ফেনীতে ফের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ভাঙন, পাউবোর ‘দায়সারা’ কাজ নিয়ে ক্ষোভ

মুহুরী নদীর পানি বেড়ে বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ শুরু করে
মুহুরী নদীর পানি বেড়ে বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ শুরু করে  © টিডিসি সম্পাদিত

ফেনীর ফুলগাজীতে টানা বৃষ্টি ও ভারতীয় উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে জনপদ। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে বাঁধ ভেঙে এ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। শুক্রবার (২০ জুন) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ফুলগাজী উপজেলা বাজার, উত্তর বরইয়া, বাসুড়া ও  বিজয়পুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

এদিকে, স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার ক্ষত এখনো পুরোপুরি কাটিয়ে না উঠতেই আবারও বাঁধ ভাঙনের ঘটনা ঘটেছে। এতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয়রা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দায়সারা কাজকেই দায়ী করছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাত ১০টার দিকে ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়নের বণিকপাড়া সহদেব বৈদ্যের বাড়ি সংলগ্ন মুহুরী নদীর বাঁধের একটি স্থানে ও গোসাইপুর এলাকায় সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের একটি অংশে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। একইদিন দুপুর থেকে পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের মনিপুর এলাকায় সিলোনিয়া নদীর পানি বেড়ে বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে।

রাকিব নামে বরইয়া এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নদীর পানি বাড়তে শুরু করে। স্থানীয়দের সঙ্গে মিলে বাঁধ ভাঙন ঠেকাতে অনেক চেষ্টা করেও আমরা সফল হইনি। গত বছরের ভয়াবহ বন্যার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও পানিতে ডুবে যাচ্ছি আমরা। প্রতি বছর বর্ষা এলেই কিছু সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের গাফিলতি ও দায়সারা কাজের কারণে আমাদের এই দুর্ভোগ এখনো পোহাতে হচ্ছে।

রাশেদ নামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, প্রতি বছর জুন থেকে আগস্ট এ সময়টাতে সামান্য বৃষ্টি হলেই নদীর পানি বেড়ে বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। ফলে দোকানের পণ্য ভিজে বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। অভিযোগ করেও কোনো লাভ নেই এসবের সঙ্গে এখন মানিয়ে নিতে শিখেছি।

উত্তর বরইয়া এলাকার বাসিন্দা নিশাদ বলেন, বাঁধ ভেঙে এখন এলাকায় হাঁটুসমান পানি। আর একটু পানি বাড়লেই আমাদের ঘরবাড়ি পুরোপুরি ডুবে যাবে। আমরা পরিবার নিয়ে চরম আতঙ্কে আছি-কোথায় যাব, কীভাবে রক্ষা পাব কিছুই বুঝতে পারছি না। 

নুর নবী নামের এলাকার আরেক বাসিন্দা বলেন, এখনই পুরো এলাকাজুড়ে হাঁটুসমান পানি। যদি টানা বৃষ্টি হয়, তাহলে পুরো এলাকা ডুবে যাবে। তখন হয়তো কর্মকর্তারা ত্রাণ নিয়ে ছুটোছুটি করবেন, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি বা স্থায়ী কোনো সমাধান কখনোই আসে না। প্রতিবছর একই চিত্র দেখতে হচ্ছে আমাদের

আজ শুক্রবার রাত থেকে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান। তিনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ফেনীতে ৬১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে, আজ রাত থেকে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ বিষয়ে ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. ফাহাদ্দিস হোসাইন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, উজানে ভারী বৃষ্টির কারণে নদীর পানি বাড়ছে। তবে মুহুরী নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। তিনি বলেন, বাঁধের ভাঙনস্থল রক্ষায় স্থানীয়দের নিয়ে অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু সফল হইনি। তবে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলোর নিরাপত্তায় আমাদের কাজ চলমান রয়েছে বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, গত বছরের আগস্টে ফেনীতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ২৯ জনের প্রাণহানি ঘটে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় সড়ক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ প্রায় সব খাত, যার ক্ষতির পরিমাণ শত কোটি টাকারও বেশি। গ্রাম ছাড়িয়ে ডুবে যায় জেলা শহর, পানিবন্দি হন ১০ লাখের বেশি মানুষ। দুর্গতদের সহায়তায় এগিয়ে আসে দেশব্যাপী মানুষ।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence