ইসরায়েলের কাছে কত পারমাণবিক বোমা রয়েছে?
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৫, ১১:৩৯ AM , আপডেট: ২৩ জুন ২০২৫, ০৪:৩১ PM
গত শতাব্দীর ষাটের দশক থেকেই যে ইসরায়েলের নিজস্ব পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে, সেটি কারোরই অজানা নয়। যদিও দেশটিকে এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে বিষয়টি স্বীকার করতে দেখা যায়নি। বরং ইরান ‘পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি রয়েছে দাবি করে সপ্তাহখানেক আগে দেশটির ওপর হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। জবাবে ইরানও পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অব্যাহত রেখেছে। এ অবস্থায় দেশ দু'টি মধ্যে সংঘাত ক্রমেই আরও বাড়তে দেখা যাচ্ছে।
‘মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলই একমাত্র দেশ, যার কাছে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে,’ বিবিসি মুন্ডোকে বলছিলেন শান্তি ও নিরাপত্তা বিষষক স্পেনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডেলাস সেন্টার ফর পিস স্টাডিজের গবেষক ও পদার্থবিজ্ঞানী হাভিয়ের বোহিগাস।
আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) গত মার্চ মাসে জানিয়েছিল যে, ইরান এখন পর্যন্ত ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। ‘পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে হলে এটি ৯০ শতাংশের ওপরে অর্জন করতে হবে,’ বলেন বোহিগাস।
আরও পড়ুন: হরমুজ প্রণালি বন্ধ করা হবে অর্থনৈতিক আত্মহত্যা: যুক্তরাষ্ট্র
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইরান সহ অন্যান্য দেশগুলো পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিতে (এনপিটি) স্বাক্ষর করলেও ইসরায়েল এখন পর্যন্ত সই করেনি। ফলে চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর মতো একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর আইএইএ-কে তাদের সম্ভাব্য পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পরিদর্শন করতে দিতে তারা বাধ্য নয়। যদিও ইসরায়েল নিজে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার একজন সদস্য। যেহেতু দেশটি পরিদর্শনের অনুমতি দেয় না, সেকারণে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পর্কে খুব একটা তথ্যও পাওয়া যায় না।
যতটুকু তথ্য জানা যায়, সেগুলো মূলত ফাঁস হওয়া তথ্য, মার্কিন প্রতিরক্ষা ও জ্বালানি বিভাগের প্রতিবেদন এবং পারমাণবিক কর্মসূচি পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর গবেষণা থেকে প্রাপ্ত। এ ছাড়াও ইসরায়েলের সাবেক পরমাণু প্রকৌশলী মোর্দেচাই ভানুনুর সাক্ষাৎকার থেকেও দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয়ে একটা ধারণা পাওয়া যায়।
এক সময় ইসরায়েলি পারমাণবিক কেন্দ্রে কর্মরত মি. ভানুনুকে গত শতাব্দীর আশির দশকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল। পরে ১৯৮৬ সালে তিনি ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য সানডে টাইমসের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। ওই সাক্ষাৎকারের মাধ্যমেই মি. ভানুনু তখন বিশ্ববাসীকে জানিয়েছিলেন যে, ইসরায়েলের পারমাণবিক কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। এই তথ্য প্রকাশ করার জন্য তাকে অনেক বছর জেলও খাটতে হয়েছে।
আমিমুত
পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয়ে তথ্য প্রকাশিত হলেও ইসরায়েলের নেতারা নিজ মুখে কখনও সেটি স্বীকার করেননি, আবার অস্বীকারও করতে দেখা যায়নি। এক্ষেত্রে তারা বরং অস্পষ্টতা রাখার নীতি মেনে চলেন।
পারমাণবিক অস্ত্রের বিষয়ে ইসরায়েলের সরকারের এই নীতিকে বলা হয় ‘আমিমুত’, যার অর্থ দাঁড়ায় ‘ইচ্ছাকৃত অস্পষ্টতা’।
‘ইসরায়েলের পারমাণবিক যুগে এই নীতিটি সম্ভবত: তাদের সবচেয়ে স্বতন্ত্র ব্যাপার,’ যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডসে জমা দেওয়া এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন ইসরায়েলের পারমাণবিক কর্মসূচি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক অ্যাভনার কোহেন। যদিও ইসরায়েলের ইতিহাসে এই নীতি মোটেও নতুন কিছু নয়। দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতি শিমন পেরেজ তার আত্মজীবনীতেও বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
