স্বাস্থ্য উপদেষ্টা
জন্মসনদ থাকুক বা না থাকুক, প্রতিটি শিশুকে টিকার আওতায় আনতে হবে
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ০২:২৩ PM
টাইফয়েড টিকা নিয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতার অভাব এবং সামাজিক উদাসীনতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। তিনি বলেছেন, ‘আমার ঘরে নাতি-নাতনি আছে, কাজের লোকেরও বাচ্চা আছে কেউ বলেনি যে টাইফয়েডের টিকা নিচ্ছে। মানে আমরা সব ঘরে পৌঁছাতে পারিনি।’
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) রাজধানীর শহীদ আবু সাঈদ কনভেনশন সেন্টারে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন ২০২৫–এর জাতীয় অ্যাডভোকেসি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
নূরজাহান বেগম বলেন, ‘ডায়রিয়া, রাতকানা রোগসহ অনেক প্রতিরোধযোগ্য রোগ আমরা নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছি। অথচ টাইফয়েডের মতো পুরোপুরি প্রতিরোধযোগ্য একটি রোগে এখনো আমাদের দেশের শিশুরা মারা যাচ্ছে, কেউ কেউ স্থায়ী অঙ্গহানির শিকার হচ্ছে এটা আমাদের জন্য লজ্জার। দেরিতে হলেও আমরা টাইফয়েডের টিকাদান শুরু করেছি। আমি বিশ্বাস করি, এবারও আমরা সফল হবো।’
তিনি বলেন, ‘টাইফয়েড এমন একটি রোগ, যা অল্প বয়সী শিশুদের জীবনকে বিপন্ন করে তোলে। অথচ পরিবারগুলো এর গুরুত্ব বোঝে না, অনেকেই জানেই না যে টাইফয়েডের টিকা এখন দেশে পাওয়া যাচ্ছে। এটি আমাদের যোগাযোগের ব্যর্থতা। মানুষ যেন বিভ্রান্ত না হয়, ভয় না পায় সে জন্য প্রচারণা আরও জোরদার করতে হবে। স্কুল, মসজিদ, কমিউনিটি সেন্টারসহ সব স্থানে এই বার্তা পৌঁছাতে হবে।’
সামাজিক উদ্যোগ ও সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়। ইমাম, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, সমাজকর্মী সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। মিডিয়াও এই কাজে আমাদের বড় সহযোদ্ধা। স্বাস্থ্য খাত একা সফল হতে পারে না, আমাদের সামাজিক সহযোগিতার ভিত্তি আরও দৃঢ় করতে হবে।’
সব শিশুকে টিকার আওতায় আনার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘একজন শিশুও বাদ পড়া চলবে না। জন্মসনদ থাকুক বা না থাকুক, কোনো শিশুকে টিকা থেকে বাদ দেওয়া যাবে না। প্রত্যেক ঘরের কাজের মানুষ, বস্তির শিশুরাও টিকার আওতায় আসতে হবে। কারণ একটি শিশু বাদ পড়া মানেই একটি পরিবার ঝুঁকিতে পড়া।’
রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সহজ করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘টাইফয়েডের টিকার জন্য যেন কেউ প্রশাসনিক হয়রানির শিকার না হয়। টিকা সবার জন্য সহজলভ্য, বিনামূল্যে এবং গ্রহণযোগ্য হতে হবে। মানুষকে বোঝাতে হবে এটা কোনো বিলাসিতা নয়, বরং বেঁচে থাকার প্রয়োজন।’
স্বাস্থ্য বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতে আমাদের সবচেয়ে সফল কর্মসূচি হচ্ছে জাতীয় টিকাদান কর্মসূচি। টাইফয়েড টিকাও অচিরেই এই কর্মসূচির আওতায় আসবে বলে আমরা আশা করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ লক্ষ্যে আমাদের দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে হবে। মেডিকেল কলেজ, নার্সিং কলেজ ও ইন্টার্ন ডাক্তারদের এই টিকাদানে যুক্ত করা গেলে মাঠপর্যায়ের কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে।’
সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য সচিব মো. সাইদুর রহমান। সভায় আরও বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর, জনস্বাস্থ্য অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ টি এম সাইফুল ইসলাম, এনজিও ব্যুরোর মহাপরিচালক দাউদ মিয়া, ইউনিসেফের প্রতিনিধিত্বকারী দীপিকা শর্মা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি রাজেশ নরওয়ানসহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা।