‘ফলাফল নয়, দক্ষতাই আসল—জিপিএ ৫ না পেলেও পাবেন স্কলারশিপ’
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ০৫:৩১ PM , আপডেট: ২১ আগস্ট ২০২৫, ১০:০৪ AM
আজ প্রকাশিত হয়েছে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার ফলাফল। এবারে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা অন্যান্য বছরের তুলনায় কম। ভালো ফলের দৌড়ে সামান্য পিছিয়ে পড়া বহু শিক্ষার্থী মনে করছেন—এই সামান্য না পাওয়াই হয়তো তাদের স্বপ্নভঙ্গের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। উচ্চতর শিক্ষায়, বিশেষ করে মেডিকেল কিংবা বিদেশে উচ্চশিক্ষার আশায় যারা বুক বেঁধে রেখেছিলেন, তারা এখন অনেকটাই অনিশ্চয়তার মধ্যে।
কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কিছু। কেবল জিপিএ ৫-ই সাফল্যের একমাত্র মানদণ্ড নয়—এমন নজিরও এখন স্পষ্টভাবে সামনে আসছে। কুষ্টিয়ার আফরিন সুলতানা তেমনই এক উদাহরণ। এসএসসিতে তিনি জিপিএ পেয়েছিলেন মাত্র ৩.৮০। সেই ফলাফলের পরও থেমে যাননি, বরং যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টলেডোতে পেয়েছেন স্কলারশিপে উচ্চশিক্ষার সুযোগ।
শুধু পরীক্ষার নম্বর নয়, বরং একাগ্রতা, আত্মবিশ্বাস, পরিকল্পনা এবং যথাযথ প্রস্তুতির মাধ্যমে কীভাবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেকে প্রমাণ করা যায় আফরিন সেটি করে দেখিয়েছেন।
মাধ্যমিক পর্যায়ে কাঙ্ক্ষিত ফল না পাওয়ায় শুরুতে বেশ ভেঙে পড়েছিলেন আফরিন। সমাজের নানা কটাক্ষ, করুণার দৃষ্টি ও আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলার আশঙ্কা তাকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছিল। তবে এই হতাশার মধ্যেই তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন আত্মবিশ্লেষণের একটি সুযোগ। সেই অভিজ্ঞতাই পরিণত হয় তার প্রস্তুতির ভিত্তি হিসেবে।
এইচএসসি শেষ করেই আফরিন দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষার কথা ভাবতে শুরু করেন। ধাপে ধাপে খোঁজ নিতে থাকেন বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি প্রক্রিয়া, স্কলারশিপের ধরন ও আবেদনপত্র তৈরির কৌশল সম্পর্কে। বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে হলে কেবল ভালো রেজাল্ট নয়, দরকার হয় একটি শক্তিশালী প্রোফাইল। আফরিন তা-ই করেছেন। স্কলারশিপের আবেদন করতে গিয়ে তিনি প্রস্তুত করেন আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র। এর মধ্যে ছিল সুনির্দিষ্ট ও পর্যালোচনামূলক সুপারিশপত্র (Recommendation Letter), আত্মজীবনীভিত্তিক এবং ভবিষ্যৎমুখী দৃষ্টিভঙ্গিতে লেখা ব্যক্তিগত প্রবন্ধ (Personal Essay), এবং কার্যক্রমভিত্তিক সহশিক্ষা প্রোফাইল (Extracurricular Profile)।
আফরিন জানান, নিজের আবেদনপত্রে তিনি তার ফলাফল গোপন করেননি। বরং সেখানে খোলাখুলিভাবে তুলে ধরেন, কীভাবে এসএসসিতে কাঙ্ক্ষিত ফল না পাওয়ার অভিজ্ঞতা তাকে নতুনভাবে নিজের দুর্বলতা বুঝতে ও মোকাবিলা করতে শিখিয়েছে। তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত প্রবন্ধে আমি লিখেছিলাম, কীভাবে ব্যর্থতা আমাকে আত্মবিশ্লেষণের সুযোগ দিয়েছে। কীভাবে এই অভিজ্ঞতা আমাকে আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করেছে। আমি বোঝাতে চেয়েছিলাম ব্যর্থতা মানেই থেমে যাওয়া নয়।’
আন্তর্জাতিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আবেদনকারীর একাডেমিক ফলাফলের পাশাপাশি তার নেতৃত্বগুণ, সামাজিক সচেতনতা, সৃজনশীলতা, এবং লক্ষ্যপূরণে সক্ষমতা বিবেচনায় নেওয়া হয়। ইউনিভার্সিটি অব টলেডোর স্কলারশিপ কমিটি আফরিনের আবেদনপত্রে এসব বৈশিষ্ট্য খুঁজে পায় বলেই তাকে পুরোপুরি অর্থায়নে ভর্তি নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায়। বর্তমানে আফরিন যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব টলেডোতে ফুল-ফান্ডেড স্কলারশিপে পড়াশোনা করছেন। শুধুমাত্র নিজের প্রচেষ্টায়, ইচ্ছা ও আত্মবিশ্বাসের জোরে তিনি অর্জন করেছেন এই সুযোগ।
তিনি বলেন, ফল ভালো হলে তা আনন্দের, কিন্তু খারাপ হলেও জীবন থেমে যায় না। নিজেকে বিশ্বাস করতে হবে, নিজের ভুল বোঝার এবং সেখানে কাজ করার সাহস থাকতে হবে। ফলাফল নয়, দক্ষতাই আসল—জিপিএ ৫ না পেলেও স্কলারশিপ পাওয়া যায়। তাই দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার মধ্যে থেকেই ভবিষ্যতের শক্তি তৈরি হয়।