‘অস্পষ্টতার শক্তি যে কত প্রচণ্ড, সেটি আমরা শিখেছি...যারা দ্বিতীয়বার হলোকস্ট করতে চেয়েছিলেন, তাদের জন্য এই অস্পষ্টতা বা সন্দেহ একটি শক্তিশালী প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করেছে,’ লিখেছেন মি. পেরেজ।
অধ্যাপক কোহেনও তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন যে, পারমাণবিক অস্ত্রের বিষয়ে অস্বচ্ছতার এই নীতি ইসরায়েলের ‘সর্বশ্রেষ্ঠ কৌশলগত এবং কূটনৈতিক অর্জন’।
আরও পড়ুন: হরমুজ প্রণালি বন্ধের সিদ্ধান্ত ইরানের, বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক
‘ইসরায়েল তার নিজের পছন্দেই অস্পষ্টতার নীতি গ্রহণ করেছে এবং সেটা হয়েছে। যেহেতু দেশটি পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিতে (এনপিটি) স্বাক্ষর করেনি, সে কারণে তাদের পারমাণবিক স্থাপনা পরিদর্শন করতে দেওয়ারও প্রয়োজন নেই,’ বিবিসি মুন্ডোকে বলেন ডেলাস সেন্টার ফর পিস স্টাডিজের গবেষক জেভিয়ার বোহিগাস।
তিনি আরও বলেন, সামরিক শক্তির ক্ষেত্রে বেশিরভাগই দেশই সবকিছু স্পষ্ট করতে চায় না। তবে পারমাণবিক ইস্যুতে ইসরায়েল ‘আরও বেশি অস্পষ্টতা’ বজায় রাখে।
‘এটির মাধ্যমেই তারা নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারছে বলে মনে হচ্ছে। ফলে আমরা এতটুকুই জানতে পারছি যে, দেশটির একটি পারমাণবিক কর্মসূচি রয়েছে এবং তাদের কাছে একাধিক পারমাণবিক বোমা আছে, যা তারা প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারে,’ বলেন পদার্থবিজ্ঞানী বোহিগাস। তবে ইসরায়েলের নেতারা অবশ্য এ বিষয়টি কখনও স্বীকার বা অস্বীকার করেননি।
‘এই অস্পষ্টতাই ইসরায়েলকে অস্তিত্বগত হুমকির বিরুদ্ধে নিজেকে রক্ষা করার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে,’ প্রতিবেদনে বলেছেন ইসরায়েলের পারমাণবিক কর্মসূচি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক অ্যাভনার কোহেন।
‘কিন্তু পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের বিপরীতে দেশটিকে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক কিংবা নৈতিকও, কোনো ধরনের মূল্যই দিতে হয়নি,’ বলেন অধ্যাপক কোহেন।
নেতানিয়াহু সমর্থন যোগানো ইসরায়েলি গণমাধ্যম ইসরায়েল হায়োম, যা দেশটিতে সবচেয়ে বেশি প্রচারিত সংবাদপত্র, দেশটির পারমাণবিক ক্ষমতা সম্পর্কে ‘গোপনীয়তা’র নীতির বিষয়ে একটি দীর্ঘ নিবন্ধ প্রকাশ করেছে।
সেখানে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলের প্রাথমিক লক্ষ্য হলো যেকোনো মূল্যে (মধ্যপ্রাচ্যে) পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার ঠেকানো।’
কারণ আমিমুত নীতির সমর্থকরা মনে করেন, ইসরায়েল তার অস্পষ্টতার নীতি থেকে সরে আসলে মধ্যপ্রাচ্যে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির ‘প্রতিযোগিতা শুরু হতে পারে’।
যদিও পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ‘সেন্টার ফর আর্মস কন্ট্রোল অ্যান্ড নন-প্রলিফারেশন’ জানাচ্ছে যে, ইসরায়েলের এই ‘অস্পষ্টতার নীতিই’ বরং মধ্যপ্রাচ্যকে গণবিধ্বংসী অস্ত্রমুক্ত অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে "অন্যতম প্রধান বাধা’।
পরমাণু কর্মসূচি সামনে এসেছিল যেভাবে
ইসরায়েলের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পর্কে প্রথমবার তথ্য জানা যায় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ১৯৬২ সালের একটি নথি থেকে। গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে দক্ষিণ ইসরায়েলে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে ফ্রান্স ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল বলে ওই নথিতে বলা হয়।
‘ফ্রান্সের সঙ্গে ওই চুক্তির লক্ষ্য ছিল প্লুটোনিয়াম অর্জনের জন্য একটি চুল্লি তৈরি করা,’ বলেন ডেলাস সেন্টার ফর পিস স্টাডিজের গবেষক জেভিয়ার বোহিগাস।
