শিক্ষাবৃত্তি দিচ্ছে তিন ব্যাংক, পাবেন কীভাবে?
সোনালী ব্যাংক প্রতি বছর ৮৫০ জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি দেয়
ডাচ-বাংলা ব্যাংক এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজার ৯৫ জনকে শিক্ষাবৃত্তি দিয়েছে
শাহজালাল ব্যাংক এখন পর্যন্ত ৭ হাজার ৫০০'র বেশি শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিয়েছে
- তৌহিদুর রহমান তুহি
- প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:২০ PM , আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:১৮ PM
মেধাবী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণে শিক্ষাবৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে পাশে থাকে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের ব্যাংকগুলো। দীর্ঘদিন ধরেই কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) এর অংশ হিসেবে দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সেই উদ্যোগে কিছুটা ভাটা পড়েছে। বর্তমানে দেশের মাত্র তিনটি ব্যাংক নিয়মিতভাবে শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে যাচ্ছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মধ্যে সোনালী ব্যাংক এবং বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ও ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড (ডিবিবিএল) নিয়মিত শিক্ষাবৃত্তি দিচ্ছে। অন্যদিকে, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংক একসময় শতশত শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি দিলেও বর্তমানে এই কর্মসূচি স্থগিত রেখেছে।
বর্তমান সময়ে বৃত্তি প্রদানকারী ব্যাংকগুলো
সোনালী ব্যাংক লিমিটেড
রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে ‘সোনালী ব্যাংক শিক্ষাবৃত্তি’ নামে একটি বৃত্তি কর্মসূচি পরিচালনা করে আসছে। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পর্যায়ের দরিদ্র, মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য এই বৃত্তি প্রদান করা হয়।
ব্যাংকটির তথ্যমতে, এসএসসি পাস করে এইচএসসিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী এবং স্নাতক পর্যায়ে পড়াশুনা শুরু করা শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিবছর শিক্ষাবৃত্তি প্রদানের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয় হয়। আবেদনকারীদের মধ্যে একাডেমিক যোগ্যতা ও পারিবারিক আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করা হয়। প্রাথমিকভাবে মনোনীত আবেদনকারীদের তালিকা সোনালী ব্যাংক পিএলসি'র ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
আরও পড়ুন: আজ ৪৯তম বিসিএস পরীক্ষা, হলে প্রার্থীদের মানতে হবে যেসব নির্দেশনা
সোনালী ব্যাংক একজন শিক্ষার্থীকে ১০ হাজার টাকা এককালীন সহায়তা দেয়। প্রতি বছর এইচএসসি পড়ুয়া ৫০০ শিক্ষার্থী এবং স্নাতক পর্যায়ের সাড়ে তিনশত শিক্ষার্থীকে এই বৃত্তি প্রদান করা হয়। ২০১০ সালে শুরু হওয়া এই কার্যক্রমের আওতায় করোনা মহামারির সময় ছাড়া প্রতি বছর প্রায় একই সংখ্যক শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ভবিষ্যতে প্রতি বছর আরও বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থীকে এই বৃত্তি দেয়ার পরিকল্পনা করছে ব্যাংকটি।
যেসব কাগজপত্র প্রয়োজন
সোনালী ব্যাংকে প্রাথমিকভাবে মনোনীত আবেদনকারীদেরকে নিম্নবর্ণিত কাগজপত্র সরবরাহ করতে হবে-
(ক) প্রাথমিক বাছাইয়ে মনোনীত আবেদনকারী কর্তৃক প্রিন্টকৃত অনলাইন আবেদন ফরম(শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান/বিভাগীয় প্রধানের স্বাক্ষর ও সীলমোহরযুক্ত সুপারিশসহ)
(খ)বর্তমানে অধ্যয়নরত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান/বিভাগীয় প্রধান কর্তৃক প্রদত্ত অধ্যয়ন সনদ
(গ) একাডেমিক ট্রান্সক্রীপ্ট, সনদ এবং নাগরিকত্ব সনদ এর সত্যায়িত কপি
(ঘ) জন্ম নিবন্ধন সনদ/এনআইডি এর সত্যায়িত কপি
