৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি

স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় সুপারিশপ্রাপ্তরা এমপিও পেলেও আটকা কারিগরি শিক্ষকরা

বাংলাদেশ সরকারের লোগো
বাংলাদেশ সরকারের লোগো  © সংগৃহীত ও সম্পাদিত

দেশের বেসরকারি শিক্ষা খাতে দীর্ঘদিনের শিক্ষক সংকট নিরসনে ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বড় পরিসরে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। গণবিজ্ঞপ্তিতে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৪১ হাজারের বেশি প্রার্থীকে নিয়োগ সুপারিশ করা হয়। সুপারিশের দীর্ঘ সময় প স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষকদের এমপিও হলেও এখনো এমপিওভুক্ত হতে পারেননি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুপারিশপ্রাপ্ত বিপুলসংখ্যক শিক্ষক। ফলে মাসের পর মাস বেতন-ভাতা না পেয়ে চরম আর্থিক অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তারা।

জানা যায়, দেশের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি ও ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোট ১ লাখ ৮২২টি শূন্য পদের বিপরীতে ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। তবে যোগ্য প্রার্থী না থাকায় ৪১ হাজার ৬২৬ জন নিয়োগ সুপারিশ করা হয়। সুপারিশপ্রাপ্তদের মধ্যে অধিকাংশ শিক্ষক এমপিওভুক্ত হতে পারলেও কারিগরির শিক্ষকরা পড়েছেন বিপাকে।

আরও পড়ুন: সাত কলেজের প্রথম বর্ষের ওরিয়েন্টেশন ১ জানুয়ারি

শিক্ষকদের অভিযোগ, নিয়োগে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পরও এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়ায় বিদ্যমান জটিলতা, দীর্ঘসূত্রতার কারণে তারা চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। সুপারিশ পাওয়া সত্ত্বেও এমপিওভুক্তি না হওয়ায় অনেক শিক্ষককে মাসের পর মাস বেতন ছাড়াই পাঠদান করতে হচ্ছে। এর ফলে যোগ্য ও অভিজ্ঞ শিক্ষকরা কর্মস্পৃহা হারাচ্ছেন, যা কারিগরি শিক্ষার গুণগত মান ও ধারাবাহিকতাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করার আশঙ্কা তৈরি করেছে।

শিক্ষক এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়ায় অধিদপ্তর থেকে মোট ৪০০টি ফাইল উত্থাপন করা হয়েছে। এই ফাইলগুলো যাচাই–বাছাই করে দুইটি পৃথক লটে শিক্ষক এমপিওভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ২৮০টি ফাইল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি খুব শিগগিরই সম্পন্ন হবে।

মাকসুদুর রহমান, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পিআইইউ)

এছাড়া এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে এখনও এনালগ পদ্ধতি থাকায় অর্থাৎ ডিজিটাল পদ্ধতি কার্যকর না হওয়ায় আবেদন, যাচাই ও অনুমোদনের প্রতিটি ধাপে অপ্রয়োজনীয় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যাগুলো অব্যাহত থাকায় শিক্ষকরা মানসিক চাপ ও প্রশাসনিক জটিলতার শিকার হচ্ছেন। এ অবস্থায় এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজড করাসহ দ্রুত এমপিওভুক্তির দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা।

মামুন নামের সুপারিশপ্রাপ্ত এক শিক্ষক বলেন, ‘সুপারিশ পাওয়ার দীর্ঘ সময় পার হলেও এখনো আমার এমপিও কার্যকর হয়নি। অথচ একই সময়ে সুপারিশপ্রাপ্ত অন্য শিক্ষকরা নিয়মিত বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। এতে করে স্পষ্টতই বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে আমাদের। এ ধরনের পরিস্থিতি একজন শিক্ষক হিসেবে আমাদের জন্য চরম হতাশাজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। তিনি আরও বলেন, সরকারের কাছে আমাদের বিনীত অনুরোধ; যেন এই বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে দ্রুত আমাদের এমপিওভুক্তি নিশ্চিত করা হয় এবং ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হয়।’

