জাতীয় গণগ্রন্থাগার

আসন ১৫০০, থাকবে পডকাস্ট-স্টুডিও, ৬শ কোটির গ্রন্থাগারটিতে আর কী থাকছে?

নিচের দুটি ফ্লোরে থাকবে অফিস কার্যক্রম, দুটি প্লাজার একটিতে কনভেনশনাল লাইব্রেরি এবং অপরটিতে হবে ই-লাইব্রেরি
নিচের দুটি ফ্লোরে থাকবে অফিস কার্যক্রম, দুটি প্লাজার একটিতে কনভেনশনাল লাইব্রেরি এবং অপরটিতে হবে ই-লাইব্রেরি  © সৌজন্যে পাওয়া

রাজধানী ঢাকার সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগার আধুনিকায়নে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে বহুতল মাল্টিডাইমেনশনাল কমপ্লেক্স। তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলা নির্মাণকাজ ২০২৭ সালের ডিসেম্বর নাগাদ শেষ করার পরিকল্পনা করছে গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর। নির্মাণকাজ শেষ হলে বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন গ্রন্থাগারটি ২০২৮ সালের জানুয়ারিতে কার্যক্রম শুরু করতে পারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কার্যক্রম শুরু হলে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, সুবিশাল পাঠকক্ষ এবং শিশু ও প্রতিবন্ধীবান্ধব গণগ্রন্থাগার পাবে রাজধানীবাসী।

গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর ও জাতীয় গণগ্রন্থাগার সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া নির্মাণকাজের প্রায় ৬০ ভাগ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। তবে দৃষ্টিনন্দন ও জটিল ডিজাইনের ফলে অত্যাধুনিক নির্মাণসামগ্রীর প্রয়োজনীয়তা থাকায় কাজ এগিয়েছে ধীরগতিতে। তারা বলছেন, কাজ শুরুর পর একটি সংশোধনীর মাধ্যমে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। তবে পুনরায় এর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৭ সালের ডিসেম্বর নাগাদ কাজ শেষ করতে চায় অধিদপ্তর।

আরও পড়ুন: যার ভয়ে সমুদ্রে আশ্রয় নিয়েছিল ব্রিটিশরা, সেই হাবিলদার রজব আলী নেই পাঠ্যপুস্তকে

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৫৪ সালে যাত্রা শুরু করা প্রথম সরকারি গণগ্রন্থাগারটি আধুনিকায়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয় ২০১৪ সালে। পরবর্তীতে প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে ২০১৯ সালে চূড়ান্ত করা হয় আর্কিটেকচারাল ডিজাইন। ২০২১ সালের মে মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) ৫২৪ কোটি ২৫ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করে প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।

169
কনভেনশনাল লাইব্রেরি ভবনের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ হয়েছে

নির্মাণকাজ শেষ না হলেও বিপুল অর্থ খরচ করে সরকারি গণগ্রন্থাগারটির পাঠ কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে। এজন্য আইইবি ভবনের দুটি ফ্লোরের বিপরীতে মাসে গুণতে হচ্ছে ১৬ লক্ষ ১৪ হাজার ৫১৪ টাকা। এ ছাড়া হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টারে অধিদপ্তরের কার্যক্রম পরিচালনায় বহন করতে হচ্ছে আরও ৬ লক্ষাধিক টাকা।

অধিদপ্তরের প্রিন্সিপাল লাইব্রেরিয়ান (উপপরিচালক) এএইচএম কামরুজ্জামান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, বাংলাদেশের ভূখণ্ডে প্রথম গণগ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার ১০০ বছর পরে ১৯৫৪ সালে সরকারি উদ্যোগে এই গ্রন্থাগারটি প্রতিষ্ঠা হয়। এ অঞ্চলে ১৮৫৪ সালে বেসরকারি উদ্যোগে একযোগে ৪টি পাবলিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠিত হয়। এগুলো হল- রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি, যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরি, বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরি এবং বগুড়ার উডবার্ন পাবলিক লাইব্রেরি। পরে ১৯৩০ পর্যন্ত আরও ১৬টি গণগ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হয়।

তিনি জানান, পাকিস্তান আমলে ১ হাজার ৪০টি বই নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সেন্ট্রাল পাবলিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ১৯৫৮ সালে বর্তমান ক্যাম্পাসে স্থানান্তর হয়। এরপর ১৯৮২ সালে এটি অধিদপ্তর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের অধীনে ৬৪টি জেলাসহ মোট ৭১টি গণগ্রন্থাগার রয়েছে।

বিপুল অর্থ ব্যয়েও বন্ধ নেই পাঠাগার
নির্মাণকাজ শুরুর আগে পুরনো ভবন অপসারণ ও স্থানান্তর করে গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর। বর্তমানে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন (আইইবি) ভবনে গ্রন্থাগার কার্যক্রম এবং হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের বিএসএল ভবনে অধিদপ্তরের কার্যক্রম চলছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্মাণকাজ শেষ না হলেও বিপুল অর্থ খরচ করে সরকারি গণগ্রন্থাগারটির পাঠ কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে। এজন্য আইইবি ভবনের দুটি ফ্লোরের বিপরীতে মাসে গুণতে হচ্ছে ১৬ লক্ষ ১৪ হাজার ৫১৪ টাকা। এ ছাড়া হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অধিদপ্তরের কার্যক্রম পরিচালনায় বহন করতে হচ্ছে আরও ৬ লক্ষাধিক টাকা। যদিও আগের প্রায় ৬৩ হাজার স্কয়ার ফিট ব্যবহারযোগ্য স্পেসের বিপরীতে আইইবি ভবনের ছোট দুটি ফ্লোরে বইপত্রের সংকুলান হচ্ছে না। স্বল্প আয়তনে পাঠকক্ষের কার্যক্রম চললেও ২ লক্ষাধিক বইপত্রের বড় একটি অংশকে সংরক্ষণ করতে হচ্ছে কার্টন বক্সে।

170
আইইবি ভবনের ১৩ তলায় চলছে জাতীয় গ্রন্থাগারটির কার্যক্রম

সুফিয়া কামাল গণগ্রন্থাগারের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে পাঠাগারটিতে ২ লক্ষেরও বেশি বইপত্র রয়েছে, যার অন্তত ৩ হাজার ৩৫৮টি দুষ্প্রাপ্য। এর মধ্যে তালপাতায় লেখা পাণ্ডুলিপিকে সবচেয়ে মূল্যবান মনে করছেন তারা। এগুলোর পাঠোদ্ধার সম্ভব হয়নি। এমনকি এত পুরনো যে হাতেও ধরা যায় না ঠিকঠাক। এ ছাড়া তুলট কাগজের কিছু বইপত্রও রয়েছে। গত অক্টোবরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গ্রন্থাগারটিতে মোট দুষ্প্রাপ্য সংগ্রহের মধ্যে বই রয়েছে ২ হাজার ৮২০টি। এর মাঝে উর্দু ভাষার বই রয়েছে ১০৬টি। এ ছাড়া আরও ৪৫৯টি পাণ্ডুলিপি রয়েছে, যা দুষ্প্রাপ্য। এ ছাড়া প্রতিদিন দৈনিক ১৩টি পত্রিকা এখানে আসে, যার ৮টি বাংলা ভাষার। এর বাইরে ১১টি সাময়িকী ক্রয় এবং ৪টি সৌজন্যে পাওয়া যায়। বর্তমানে গ্রন্থাগারটিতে মোট সদস্য রয়েছেন ১ হাজার ১৬৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৬৭১, নারী ১৫৯ এবং শিশু রয়েছেন ৩৩৬ জন। সদস্যরা পাঠাগার থেকে বইপত্র বাড়িতে নিয়ে যেতে পারেন।

২০২১ সালে প্রকল্প পাস হওয়ার সময় এর মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে গত বছর প্রকল্পে কিছু পরিবর্তন এনে এর মেয়াদ ১ বছর বাড়িয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে ভৌত অবকাঠামো নির্মাণকাজের ৬০ শতাংশ শেষ হলেও গণপূর্ত বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী আরও ২ বছর প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করতে যাচ্ছে অধিদপ্তর। সুপারিশটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এটি হলে ২০২৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হবে।

আইইবি ভবনের ভাড়ায় চালিত গণগ্রন্থাগারটির পাঠকক্ষে গিয়ে দেখা গেছে, কক্ষটিতে প্রায় ৫০-৬০ জনের বসার সুযোগ রয়েছে। চারপাশে বুকশেল্ফে বইপত্র সজ্জিত রাখা হয়েছে। তবে চারপাশেই অসংখ্য কার্টন বক্সে সংরক্ষণ করা হচ্ছে অনেকগুলো বই। তবে বিপুল অর্থে ভাড়ায় চালিত গ্রন্থাগারটিতে বর্তমানে পাঠক উপস্থিতি তেমন হয় না। পরিসংখ্যান অনুযাযী, গত সেপ্টেম্বর মাসে মাত্র ৪১২ জন পাঠক উপস্থিত হয়েছিলেন। অক্টোবরে এ সংখ্যা কিছুটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৫৮ জন। অথচ শাহবাগ ক্যাম্পাসে গ্রন্থাগারটিতে মোট আসন সংখ্যা-ই ছিল প্রায় সাড়ে ৬শ। পাঠকের উপচে পড়া ভীড় সামলাতেও হিমশিম খেতে হত প্রতিষ্ঠানটিকে। সেখানে এখানে মাসে ৬০০ পাঠক উপস্থিতি ঠিকমত হচ্ছে না।

171
বেজমেন্ট ও গ্রাউন্ড ফ্লোরের কাজ শেষ হয়েছে, প্রথম দুটি ফ্লোরে চলবে অধিদপ্তর ও গ্রন্থাগারের দাপ্তরিক কাজ

কর্মকর্তারা বলছেন, বিল্ডিং একমোডেশনের ক্রাইসিসে ভুগছে সরকারি প্রতিষ্ঠানটি। অনেক টাকা দিয়ে বাধ্য হয়ে দুটি ভাগে ভাড়া থাকতে হচ্ছে। এত বড় জায়গা ঢাকা শহরে একসঙ্গে পাওয়া যাচ্ছে না। আগে লাইব্রেরির মোট আয়তন ছিল সাড়ে ৪ একর। আর ব্যবহারযোগ্য স্পেস ছিল প্রায় ৬৩ হাজার স্কয়ার ফিট। ওই সময়ে পাঠকক্ষে বসার ব্যবস্থা ছিল ৬০০ আসনের। একই সময়ে এর চেয়েও বেশি পাঠক থাকত। এ ছাড়া সংরক্ষণ সংকটের পাশাপাশি চাহিদা অনুযায়ী বইও পাঠককে দেওয়া যাচ্ছে না।

যা থাকছে বিশ্বমানের গ্রন্থাগারটিতে
গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের উন্নয়ন শাখার দায়িত্বে থাকা সিনিয়র লাইব্রেরিয়ান (সিনিয়র সহকারী পরিচালক) খালিদ মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, নির্মাণাধীন ভবনের ডিজাইনটি খুবই এক্সেপশনাল। এর মাটির নিচের বিশাল আয়তনের দুটি বেজমেন্ট থাকবে। এখানে থাকবে পার্কিং এবং তিনটি অডিটোরিয়াম। এর একটি ৫০০ আসন বিশিষ্ট, অপরটি ৩৩৪ আসন বিশিষ্ট। আরও থাকবে তিনটি সেমিনার হল। দুটি বেজমেন্টের আয়তন গড়ে প্রায় ৬০ হাজার স্কয়ার মিটার। এরপর গ্রাউন্ড ফ্লোর এবং প্রথম তলায় গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর এবং সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের অফিস স্পেস থাকবে। এর উপর থাকবে প্লাজা লেভেল।

আরও পড়ুন: বিনষ্টের ঝুঁকিতে আলিয়া মাদ্রাসা গ্রন্থাগারের আড়াইশ বছরের দুষ্প্রাপ্য বই

প্লাজা লেভেলের উপর দুই পাশে ৯ তলা পর্যন্ত দুটি প্লাজা থাকবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এর একপাশে কনভেনশনাল লাইব্রেরি, আর উত্তর পাশে স্টিলের স্ট্রাকচারটি হবে ই-লাইব্রেরি। এটি বেশ জটিল প্রকৃতির। এটি পুরোপুরি স্টিলের থাকবে এবং কাঁচ দেওয়া থাকবে। নামাজ, ইনডোর গেমসসহ আইটি ফ্যাসিলিটিজের সবকিছু এখানে থাকবে।

167
থাকবে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন পাঠকক্ষ

ই-লাইব্রেরিটিতে হাইস্পিড ইন্টারনেট, কম্পিউটার ফ্যাসিলিটিজের সাথে থ্রিডি, পডকাস্ট, শিশু এবং দৃষ্টি, শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধীদের জন্য আধুনিক ডিভাইস থাকবে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর লাইব্রেরিতে প্রতিবন্ধীদের জন্য যেসব সুবিধা থাকে, তার বড় একটি অংশই এখানে থাকবে। এ ছাড়া ডে-কেয়ার সেন্টার, ইনডোর গেমস এবং জিমনেশিয়াম থাকবে।