(ঙ) ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশন হতে শিক্ষার্থীর অভিভাবকের মাসিক আয় সংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র (অভিভাবকের পেশা এবং মাসিক আয় উল্লেখ থাকতে হবে) ও চাকুরীরত অভিভাবকদের পদবী ও বেতন স্কেল উল্লেখসহ সংশ্লিষ্ট অফিস প্রধান কর্তৃক বেতনের প্রত্যয়নপত্র
(চ)বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরঙ্গনার সন্তানদের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা সনদ
(ছ) প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে সমাজসেবা অধিদপ্তর/জেলা সমাজসেবা কার্যালয়/ উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত প্রতিবন্ধী সনদের সত্যায়িত কপি
(জ) ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কর্তৃক সনদ/প্রত্যয়নপত্র এবং
(ঝ) তৃতীয় লিঙ্গের ক্ষেত্রে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সনদ/প্রত্যয়নপত্র ।
ব্যাংকটির শিক্ষাবৃত্তির বিষয়ে সর্বশেষ আপডেট জানতে ক্লিক করুন এখানে।
শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড
শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক বর্তমানে বৃত্তি প্রদানকারী বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে অন্যতম। ‘শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন’-এর মাধ্যমে ব্যাংকটি প্রতিবছর শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করে থাকে। ব্যাংকটির সিএসআর কার্যক্রমের মধ্যে শিক্ষা খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। ২০১২ সালে শুরু করা এই কার্যক্রমের আওতায় ব্যাংকটি এখন পর্যন্ত সাড়ে সাত হাজারের বেশি শিক্ষার্থীরা বৃত্তি দিয়েছে। বছরে ৪৫০ থেকে ৫০০ জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি দেয় ব্যাংকটি।
আরও পড়ুন: আজ শান্তিতে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা, ট্রাম্প কি পাচ্ছেন?
শিক্ষাবৃত্তিসহ শিক্ষাখাতে ৫ কোটিরও বেশি টাকা খরচ করে জানিয়ে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোসলেহ উদ্দীন আহমেদ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শিক্ষাবৃত্তির ক্ষেত্রে আমরা সব ধরনের 'ইমজ' ব্যতিরেকে আবেদনকারীদের যথাযথভাবে যাচাই-বাচাই করি। প্রকৃত অসচ্ছল ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বাছাই করে তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। ফলে যাদের আসলেই সহায়তা প্রয়োজন তারাই পেয়ে থাকেন। শিক্ষাবৃত্তির পাশাপাশি শাহজালাল ব্যাংক বিভিন্ন স্কুলের অবকাঠামো নির্মাণ/সংস্কার এবং ব্যায়ামাগারও তৈরিতে সহায়তা করে বলেও জানান তিনি।
শাহজালাল ব্যাংকের বৃত্তির জন্য এইচএসসি বা সমমান অধ্যয়নরত দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারেন। নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের এককালীন বৃত্তির পাশাপাশি কিছু ক্ষেত্রে মাসিক ভাতাও দেওয়া হয়, যা শিক্ষার্থীর শিক্ষা স্তরের ওপর নির্ভর করে। শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ওয়েবসাইটে বৃত্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর অনলাইন ফর্ম পূরণের মাধ্যমে আবেদন করতে হয়।
বৃত্তির জন্য আবেদনের যোগ্যতা হিসেবে বিভাগীয় শহর বা সিটি করপোরেশন এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫। অন্য বিভাগে জিপিএ-৪.৮০ এবং সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৪.৮০ ও অন্য বিভাগে জিপিএ-৪.৫০ থাকতে হবে।
আবেদনপত্রের সাথে বর্তমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান/বিভাগীয় প্রধান/১ম শ্রেণীর গেজেটেড অফিসার কর্তৃক সত্যায়িত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করতে হবে। এগুলো হলো-
ক) আবেদনকারীর ৩ কপি এবং পিতা/মাতা অথবা অভিভাবকের ১ কপি সদ্য তোলা ছবি যথাস্থানে সঠিকভাবে সংযুক্ত করতে হবে।
খ) এসএসসি ও এইচএসসি পাশের ট্রান্সক্রিপ্ট/মার্কসিটের সত্যায়িত ফটোকপি।
গ) এসএসসি ও এইচএসসি পাশের টেস্টমোনিয়াল-এর সত্যায়িত ফটোকপি।
ঘ) এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি।
