আজ শান্তিতে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা, ট্রাম্প কি পাচ্ছেন?
- টিডিসি ওয়ার্ল্ড
- প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৩৬ AM , আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৪৩ AM
নরওয়ের রাজধানী অসলোতে আজ শুক্রবার বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টায় ২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের বিজয়ীর নাম ঘোষণা করবে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি। বিশ্বজুড়ে চলমান যুদ্ধ, সংঘাত ও অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে এবার পুরস্কারটি নিয়ে আগ্রহ ও আলোচনার মাত্রা অনেক বেশি।
বিশ্ব পরিস্থিতি বর্তমানে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ বৈশ্বিক সংঘাত তথ্যভান্ডার’ অনুসারে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ২০২৪ সালেই সবচেয়ে বেশি রাষ্ট্র সশস্ত্র সংঘাতে জড়িত হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার কাকে দেওয়া হচ্ছে—তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একাধিকবার দাবি করেছেন, তিনি ‘আটটি সংঘাতের সমাধান’ করেছেন, তাই তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কারের উপযুক্ত। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, অন্তত এই বছর ট্রাম্প পুরস্কার পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
সুইডেনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক পিটার ওয়ালেনস্টেইন বলেন, ‘না, এ বছর ট্রাম্প নন।’ তিনি যোগ করেন, ‘সম্ভবত আগামী বছর দেখা যেতে পারে—তত দিনে তার গাজা সংকটসহ অন্যান্য উদ্যোগের ফলাফল আরও পরিষ্কার হবে।’
অনেক বিশেষজ্ঞ ট্রাম্পের ‘শান্তির দূত’ দাবিকে অতিরঞ্জিত মনে করেন। তাদের মতে, তার ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি নোবেল শান্তি পুরস্কারের মূল চেতনার—আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও নিরস্ত্রীকরণ—বিরোধী।
অসলো পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান নিনা গ্রেগার বলেন, ‘শুধু গাজায় শান্তি আনার চেষ্টা নয়, ট্রাম্পের অন্যান্য বহু নীতিও নোবেলের আদর্শের পরিপন্থী।’ তার মতে, ট্রাম্প এমন অনেক কিছু করেছেন, যা শান্তি, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের বিপরীতে গেছে।
ট্রাম্পের নীতিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: আন্তর্জাতিক সংস্থা ও চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার, বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু, গ্রিনল্যান্ড দখলের হুমকি, মার্কিন শহরে ন্যাশনাল গার্ড পাঠানো এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ।
নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান ইয়োরগেন ওয়াতনে ফ্রিডনেস বলেন, ‘আমরা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সম্পূর্ণ অবদান দেখি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—তারা শান্তির জন্য কী অর্জন করেছে, সেটাই বিবেচ্য।’
শান্তিতে নোবেল পেতে পারেন যারা:
২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ৩৩৮ ব্যক্তি ও সংস্থা মনোনীত হয়েছেন। মনোনীতদের নাম ৫০ বছর পর্যন্ত গোপন রাখা হয়। তবে বিভিন্ন সংস্থা ও বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু নাম জোরালোভাবে আলোচনায় রয়েছে।
তালিকায় রয়েছে সুদানের যুদ্ধপীড়িত মানুষদের সহায়তাকারী স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন ‘ইমার্জেন্সি রেসপন্স রুমস’। এ ছাড়া আলোচনায় রয়েছেন প্রয়াত রুশ বিরোধীদলীয় নেতা আলেক্সেই নাভালনির স্ত্রী ইউলিয়া নাভালনায়া এবং আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ‘ODIHR’।
কেউ কেউ মনে করছেন, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা UNHCR কিংবা ফিলিস্তিন সহায়তা সংস্থা UNRWA-ও পুরস্কার পেতে পারে, বর্তমান বৈশ্বিক সঙ্কটে তাদের ভূমিকার কারণে।
এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC), আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (ICJ), এবং সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা সংগঠন যেমন ‘কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (CPJ)’ এবং ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (RSF)’-এর নামও সম্ভাব্য বিজয়ীদের তালিকায় রয়েছে।
নরওয়ের ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক হালভার্ড লেইরা বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নোবেল কমিটি আবার শান্তির মূল চেতনার দিকে ফিরেছে। মানবাধিকার, গণতন্ত্র, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং নারী অধিকারে গুরুত্ব দিচ্ছে তারা।’
তার মতে, এ বছর কমিটি সম্ভবত বিতর্কিত নয়—এমন কারও পক্ষেই রায় দেবে। যদিও চমক দেওয়ার ইতিহাসও কমিটির রয়েছে, তাই শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না।
২০২৪ সালে শান্তি পুরস্কার পেয়েছিল জাপানের পারমাণবিক বোমা হামলায় বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের সংগঠন ‘নিহোন হিদানকিও’। তারা দীর্ঘদিন ধরে পরমাণু অস্ত্র নিষিদ্ধে কাজ করছে।