গুগল ম্যাপে শহরটির অনুসন্ধান করলে দেখা যায়, নেগেভ নিউক্লিয়ার রিসার্চ সেন্টার নামের ওই পরমাণু গবেষক কেন্দ্রটি ডিমোনা শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে একটি মরুভূমির মাঝখানে অবস্থিত।
প্রথমদিকে ওই স্থাপনাটিকে বস্ত্রশিল্পের কারখানা এবং কৃষি ও ধাতুবিদ্যা সংক্রান্ত গবেষণা কেন্দ্র হিসাবে বর্ণনা করেছিল ইসরায়েল। পরবর্তীতে ষাটের দশকে এসে ইসরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন-গুরিয়ন তাদের পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয়টি প্রথমবার স্বীকার করেন।
দেশটির পার্লামেন্টে দেওয়া এক ভাষণে পারমাণু গবেষণা কেন্দ্রটির ‘উদ্দেশ্য শান্তিপূর্ণ’ ছিল বলে দাবি করেন। ‘কিন্তু মার্কিন প্রতিরক্ষা ও জ্বালানি বিভাগের তদন্ত প্রতিবেদন থেকে এটা স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে, ইসরায়েলের একটি পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি রয়েছে,’ বলেন বোহিগাস।
আরও পড়ুন: ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র দিতে প্রস্তুত অনেক দেশ: দিমিত্রি মেদভেদেভ
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রকাশিত গোপন নথি থেকে জানা যায়, ১৯৭৫ সালের মধ্যেই দেশটির সরকার নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল যে, ইসরায়েলের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে।
এরপর আশির দশকে এসে পরমাণু প্রকৌশলী মোর্দেচাই ভানুনু ইসরায়েল সরকারের পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয় আবারও সামনে আনেন।
সানডে টাইমসের কাছে অভিযোগ
ইসরায়েলি পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয়ে আরও বিস্তারিতভাবে জানা যায় গত শতাব্দীর আশির দশকে ব্রিটিশ গণমাধ্যম সানডে টাইমসে প্রকাশিত ইসরায়েলি পরমাণু প্রকৌশলী মোর্দেচাই ভানুনুর সাক্ষাৎকার থেকে। মি. ভানুনু ১৯৮৫ সালে চাকরিচ্যুত হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রায় নয় বছর যাবত ইসরায়েলের ডিমোনা পারমাণবিক কেন্দ্রে কাজ করেন।
ওই নয় বছরে তিনি গোপনে স্থাপনাটির বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার বেশ কিছু ছবি তোলেন। সেই ছবিতে দেখা যায়, কেন্দ্রটিতে পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় তেজস্ক্রিয় পদার্থ নিষ্কাশনের সরঞ্জাম এবং পরীক্ষাগার দেখা যায়। মি. ভানুনু ১৯৮৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে পরমাণু অস্ত্রবিরোধী একটি সম্মেলনে অংশ নেন। সেখানেই কলম্বিয়ার ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক অস্কার গুয়েরেরোর সঙ্গে তার দেখা হয়। মি. গুয়েরেরোই তাকে ইসরায়েলি পরমাণু কেন্দ্রের ছবিগুলো প্রকাশে রাজি করাতে সক্ষম হন। এরপর মি. ভানুনু ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য সানডে টাইমসের সাংবাদিক পিটার হাউনামের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
এ বিষয়ে মি. হাউনাম বিবিসি'র ‘উইটনেস হিস্ট্রি’ অনুষ্ঠানকে বলেন, বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর ইসরায়েল তার পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়বে বলে বিশ্বাস করতেন মি. ভানুনু। যদিও বাস্তবে তেমন কিছুই ঘটেনি। উইটনেস হিস্ট্রিতে প্রচারিত তথ্য থেকে জানা যায় যে, সাক্ষাৎকার প্রচারের পর মি. ভানুনুকে মাদক সেবন করানোর পর অপহরণ করে ইসরায়েলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরে রাষ্ট্রদ্রোহ ও গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে তাকে ১৮ বছরের কারাদণ্ড দেয় ইসরায়েল। তবে মি. ভানুনু অবশ্য তাতে দমে যাননি।
দীর্ঘদিন কারাভোগের পর ২০০৪ সালে মুক্তি পান তিনি। তখন মি. ভানুনু বলেছিলেন যে, অতীতের ভূমিকার জন্য তিনি মোটেও অনুতপ্ত নন, বরং ‘গর্বিত এবং খুশি’। এ ঘটনার পর তাকে আবারও সাজা দেওয়া হয়। বিদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং ইসরায়েল ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে তার ওপর। এই মোর্দেচাই ভানুনু'র কল্যাণেই ইসরায়েলের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কর্মসূচি সম্পর্কে বিশ্ববাসী নিশ্চিত হয়েছিল।
ঠিক কতগুলো বোমা আছে?
১৯৮৬ সালে মি. ভানুনু জানিয়েছিলেন যে, ওই সময় ইসরায়েলের কাছে আনুমানিক ১০০ থেকে ২০০টি পারমাণবিক 'ওয়ারহেড' ছিল। বোমার সামনের যে অংশে মূলত বিস্ফোরক রাখা থাকে, সেটি ওয়ারহেড নামে পরিচিত। মি. ভানুনু কয়েক শ' ওয়ারহেড থাকার দাবি করলেও পরমাণু অস্ত্র পর্যবেক্ষণকারী সংস্থাগুলো অবশ্য তা বলছে না।
সুইডেনভিত্তিক পরমাণু অস্ত্র পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মতে, বর্তমানে ইসরায়েলের কাছে ৯০টির মতো ওয়ারহেড থাকতে পারে। এসব ওয়ারহেড তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় প্লুটোনিয়াম দক্ষিণ ইসরায়েলের ডিমোনা শহরের কাছে অবস্থিত নেগেভ পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্রের চুল্লিতে উৎপাদিত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
যদিও ইসরায়েলের সরকার দাবি করে আসছে যে, পরমাণু চুল্লিটির উৎপাদন সক্ষমতা মাত্র ২৬ মেগাওয়াট। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মনে করেন যে, চুল্লিটির উৎপাদন সক্ষমতা আরও অনেক বেশি। ইসরায়েলের অন্যান্য পারমাণবিক স্থাপনার মতো এই চুল্লিটিরও আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা'র (আইএইএ) নজরদারির বাইরে রয়েছে।
ফলে সেটির অপব্যবহার হচ্ছে কী-না এবং পারমাণবিক কর্মসূচি কতটা শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে, সেটি স্বাধীনভাবে যাচাই করার সুযোগ নেই। সেক্ষেত্রে ইসরায়েল যদি তথ্য না দেয়, তাহলে কীভাবে জানা যাবে যে, দেশটির কাছে কতগুলো পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে?
‘আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো পরমাণু কেন্দ্রগুলো পর্যবেক্ষণ রাখে এবং সেটার ভিত্তিতে প্রতিবছর ধারণা করে থাকে,’ বলেন গবেষক ও পদার্থবিজ্ঞানী বোহিগাস। তিনি আরও বলেন, ‘যেসব দেশের ব্যাপারে কম তথ্য রয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের ইউরেনিয়াম বা প্লুটোনিয়াম উৎপাদনের আনুমানিক পরিমাণ গণনা করার মাধ্যমে ধারণা পাওয়া যায়।’
ইসরায়েলের ক্ষেত্রেও সেটি করা হয়েছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। যদিও পদ্ধতিটি আগেও বিভিন্ন সময় ব্যবহৃত হয়েছে। ইসরায়েলের মতো উত্তর কোরিয়ার ক্ষেত্রেই একই পদ্ধতি প্রয়োগ করে দেশটির 'পারমাণবিক ওয়ারহেড' সম্পর্কে একটা ধারণা পেয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। উত্তর কোরিয়ার কাছে প্রায় ৫০টি ওয়ারহেড রয়েছে বলে অনুমান করেন তারা।
বোহিগাস জানান যে, ২০১১ সালে নিউ স্টার্ট ট্রিটি স্বাক্ষরের আগে যখন পরমাণু স্থাপনাগুলো পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ বাধ্যতামূলক ছিল না, তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে থাকা পারমাণিক বোমার সংখ্যার বিষয়ে আনুমানিক একটা ধারণা পেয়েছিল পরমাণু পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলো।
‘পরে তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর দেখা গেছে, সেগুলো বেশ সামঞ্জস্যপূর্ণ,’ বলেন জেভিয়ার বোহিগাস।
‘সুতরাং সেখান থেকে বলা যায় যে, ইসরায়েলের পরমাণু অস্ত্রের বিষয়ে যে ধারণা করা হচ্ছে, সেটি বাস্তবসম্মত বা বাস্তবতার বেশ কাছাকাছিই হবে,’ বলেন শান্তি ও নিরাপত্তা বিষষক স্পেনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডেলাস সেন্টার ফর পিস স্টাডিজের এই গবেষক।