তবে এ বিষয়ে আশার কথা জানিয়েছে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এমপিও সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে কাজ চলছে এবং খুব শিগগিরই সুপারিশপ্রাপ্ত কারিগরি শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। এতে দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটবে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট মহলের।

অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কারিগরি শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির লক্ষ্যে মোট ৪০০টি ফাইল অর্থাৎ শিক্ষককে এমপিও করতে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রস্তুত ও উপস্থাপন করা হয়েছে। এসব ফাইল যাচাই-বাছাই শেষে দুটি পৃথক লটে এমপিও কার্যক্রম সম্পন্ন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ২৮০টি ফাইল অনুমোদনের জন্য পাস করা হবে এবং পরবর্তী ধাপে অবশিষ্ট ১২০টি ফাইল অনুমোদনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।

আরও পড়ুন: হাদির ওপর হামলাকারী দুই সন্দেহভাজনের পাসপোর্ট ব্লক, অবস্থান শনাক্ত হয়নি

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পিআইইউ) মাকসুদুর রহমান বলেন, শিক্ষক এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়ায় অধিদপ্তর থেকে মোট ৪০০টি ফাইল উত্থাপন করা হয়েছে। এই ফাইলগুলো যাচাই–বাছাই করে দুইটি পৃথক লটে শিক্ষক এমপিওভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ২৮০টি ফাইল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি খুব শিগগিরই সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ছুটিতে থাকায় এসব ফাইলে স্বাক্ষর করা সম্ভব হয়নি। তবে তিনি দায়িত্বে ফিরলেই ২৮০টি ফাইলে স্বাক্ষর করবেন এবং এর মাধ্যমে শিক্ষকরা দ্রুত এমপিও সুবিধার আওতায় আসবেন। এরপর পরবর্তী ধাপে বাকি ফাইলগুলোর বিষয়েও প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।

এদিকে এমপিওভুক্তির আশায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিপুল সংখ্যক আবেদন জমা পড়লেও নির্ধারিত নীতিমালা ও যোগ্যতা পূরণ করতে না পারায় অনেক আবেদন বাতিল হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এমপিও পাওয়ার জন্য যেসব শর্ত ও অবকাঠামোগত যোগ্যতা থাকা আবশ্যক, সেসব অনেক প্রতিষ্ঠানে বিদ্যমান নেই। ফলে নির্ধারিত মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত হওয়ার কোনো সুযোগ থাকছে না।

মাকসুদুর রহমান জানান, প্রাথমিকভাবে উত্থাপিত এই ৪০০টি ফাইলের বাইরে থাকা অন্যান্য আবেদনগুলোর অবস্থা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। অনেক প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী নেই, আবার কোথাও শিক্ষার্থীদের পাসের হার সন্তোষজনক নয়। এমন বাস্তবতায় এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করার সুযোগ বর্তমানে নেই বলে তিনি জানান। এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে নির্ধারিত মানদণ্ড ও শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য, সে কারণেই যোগ্যতা ও সক্ষমতার ভিত্তিতেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন: ৪৩তম বিসিএসের নন-ক্যাডার ৮৫০১ পদ সংরক্ষণে নির্দেশ হাইকোর্টের

প্রসঙ্গত, বেসরকারি স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানে ১ লাখ ৮২২টি শূন্য পদের বিপরীতে ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। এতে আবেদন করেন ৫৭ হাজার ৮৪০ টি আবেদন জন। প্রেরিত শূন্যপদ বাতিলের আবেদনের প্রেক্ষিতে মোট ৭৮০টি পদের চাহিদা বাতিল করা হয়। এছাড়া ১২৫ জন প্রার্থী তাদের নিবন্ধন সনদে উল্লিখিত পদ বিষয় ও প্রতিষ্ঠান ধরণ বহির্ভূত পদে আবেদন করায় তাদের আবেদন বাতিল করা হয়। সবমিলিয়ে ৪১ হাজার ৬২৭ জনকে নিয়োগ সুপারিশ করে এনটিআরসিএ। আবেদন করেও বাদ পড়ে যান ১৬ হাজার ২১৩ জন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence