ফরম পূরণের ফি বৃদ্ধি, সরকারি কলেজেই গুনতে হচ্ছে ৮ হাজার টাকার বেশি
- আরফান আলী
- প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২৫, ০৯:০৭ PM , আপডেট: ৩১ আগস্ট ২০২৫, ০১:৫৯ PM
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি কলেজগুলোয় স্নাতক (অনার্স) দ্বিতীয় বর্ষের ফরম পূরণ এখন শিক্ষার্থীদের জন্য ‘কষ্টকর’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ফরম পূরণের ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় শিক্ষার্থীদের খরচ একলাফে কয়েক হাজার টাকা বেড়ে গেছে। ফলে সরকারি কলেজে পড়াশোনা করেও শিক্ষার্থীদের গুনতে হচ্ছে ৮ হাজার থেকে শুরু করে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। শিক্ষার্থীরা বলছেন, পর্যাপ্ত একাডেমিক সুবিধা না থাকা সত্ত্বেও এভাবে অতিরিক্ত টাকা আদায় অযৌক্তিক এবং পরিবারের জন্য এক ধরনের ‘অসহনীয় বোঝা’। তারা ফি কমানোর দাবি জানিয়েছেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ ফরম পূরণের ফি বৃদ্ধি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, এবার প্রতি বিষয়ে অতিরিক্ত ১০০ টাকা ফি দিতে হবে শিক্ষার্থীদের। ফলে গতবারের তুলনায় মোট ফরম পূরণের খরচ বেড়েছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। এ ছাড়া সি প্রমোটেড শিক্ষার্থীদের জন্য এবার নির্ধারিত ফির সঙ্গে অতিরিক্ত ১ হাজার ৫০০ টাকা দিতে হবে। অন্যদিকে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে এক বা একাধিক বিষয়ে অকৃতকার্য (এফ গ্রেডপ্রাপ্ত) শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ৬ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ফি বৃদ্ধির প্রভাব সরাসরি পড়েছে কলেজ পর্যায়ে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত শেরপুর সরকারি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ফরম পূরণের এক নোটিশে দেখা যায়, কলা ও বাণিজ্য বিভাগের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের (বাংলা, ইংরেজি, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, ইসলাম শিক্ষা, হিসাববিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা) ফরম পূরণ ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার ৩৩০ টাকা, অনিয়মিতদের জন্য ৬ হাজার ৯৩০ টাকা।
আরও পড়ুন: একাদশ ভর্তির দ্বিতীয় ধাপের ফল প্রকাশ, দেখা যাবে যেভাবে
বিজ্ঞান বিভাগের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের (পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, প্রাণিবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা ও গণিত) ফি ৭ হাজার ৫৩০ টাকা, অনিয়মিতদের ক্ষেত্রে ৮ হাজার ১৩০ টাকা। তবে রসায়ন বিভাগের ফি সবচেয়ে বেশি—নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ৭ হাজার ৮২০ টাকা, আর অনিয়মিতদের ৮ হাজার ৪২০ টাকা।
এ ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সি প্রমোটেড শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এই ফির সঙ্গে অতিরিক্ত ১ হাজার ৫০০ টাকা যোগ হবে। আর ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ‘এফ’ গ্রেডপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ৬ হাজার টাকা দিতে হবে। ফলে এ শিক্ষাবর্ষের অনেক শিক্ষার্থীর ফরম পূরণের খরচ ৮ হাজার থেকে ১৪ হাজার দাঁড়াচ্ছে।
বিগত বছরের ফরম পূরণের নোটিশ ঘেঁটে দেখা যায়, এবার ফরম পূরণ ১ হাজার ১০০ টাকা এবং সেশন ফি ৬৭৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ফি বাড়ানোয় সরকারি কলেজগুলোতেও খরচ বেড়ে যাচ্ছে। আমরা সরকারি কলেজে ভর্তি হয়েছি কম খরচে পড়াশোনার জন্য। কিন্তু এখন ফরম পূরণে ৮ হাজার টাকার বেশি দিতে হচ্ছে। এটা আমাদের পরিবারের জন্য বড় বোঝা।’
শেরপুর সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়সাল অভিযোগ করে বলেন, ‘অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি শিক্ষার্থীদের জন্য বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, পর্যাপ্ত একাডেমিক সুবিধা না থাকা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৬-৮ হাজার টাকা আদায় অযৌক্তিক। ফয়সালের দাবি, দ্রুত ফি কমানো ও ব্যয়ের সঠিক হিসাব প্রকাশ করা প্রয়োজন, অন্যথায় শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদে নামতে বাধ্য হবে।
আরও পড়ুন: লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারল কি ছাত্রসংগঠনগুলো?
২০২২-২৩ সেশনের শিক্ষার্থী শাওন বলেন, ফরম পূরণের ফি অতিরিক্ত ও অযৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার ফি বৃদ্ধি পেয়েছে, সঙ্গে সেশন ফিও বাড়ানো হয়েছে। ফলে মোট খরচ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮ হাজার টাকা। অথচ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস হয় না, পর্যাপ্ত শিক্ষক, ল্যাব ও গবেষণার সুযোগও নেই। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা সুবিধা থাকা সত্ত্বেও এত ফি নেই। শিক্ষার্থীরা বলছে, এটি জুলুম ছাড়া কিছু নয়। অবিলম্বে ফি কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে, নইলে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে তারা।
এ বিষয়ে কথা হয় শেরপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আবদুর রউফের সঙ্গে। তিনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ফরম পূরণ বৃদ্ধিতে কলেজের কোনো হাত নেই। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেই আগের বছরের তুলনায় এ বছর স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ফরম পূরণের ফি বৃদ্ধি করা হয়েছে।