৬) ছাত্র/ ছাত্রীর বর্তমান অধ্যয়নরত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রাপ্ত স্টুডেন্ট আইডি কার্ড/প্রত্যয়নপত্র এবং ভর্তির রশিদের সত্যায়িত ফটোকপি।
চ) ছাত্র/ছাত্রীর জন্ম নিবন্ধন সনদ অথবা জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি।
ছ) ছাত্র/ ছাত্রীর পিতা ও মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি।
জ) ছাত্র-ছাত্রীর পিতা, মাতা অথবা অভিভাবক চাকুরীরত থাকলে, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ওয়ার্ড কমিশনার/ইউপি চেয়ারম্যান থেকে আয়ের বিবরণ সনদের মূলকপি।
ঝ) পিতা/মাতা মৃত হলে মৃত্যুসনদের সত্যায়িত ফটোকপি।
ঞ) সব শিক্ষার্থীর যোগাযোগের ঠিকানা, মোবাইল নম্বর এবং ই-মেইল ফরম-এ উল্লেখিত ঘরে নির্ভুলভাবে লিপিবদ্ধ করতে হবে।
সুবিধা
এইচ.এস.সি/সমমান উত্তীর্ণ মনোনীত ছাত্র-ছাত্রীকে জনপ্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে ৬ মাসের বৃত্তির ১৫ হাজার টাকা, বই-পুস্তক ও পোশাক ক্রয় বাবদ এককালীন ৬ হাজার টাকা, অনুষ্ঠানস্থলে আসা যাওয়ার যাতায়াত ভাড়া বাবদ এককালীন এক হাজার টাকা সহ সর্বমোট ২২ হাজার টাকা প্রদান করা হয়।
এছাড়া স্নাতক (সম্মান) অধ্যয়নরত (৪ বছর) শিক্ষার্থীদেরকে প্রতিমাসে আড়াই হাজার টাকা হারে অবশিষ্ট ৪২ (বিয়াল্লিশ) মাস পর্যন্ত এবং ব্যাচেলর ডিগ্রী অধ্যয়নরত (৩ বছর) শিক্ষার্থীদেরকে প্রতিমাসে একই হারে অবশিষ্ট ৩০ (ত্রিশ) মাস পর্যন্ত বৃত্তির টাকা সব শিক্ষার্থীর স্ব-স্ব ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রদান করা হবে।
আরও পড়ুন: টাইমস হায়ার এডুকেশন র্যাঙ্কিংয়ে জায়গা হয়নি হাবিপ্রবির
প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী বৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীদের অবশ্যই স্ব-স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ অথবা বিভাগীয় প্রধানের নিকট থেকে প্রতি বছর অধ্যয়নরত আছে এই মর্মে প্রত্যয়ন পত্র দাখিল করতে হয়, অন্যথায় বৃত্তি বাতিল করা হয়।
তবে যেসব আবেদনকারীর পিতা বা মাতা বা অভিভাবকের বার্ষিক আয় দুই লাখ টাকার ঊর্ধ্বে, তাদের আবেদনপত্র গৃহীত হবে না। পাশাপাশি বর্ণিত যোগ্যতা ও আবেদনপত্রের ফরমে উল্লিখিত শর্তাবলির কোনো একটি অসম্পূর্ণ থাকলে বা কোনো তথ্য মিথ্যা প্রমাণিত হলে আবেদনপত্র বাতিল বলে গণ্য হবে। এছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে বৃত্তিপ্রাপ্ত হলে আবেদনপত্র বাতিল বলে গণ্য হবে।
ব্যাংকটির শিক্ষাবৃত্তির বিষয়ে সর্বশেষ আপডেট জানতে ক্লিক করুন এখানে।
ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড
শিক্ষাবৃত্তি প্রদানকারী ব্যাংকগুলোর মধ্যে ডিবিবিএল বেশ সুপরিচিত। দীর্ঘ দুই দশকের বেশি সময় ধরে ব্যাংকটি বাংলাদেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে আসছে। ২০০৩ সালে শুরু হওয়া এই কার্যক্রমের আওতায় এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজার ৯৫ জনকে ৫২৩ কোটি টাকারও বেশি শিক্ষাবৃত্তি দেয়া হয়েছে। তবে বছর ভেগে শিক্ষাবৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমবেশি হয়ে থাকে।
ডিবিবিএল বৃত্তির একটি বড় দিক হলো, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। ব্যাংকটির ওয়েবসাইটে বলা আছে, মোট বৃত্তিপ্রাপ্তদের অন্তত ৯০ শতাংশ গ্রামের অনগ্রসর শিক্ষার্থীদের প্রদান করা হয়। এছাড়া মোট বৃত্তির ৫০ শতাংশ পান ছাত্রীরা। প্রতি শিক্ষার্থীকে মাসিক বৃত্তি ছাড়াও বইপত্র, পোশাক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণের জন্য বার্ষিক এককালীন সহায়তা দেওয়া হয়।
এক্ষেত্রে এইচএসসি পড়ুয়াদের দুই বছর মেয়াদে বৃত্তি দেয়া হয়। এক্ষেত্রে প্রতি মাসে আড়াই হাজার টাকা এবং এককালীন বই ও অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ কেনার জন্য আড়াই হাজার ও পোশাক ক্রয়ের জন্য এক হাজার টাকা দেয়া হয়। ফলে একজন এইচএসসি পড়ুয়া বছরে সর্বমোট ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা পেয়ে থাকেন। অন্যদিকে স্নাতকে অধ্যায়নরদের ৩ থেকে ৫ বছর মেয়াদে বৃত্তি দেয়া হয়। তারা ক্ষেত্রে মাসপ্রতি ৩ হাজার টাকা এবং এককালীন বই ও অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ কেনার জন্য পাঁচ হাজার এবং পোশাক ক্রয়ের জন্য এক হাজার টাকা দেয়া হয়। সবমিলিয়ে একবছরে স্নাতকের একজন শিক্ষার্থী ৪২ হাজার টাকা পান।
