পিতৃহীন পরিবারে মায়ের একমাত্র ভরসা ছিলেন আজিজ
- আরফান আলী, শেরপুর প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫, ১১:৪১ AM , আপডেট: ০৪ আগস্ট ২০২৫, ০১:১৪ PM
৫ আগস্ট ২০২৪। সারা দেশের রাজপথে তখন বিজয়ের জোয়ার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সফল পরিণতির খবরে উল্লাসিত জাতি। সেই দিনে, ঢাকার উত্তরা হাউজ বিল্ডিং এলাকায় বিজয় মিছিলে অংশ নিতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান শেরপুরের সন্তান আব্দুল আজিজ (৩৮)।
আজিজ ছিলেন শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার নারায়ণগঞ্জ বাজার এলাকার বাসিন্দা। পিতা মৃত মোজাম্মেল হক, মাতা ছায়েরা খাতুন। তিন ভাইয়ের মধ্যে ছিলেন মেঝো। ছয় বছর বয়সেই হারিয়েছিলেন বাবাকে। এরপর মায়ের আঁচলই হয়ে ওঠে তার আশ্রয়, লড়াইয়ের প্রেরণা। টিকে থাকার লড়াইয়ে বড় হয়ে ঢাকায় যান। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকরি নেন। ছোট ভাইয়ের পড়ালেখা আর বৃদ্ধ মায়ের চিকিৎসাই ছিল তাঁর জীবনের ধ্রুব লক্ষ্যে।
৫ আগস্ট বিকেলে উত্তরা হাউজ বিল্ডিং এলাকায় বিজয়ের আনন্দ মিছিলে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। হাসপাতালে নেয়া হলে ঢামেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ আগস্ট শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
আরও পড়ুন: মা, আমি তো শুধু তোমার ছেলে না—দেশেরও ছেলে হবো একদিন
মা ছায়েরা খাতুন এক বছর পরও সে শোক ভুলতে পারেননি। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আজিজের বয়স যখন ছয়, তখন তার বাবা মারা যান। আমি অনেক কষ্টে ওরে মানুষ করছি। সে ঢাকা গিয়া গার্মেন্টসে চাকরি করতো, আমারে টাকা পাঠাইতো, ছোট ছেলের লেখাপড়ার খরচ চালাইতো। কিন্তু গতবছর আন্দোলনের মধ্যে গিয়া পুলিশ ওরে গুলি কইরা মেরে ফালাইলো। আমার সব কিছু শেষ হইয়া গেলো। আমি বিচার চাই।’
ছোট ভাই আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমার পড়ালেখার খরচ ভাই দিতো। ও ছাড়া আর কেউ ছিল না আমাদের পরিবারের ভরসা। সে দিন সে বিজয় মিছিলে গিয়েছিলো ছাত্রদের পাশে দাঁড়াতে। ফিরলো না। আমি জানি না, আর পড়ালেখা চালাতে পারবো কি না।’
আর্থিক সহায়তা প্রসঙ্গে মান্নান জানান, ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা দেয়ার কথা শুনেছি, এখনো হাতে পাইনি। জামায়াতে ইসলামি থেকে দুই লক্ষ টাকা এবং আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন থেকে এক লক্ষ টাকা পেয়েছি।’
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা ন্যায্য অধিকার আদায়ের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। শুরুতে এই আন্দোলন ছিল শান্তিপূর্ণ, কিন্তু সরকার তা দমন-পীড়নের মাধ্যমে প্রতিহত করার চেষ্টা করে। এতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সরকার এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে দমন-পীড়নের মাধ্যমে থামাতে গিয়ে সরকারই আরও প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়ে। ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমনে সরকারের সহিংস হস্তক্ষেপে প্রায় হাজারো নিরস্ত্র মানুষ প্রাণ হারান, আহত হন হাজার হাজার। মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে আন্দোলন পরিণত হয় গণঅভ্যুত্থানে। পতন ঘটে টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে দীর্ঘদিন নিপীড়ন নির্যাতন চালানো আওয়ামী লীগ সরকারের। ক্ষমতাসীন দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।