পরপর তিনবার ক্যাডার, ৪৫তম বিসিএসের পছন্দ তালিকায় মাত্র দুটি ক্যাডার রেখেছিলেন আওসাফুল
- সুজন চন্দ্র দাস
- প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৪৬ PM , আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:২১ PM
পরিশ্রম, ধৈর্য আর আত্মবিশ্বাসের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে পরপর তিনটি বিসিএসে ক্যাডার হয়েছেন মো. আওসাফুল ইসলাম নাহিদ। সর্বশেষ ৪৫তম বিসিএসে তিনি কাঙ্ক্ষিত প্রশাসন ক্যাডারে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন, যা তার দীর্ঘ প্রস্তুতি ও সংগ্রামের চূড়ান্ত স্বীকৃতি।
এর আগে ৪৩তম বিসিএসে কর ক্যাডারে এবং ৪৪তম বিসিএসে পরিবার পরিকল্পনা ক্যাডার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হন তিনি। পরপর তিন বিসিএসে তিনবার ক্যাডার হওয়ার এ অর্জন বিসিএস ইতিহাসে নিঃসন্দেহে বিরল ও অনুপ্রেরণাদায়ক।
জানা গেছে, গ্রাম থেকেই তার শিক্ষা জীবন শুরু। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার দশদোনা গ্রামে শৈশব কেটেছে তার। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সেখানেই সম্পন্ন করেন। দীর্ঘ এ যাত্রায় পরিবারের সমর্থন ছিল তাঁর সবচেয়ে বড় শক্তি।
আরও পড়ুন: মায়ের পথে মেডিকেলে দ্বিতীয় হওয়া নাবিহা, বললেন— ‘আমার কোনো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই’
৪৫তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে দ্বিতীয় স্থান অর্জনের অনুভূতি প্রসঙ্গে মো. আওসাফুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘এতদিন যে লক্ষ্যের দিকে ছুটে চলেছি, মনে হয়েছে সেই যাত্রার সমাপ্তি ঘটেছে। এটা আমার দীর্ঘ সংগ্রামের চূড়ান্ত বিজয়। তবে তার কাছে সবচেয়ে আবেগঘন মুহূর্ত ছিল ৪৩তম বিসিএসে প্রথমবার ক্যাডার হওয়ার অনুভূতি। প্রথম ক্যাডার হওয়ার আনন্দটাই সবচেয়ে গভীর।
পছন্দের বিষয়ে নাহিদ জানান, ৪৩তম বিসিএসে তার প্রথম পছন্দ ছিল বিসিএস পুলিশ, কর ক্যাডার ছিল চতুর্থ পছন্দ। ৪৪তম বিসিএসে প্রশাসন ছিল প্রথম পছন্দ। আর ৪৫তম বিসিএসে কেবল দুটি পছন্দই রেখেছিলেন প্রশাসন ও পুলিশ।

প্রস্তুতির কৌশল সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রিলিমিনারিতে মুখস্থ নয়, বারবার পড়ার ওপর জোর দিয়েছেন। লিখিত পরীক্ষায় যেটা খাতায় লিখতে পারবেন না, সেটা নোট করতেন না। আর ভাইভায় পরিস্থিতি যেমনই হোক, হাসিমুখে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করতেন। ৪৩তম ও ৪৪তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার সময় তিনি বেকার ছিলেন। চাকরিতে যোগ দেন পরীক্ষার পর। তবে ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা দেন চাকরিরত অবস্থায়। এর ঠিক এক মাস আগে ৪৩তম বিসিএসে কর ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ায় মানসিকভাবে ছিলেন অনেকটাই চাপমুক্ত।
তিনি আরও বলেন, ‘জীবনের এ দীর্ঘ যাত্রায় হতাশা এসেছে বারবার। কখনো মনে হয়েছে আমি কেউ নই। নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার তাগিদ থেকেই বারবার ফিরে এসেছেন পড়ার টেবিলে। সেই ভাবনা থেকেই তার গ্রুপের নাম রেখেছিলেন BCS Identity। ডিপ্রেশনে পড়ে অনেক সময় ছোট গ্রেডের চাকরিতেও আবেদন করেছেন। আবার কখনো পড়ালেখা ছেড়েও দিয়েছেন। কিন্তু প্রতিবারই নিজেকে বুঝিয়েছেন—সংগ্রাম থামালে অস্তিত্বটাই হারিয়ে যাবে। নতুন বিসিএস প্রত্যাশীদের উদ্দেশে তার পরামর্শ যখনই মনে হবে আমাকে দিয়ে কিছু হবে না, ঠিক তখনই পরিশ্রম আরও বাড়িয়ে দিতে হবে। রাঙা প্রভাত তখনই সবচেয়ে কাছে থাকে। ’
প্রসঙ্গত, মো. আওসাফুল ইসলাম নাহিদ, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তার বাবা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা। আর মা গৃহিণী। নাহিদের দুই ভাই ও তিন বোন।