অনলাইনে আবেদনের সময় নিম্নলিখিত কাগজপত্রের স্ক্যান কপি সংযুক্ত করতে হবে:
১। এইচ.এস.সি./সমমান পরীক্ষার নম্বরপত্র।
২। এইচ.এস.সি./সমমান পরীক্ষার প্রশংসাপত্র।
৩। এইচ.এস.সি. পর্যায়ে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-এর বৃত্তিপত্র।
৪। স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি সংক্রান্ত যেকোনো প্রমাণপত্র।
বৃত্তি স্থগিত রয়েছে যেসব ব্যাংকে
একসময় দেশের অন্যতম জনপ্রিয় বৃত্তি প্রদানকারী ব্যাংক ছিল আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকটির তথ্যমতে, ২০১৮ সালে শিক্ষাবৃত্তি কর্মসূচি চালু করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি প্রতি বছর ২০০ জন দরিদ্র, এতিম ও মেধাবী শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি দেয়ার জন্য নির্বাচন করা হয়। একজন শিক্ষার্থীকে তিনমাস অন্তর ১০ হাজার ৫০০ টাকা করে চার বছরে এক লাখ ৬৮ হাজার টাকা শিক্ষাবৃত্তি বাবদ এবং পোশাক ও পাঠ্যপুস্তক কেনার জন্য এককালীন ৮ হাজার টাকা দেয়া হয়। এখন পর্যন্ত চার ব্যাচে সর্বমোট ৭১৪ জনকে শিক্ষাবৃত্তি দিয়েছে ব্যাংকটি। নির্বাচিত শিক্ষার্থীকে শুধুমাত্র অনার্স (স্নাতক) লেভেলে (চার বছর) শিক্ষাবৃত্তি দেয়া হতো। ২০২২ সাল থেকে ব্যাংকটির শিক্ষাবৃত্তি কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। তবে আগেই নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা (যাদের বৃত্তিপ্রাপ্তির ৪ বছর পূর্ণ হয়নি) এখনও বৃত্তির অর্থ পাচ্ছেন।
ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, মূলত কোভিড-১৯ এর পর আমাদের এই কার্যক্রমে ধীরগতি শুরু হয়। তারপরেও আমরা বৃত্তি দিয়েছি, কিন্তু এখন কার্যক্রমটি স্থগিত রয়েছে। ঠিক কবে নাগাদ এই কার্যক্রম শুরু হবে সে বিষয়ে কোন তথ্য দিতে পারেননি আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়া দেশের সবচেয়ে বড় বেসরকারি ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক একসময় সমাজসেবামূলক কাজে বেশ মনযোগী ছিল। সারা দেশে অসংখ্য শিক্ষার্থীকে তারা বৃত্তি দিয়েছে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ব্যাংকটির বৃত্তি কার্যক্রমের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। বৃত্তি সংক্রান্ত ব্যাংকটির নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটেও বর্তমানে প্রবেশ করা যাচ্ছে না। ফলে এই কর্মসূচি কার্যত স্থগিত অবস্থায় রয়েছে বলেই ধারনা করা হয়।
বিষয়টি বিশদ তথ্যের জন্য ইসালামী ব্যাংকের কর্তাব্যাক্তিদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। তবে সম্প্রতি এস আলম আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের চাকরীচ্যুতকে কেন্দ্র করে ব্যাংকে অস্থিরতা চলমান থাকায় এ বিষয়ে তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
বেসরকারি এবি ব্যাংক ২০১৪ সালে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের "বি.এসসি নার্সিং কোর্সের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি" দেয়। নার্সিং কোর্সের নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের তিন বছরের জন্য এই বৃত্তি প্রদান করা হয়। এক্সিম ব্যাংক এক সময় শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করলেও বর্তমানে তাদের কার্যক্রম চোখে পড়েনি। এছাড়া ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী, কমিউনিটি ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও ইউসিবিসহ বেশকিছু ব্যাংক বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের সহায়তা করেছে।
ব্যাংকটির শিক্ষাবৃত্তির বিষয়ে সর্বশেষ আপডেট জানতে ক্লিক করুন এখানে।
সামাজিক দায়বদ্ধতা না ব্যবসায়িক সীমাবদ্ধতা?