খালিদ মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ বলেন, জটিল ডিজাইন ও স্ট্রাকচারের কারণে প্রকল্প শুরু করতে দেরি হয়েছে। কিছু প্রযুক্তির টেন্ডার তখন করতে পারিনি। এ ছাড়া স্টিলের স্ট্রাকচারটা দেশে নতুন হওয়ায় এর স্টাডি নিয়ে জটিলতা ছিল। আমেরিকান একটি প্রতিষ্ঠান এটির রিভিউ করছে। স্টিল স্থাপনের জন্য যে ক্রেন প্রয়োজন, সেটিও বাংলাদেশে পাওয়া যাচ্ছে না। সব কিছু মিলিয়ে দেরি হচ্ছে। আমরা আশা করছি, নভেম্বরের মধ্যে আমদানিনির্ভর কাজ শেষ করে এক বছরের মধ্যে অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষ করতে পারব।

ব্যয়বহুল ও দৃষ্টিনন্দন এই ভবনের সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, পাবলিক লাইব্রেরিকে নীরব এলাকা হিসেবে প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি জনসমাগমের গুরুত্বপূর্ণ ক্যাম্পাস হিসেবে নির্মাণ করা হচ্ছে। অর্থাৎ দুটির মিথস্ক্রিয়া থাকবে এখানে। ভবনটি হয়ে গেলে পাঠকক্ষে একসাথে ১৫০০ মানুষ পড়তে পারবেন। এর বাইরেও অন্যান্য স্পেসে পড়তে পারবেন। বই চুরি রোধে পুরো লাইব্রেরিটিকে ইউএইচএফ আরএফআইডি টেকনোলজির আওতায় নিয়ে আসা হবে। বই ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে সিগন্যাল পাওয়া যাবে। আর ম্যাক্সিমাম সুযোগ-সুবিধা থাকবে রেজিস্টার্ড সদস্যদের ক্ষেত্রে। শিশুদের সাথে লাইব্রেরির সম্পর্ক বাড়াতে ডিসপ্লে মনিটর রাখব। প্রতিটি পাঠকক্ষে ছোট ছোট সাউন্ডপ্রুফ ডিসকাশন রুম থাকবে।

168
রাখা হচ্ছে কয়েকটি সেমিনার হল ও অডিটোরিয়াম

তিনি বলেন, ই-লাইব্রেরিটিতে হাইস্পিড ইন্টারনেট, কম্পিউটার ফ্যাসিলিটিজের সাথে থ্রিডি, পডকাস্ট, শিশু এবং দৃষ্টি, শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধীদের জন্য আধুনিক ডিভাইস থাকবে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর লাইব্রেরিতে প্রতিবন্ধীদের জন্য যেসব সুবিধা থাকে, তার বড় একটি অংশই এখানে থাকবে। এ ছাড়া ডে-কেয়ার সেন্টার, ইনডোর গেমস এবং জিমনেশিয়াম থাকবে।

এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে টেম্পারেচার ম্যানেজমেন্ট করে দুষ্প্রাপ বই এবং হস্তলিপিগুলো সংরক্ষণ করছে, সে সুযোগ কিন্তু বর্তমানে আমাদের কাছে নাই। তালপাতাসহ দুষ্প্রাপ্য যে গ্রন্থগুলো আছে, এসব সংরক্ষণের জন্য আমরা ন্যাশনাল আর্কাইভের সাথে কথা বলছি— মনীষ চাকমা, ডিজি, গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর

এ ছাড়া কিউআর কোড ব্যবহার করে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এটি ইন্টারনেট ছাড়া ব্যবহার করা যাবে। ভার্চুয়াল লাইব্রেরি ট্যুরও করতে পারবেন। গ্যালারি স্পেস থাকবে, যেখানে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যাবে। এ ছাড়া ৬টি রুম থাকবে, যেগুলো পডকাস্ট অ্যান্ড স্টুডিও রুম হিসেবে ব্যবহার হবে। হাই কোয়ালিটি সম্পন্ন স্টুডিও ভাড়া নিয়ে যে কেউ ব্যবহার করতে পারবে। আগত পাঠক ও দর্শনার্থীদের জন্য ম্যাপিং পদ্ধতি থাকবে, যা কিউআর কোড ব্যবহার করে পাওয়া যাবে। থাকবে স্মার্ট কার্ডের ব্যবস্থাও। সবকিছু হবে ই-পেমেন্ট পদ্ধতিতে।

আরও পড়ুন: হিউম্যান বডিতে আগ্রহ থেকে মেডিকেলে চান্স পাওয়া তৌকির এবার বিসিএসে প্রথম

নির্মাণকাজের অগ্রগতি জানতে চাইলে গণপূর্ত অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে সিনিয়র লাইব্রেরিয়ান খালিদ মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ বলেন, ২০২১ সালে প্রকল্প পাস হওয়ার সময় এর মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে গত বছর প্রকল্পে কিছু পরিবর্তন এনে এর মেয়াদ ১ বছর বাড়িয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে ভৌত অবকাঠামো নির্মাণকাজের ৬০ শতাংশ শেষ হলেও গণপূর্ত বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী আরও ২ বছর প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করতে যাচ্ছি। সুপারিশটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এটি হলে ২০২৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হবে। বর্তমানে এক পাশের ভবন প্রায় পুরোটা সম্পন্ন হয়ে গেলেও পুরো কাজ শেষ হওয়ার পর ২০২৮ সালের জানুয়ারিতে আমরা ওখানে যেতে পারব।

174
নির্মাণের অপেক্ষায় ই-লাইব্রেরি ভবন

প্রকল্পের ব্যয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০২১ সালে এর বাজেট ছিল ৫২৪ কোটি ২৫ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা। গত বছরের সংশোধনীতে গণপূর্ত অধিদপ্তরের চাহিদা মোতাবেক বাজেট বাড়িয়ে ৫৬১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকায় নিয়ে আসা হয়। এ বছর দ্বিতীয় সংশোধনীতে স্ট্রাকচারাল ডিজাইন কিছুটা পরিবর্তন করা হয়েছে। নতুন করে ব্যয় প্রাক্কলণ করা হয়েছে, তাতে কিছু টাকা বাড়বে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মনীষ চাকমা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন একটি গ্রন্থাগার নির্মাণ করছি, যেটি বিশ্বমানের একটি গ্রন্থাগার হবে। গ্রন্থাগারের পাশাপাশি কালচারাল হাব হিসেবেও এটি ব্যবহার হবে। আগে বছরে দুটি ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল হত। সেজন্য ডিজিটাল সুযোগ-সুবিধা নিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে।

বর্তমানে এক পাশের ভবন প্রায় পুরোটা সম্পন্ন হয়ে গেলেও পুরো কাজ শেষ হওয়ার পর ২০২৮ সালের জানুয়ারিতে আমরা ওখানে যেতে পারব— খালিদ মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ, সিনিয়র সহকারী লাইব্রেরিয়ান, গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর

দুষ্প্রাপ্য বই সংরক্ষণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে টেম্পারেচার ম্যানেজমেন্ট করে দুষ্প্রাপ বই এবং হস্তলিপিগুলো সংরক্ষণ করছে, সে সুযোগ কিন্তু বর্তমানে আমাদের কাছে নাই। তালপাতাসহ দুষ্প্রাপ্য যে গ্রন্থগুলো আছে, এসব সংরক্ষণের জন্য আমরা ন্যাশনাল আর্কাইভের সাথে কথা বলছি। যেহেতু আর্কাইভের সে টেকনোলজি আছে। তাদের কাছ থেকে আমরা কিছু অভিজ্ঞতাও নিব, আবার যেগুলো খুব সেনসিটিভ, এবং ভঙ্গুর অবস্থায় আছে, সেগুলো তাদের ওখানে সংরক্ষণের জন্য আমরা কথাবার্তা চালিয়ে নিচ্ছি।

আরও পড়ুন: অনুমোদনের অপেক্ষায় ১২০০ কোটি টাকার মাস্টারপ্ল্যান, বদলে যাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজের চিত্র

তিনি আরও বলেন,  বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে ই-ভার্সন সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ৫ আগস্টের পর আমরা দায়িত্ব পেয়ে নতুন একটা উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। সারাদেশের ৩১টি বেসরকারি লাইব্রেরি থেকে আরও ১০৭টি দুষ্প্রাপ্য বই আমরা সংগ্রহ করে স্ক্যান করছি। প্রায় ৫২টি পিডিএফ আকারে নেওয়া হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