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হয়ে ইতিহাস গড়েন। 

আরও পড়ুন: শেষ হলো বেগম জিয়ার জানাজা, রাজধানীতে জনস্রোত

খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনের শুরু ছিল স্বামী জিয়াউর রহমানকে হারানোর বেদনা নিয়ে। ১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমানকে হত্যার পর সংকটে পড়ে বিএনপি। ঠিক সেই সময় সাধারণ গৃহবধূ থেকে খালেদা জিয়া রাজনীতিতে এসে বিএনপির হাল ধরেন। দীর্ঘ ৪ দশকের রাজনৈতিক জীবনে খালেদা জিয়াকে কখনো তার বিরোধী পক্ষকে আক্রমণ করে কথা বলতে দেখা যায়নি। এ নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, আমি কখনো কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে কথা বলি না।

এদিকে জাতীয় সংসদ ভবনের ভেতরের মাঠ, বাইরের অংশ এবং পুরো মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ছাড়িয়ে আশপাশের সব সড়ক, অলিগলি থেকে অসংখ্য মানুষ খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিয়েছেন। জানাজায় অংশগ্রহণের জন্য নারীদের জন্য রাখা হয় বিশেষ ব্যবস্থা। জানাজা পড়ান বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব আবদুল মালেক। আর সঞ্চালনা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

এর আগে পরিবারের পক্ষ থেকে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান প্রয়াতের জন্য সবার কাছে দোয়া চান। তিনি বলেন, ‘আমি মরহুমা বেগম খালেদা জিয়ার বড় সন্তান তারেক রহমান। আমি আজকে এখানে উপস্থিত ভাইয়েরা এবং বোনেরা, যারা উপস্থিত আছেন, মরহুমা বেগম খালেদা জিয়া জীবিত থাকাকালীন অবস্থায় যদি আপনাদের কারও কাছ থেকে কোনো ঋণ নিয়ে থাকেন, দয়া করে আমার সাথে যোগাযোগ করবেন। আমি সেটি পরিশোধের ব্যবস্থা করবো ইনশাআল্লাহ।’

তিনি বলেন, ‘একই সাথে উনি জীবিত থাকাকালীন অবস্থায় ওনার কোনো ব্যবহারে, ওনার কোনো কথায় যদি কেউ আঘাত পেয়ে থাকেন, তাহলে মরহুমার পক্ষ থেকে আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থী। দোয়া করবেন। আল্লাহ তাআলা যাতে উনাকে বেহেশত দান করেন।’

আরও পড়ুন: শিক্ষকতায় ফেরা হলো না বিশেষ সহকারীর, পদত্যাগপত্র গৃহীত অবসরের একদিন আগে

জানাজায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বাঁ পাশে দাঁড়ান তারেক রহমান, তারপরে এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং তারপরে দাঁড়ান নির্বাচন বিশেষজ্ঞ বদিউল আলম মজুমদার। আর প্রধান উপদেষ্টার ডান পাশে প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, তারপরে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান এবং তারপরে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীপ্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন।

প্রধান উপদেষ্টার পাশাপাশি তার সরকারের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, আদিলুর রহমান, ফাওজুল কবির খান, আ ফ ম খালিদ হোসেন, আলী ইমাম মজুমদার, সি আর আবরার, এম সাখাওয়াত হোসেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমকেও জানাজায় দেখা গেছে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ বিএনপির সর্বস্তরের নেতারকর্মীরা জানাজায় শরিক হোন। জানাজায় দেখা গেছে কবি ও তাত্ত্বিক ফরহাদ মজহারকে।

রাজনীতিকদের মধ্যে জামায়াত ইসলামীর মিয়া গোলাম পরওয়ার, শামীম সাঈদী, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, এনসিপির নাহিদ ইসলাম ও হাসনাত আবদুল্লাহ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মামুনুল হক উপস্থিত ছিলেন, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান এবং গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুরকে দেখা গেছে। ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা বিখ্যাত ইসলামী স্কলার আহমাদুল্লাহও বিএনপি নেত্রীর জানাজায় অংশ নেন।

আরও পড়ুন: পে-স্কেলের সুপারিশ জমা দেওয়ার ‘ডেডলাইন’ জানাল কমিশন

বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, পাকিস্তানের জাতীয় সংসদের স্পিকার সরদার আয়াজ সাবিক, ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডি এন ধুঙ্গেল, মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতির উচ্চ শিক্ষা, শ্রম ও দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী আলি হায়দার আহমেদ, নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বালা নন্দা শর্মা, শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিজিতা হেরাথ।

চীন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন মিশনের মোট ৩২ জন প্রতিনিধি ও প্রধানরা তাদের দেশের পক্ষে খালেদা জিয়াকে শ্রদ্ধা জানাতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে শেষ যাত্রায় অংশ নেন। 

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে দেশে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক চলছে, বুধবার ঘোষণা করা হয়েছে সাধারণ ছুটি। 

বুধবার সকালে এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে খালেদা জিয়ার কফিন নেওয়া হয় গুলশানে তার ছেলে তারেক রহমানের বাড়িতে। পরে জাতীয় পতাকা শোভিত লাশবাহী গাড়ি বুধবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে সংসদ ভবনের সামনে পৌঁছায়। গাড়িবহরে একটি বাসে করে সেখানে পৌঁছান খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান ও তার পরিবারের সদস্যরা।

আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশনের সদর দপ্তরে পুলিশের অভিযান
  • ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
২০২৫ সালে যাদের হারাল মাভাবিপ্রবি পরিবার
  • ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
দেশবাসীকে ঈসায়ী নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাল জামায়াত
  • ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
জামায়াত সবচেয়ে বেশি আসন পেলে প্রধানমন্ত্রী কি আপনি— জবাবে য…
  • ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
নোয়াখালীতে প্রকাশ্যে বড় ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করলেন ছোট ভাই
  • ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
এখন পর্যন্ত কোন দল কতটি আসন ছাড়ল?
  • ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