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রতিটি ব্যাংককে তাদের মুনাফার একটি অংশ সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচিতে ব্যয় করতে হয়। এক্ষেত্রে মোট ব্যয়ের ৩০ শতাংশ করে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে ৬০ শতাংশ ব্যায়ের নির্দেশনা রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। তবে ব্যাংকগুলোর সাম্প্রতিক সিএসআর রিপোর্ট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, শিক্ষা খাতে ব্যয় কমেছে। এ বছরের জুন পর্যন্ত শিক্ষাখাতে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৩৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা, যা জুলাই-ডিসেম্বর ২০২৪ এর তুলনায় ২২.৯৮ শতাংশ কম।
বাজেট থাকার পরও শিক্ষাখাতে ব্যয় না করা মূলত শিক্ষার প্রতি উদাসীনতার বলেই মনে করছেন শিক্ষাবিদরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমরা শিক্ষার প্রতি উদাসীন, জাতিগতভাবে শিক্ষার প্রতি অবহেলা করি, এই চিত্র তারই প্রতিফলন। আমরা যদি খুব গভীরে আমরা যাই, দেখবো যে ওই টাকাগুলো নিয়মের মধ্যে অনিয়ম করা হয়। যেমন তাদের পরিচিত কাউকে দিলো চিকিৎসার নামে, বা এই নামে সেই নামে বিদেশে ভ্রমণ করল। অর্থাৎ টাকাটা যে খাতে খরচ করার কথা, সে খাতে খরচ হচ্ছে না।’
আরও পড়ুন: মাত্র ২০ দিনে ফল প্রকাশ হবে কামিল পরীক্ষার
শিক্ষাখাতে নির্দেশনা অনুযায়ী খরচের জন্য সংশ্লিষ্টদের জোরালো মনিটরিং প্রয়োজন বলেও মনে করেন ঢাবির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, শিক্ষার জন্য নির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকার পরও তা পূরণ না করতে পারা অনিয়ম। নির্দেশনা আপনাকে মানতেই হবে, যেহেতু নিয়ম আছে, সেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংকের কিংবা সংশ্লিষ্টদের জোরালো মনিটরিং লাগবে এবং তা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষা খাতে ব্যয় বললেই হবে না, তা ঠিক শিক্ষার কোন ক্ষেত্রে খচর হচ্ছে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এটা যেন এমন না হয় যে, কোন একজন এমডি কিংবা কোনো একজন পরিচালকের আত্মীয়কে সুবিধা দেয়া হচ্ছে। একেবারে নির্দিষ্ট যে জায়গাটায় প্রয়োজন, সমাজ-রাষ্ট্রের শিক্ষার ওই জায়গাটায় ব্যয় নিশ্চিত করা জরুরি।’
যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যেসব ব্যাংক আগে সিএসআর ব্যয়ে এগিয়ে ছিল, তার অনেকগুলোই ইতিমধ্যে লোকসানে পড়েছে। আবার কোনো কোনোটি মুনাফা কমায় সিএসআর ব্যয় কমিয়েছে। ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি ও কর পরিশোধের পর নিট লোকসানে পড়েছে ১৫টির বেশি ব্যাংক। এ তালিকায় রয়েছে সরকারি মালিকানার জনতা, অগ্রণী, বেসিক, বাংলাদেশ কৃষি (বিকেবি) ও রাজশাহী উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)। আরও আছে বেসরকারি খাতের সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, ইউনিয়ন, বাংলাদেশ কমার্স, ন্যাশনাল, পদ্মা, আইএফআইসি, এবি, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকসহ কয়েকটি। ফলে তাদের সিএসআরের আওতায় অর্থ খরচের সুযোগ নেই বললেই চলে।