বিজয় মিছিল থেকে ধরে নিয়ে থানায়, ১২টি গুলিতে প্রাণ গেল রবিউলের

গণঅভ্যুত্থানে নিহত শহীদ রবিউল ইসলাম
গণঅভ্যুত্থানে নিহত শহীদ রবিউল ইসলাম  © টিডিসি সম্পাদিত

২০২৪ সালের জুলাইয়ের উত্তাল সময়। কোটা সংস্কার আন্দোলনে উত্তাল পুরো বাংলাদেশ। শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বিজয়ের ঢেউ ওঠে চারদিকে। গাজীপুরেও বের হয় বিজয় মিছিল। আর সেই মিছিলে অংশ নিয়েই জীবন দিতে হয় সরিষাবাড়ীর ছেলে মো. রবিউল ইসলামকে।

জামালপুর সদর উপজেলার আওনা ইউনিয়নের চরকুলপাড় গ্রামের সন্তান রবিউল ইসলাম। বাবা জুলহাস উদ্দিন আর মা আমেনা বেগমের দুই সন্তান নিয়ে গড়া ছোট্ট সংসারের গর্ব ছিল রবিউল। ছোটবেলা থেকেই শান্ত স্বভাবের ছিল সে, মায়ের চোখের মনি। পড়াশোনা শেষে চাকরির খোঁজে পাড়ি জমায় গাজীপুরে। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করে—পরিবারের স্বপ্নগুলো একটু একটু করে গড়ে তুলছিল সে।

কখনো রাজনীতির মাঠে ছিল না রবিউল। দলীয় ব্যানারে নাম লেখায়নি, নেতা হবারও চেষ্টা করেনি কোনোদিন। কিন্তু মেধার মূল্যায়ন আর ন্যায়ের জন্য গড়ে ওঠা সেই আন্দোলনে যখন সারাদেশ এক কণ্ঠে শ্লোগান তোলে, তখন সে চুপ থাকতে পারেনি। দেশ বদলাবে—এই আশায় ২০ জুলাই বিকেলে গাজীপুরে বের হওয়া বিজয় মিছিলে অংশ নেয় রবিউল।

কিন্তু সেই বিকেলেই ঘটে যায় মর্মান্তিক এক ঘটনা। বিকেল ৫টার দিকে গাজীপুরের বাসন থানা পুলিশ বিজয় মিছিল থেকে রবিউলকে তুলে নিয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, থানায় নেওয়ার পর তাকে একসাথে ১০–১২টি গুলি করে হত্যা করা হয়।

রবিউলের নিথর দেহ ফেরে গ্রামের মাটিতে। দাফন হয় চরকুলপাড়ের কুলপাড় গ্রামে। শোকে স্তব্ধ হয়ে যায় পুরো পরিবার। মা আমেনা বেগম বললেন, ‘রবিউল আমার বুকে ছিল। আমি কোনোদিন রাজনীতি বুঝি না। কিন্তু আমার ছেলেটারে মিছিল থেকে ধরে নিয়ে ওভাবে মারবে—এই কইরা কি দেশ চলে?’

পাশের বাড়ির মানুষদের চোখে জল, কেউ কেউ বলে উঠলেন, ‘ও যেন আগুনের ছেলে ছিল, নিভে গেলেও আলো ফেলে গেছে আমাদের মনে।’

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা ন্যায্য অধিকার আদায়ের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। শুরুতে এই আন্দোলন ছিল শান্তিপূর্ণ, কিন্তু সরকার তা দমন-পীড়নের মাধ্যমে প্রতিহত করার চেষ্টা করে। এতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সরকার এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে দমন-পীড়নের মাধ্যমে থামাতে গিয়ে সরকারই আরও প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়ে। ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমনে সরকারের সহিংস হস্তক্ষেপে প্রায় হাজারো নিরস্ত্র মানুষ প্রাণ হারান, আহত হন হাজার হাজার। মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে আন্দোলন পরিণত হয় গণঅভ্যুত্থানে। পতন ঘটে টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে দীর্ঘদিন নিপীড়ন নির্যাতন চালানো আওয়ামী লীগ সরকারের। ক্ষমতাসীন দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।


সর্বশেষ সংবাদ