দুই মার্কেট থেকে বছরে ১৮ কোটি টাকা আয়ের সুযোগ হারাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
- কমমূল্যে নিয়ে বেশিমূল্যে তৃতীয় পক্ষকে ভাড়া
- নেপথ্যে শক্তিশালী সিন্ডিকেট
- মো. জাফর আলী
- প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:২৩ PM , আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:০৯ PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মালিকানাধীন ‘বিশ্ববিদ্যালয় মার্কেট, কাটাবন’ ও ‘গ্রীন সুপার মার্কেট’-এ ভাড়া বরাদ্দে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও সিন্ডিকেট দৌরাত্মের কারণে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণের আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়। এসব মার্কেটের দোকান মাত্র কয়েক হাজার টাকায় ভাড়া নিয়ে চুক্তি-বহির্ভূতভাবে মাসে তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি টাকায় তৃতীয় পক্ষের কাছে বছরের পর বছর ধরে ভাড়া দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব সম্পদ হওয়া সত্ত্বেও সেকেলে নীতিমালা, চরম উদাসীনতা ও সদিচ্ছার অভাবের কারণে এই দুই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিবছর অন্তত সাড়ে ১৮ কোটি টাকা হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। এতে অনেকের কাছে বিষয়টি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, প্রশ্ন উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হল, গ্রন্থাগার, গবেষণাগারসহ কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের দাবি উঠলেই কর্তৃপক্ষ সাধারণত জবাবে বাজেট সংকটের দোহাই দিয়ে থাকে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এত বড় দুই মার্কেটের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক সম্পদ রয়েছে, যেগুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়কে বহির্বিশ্বের প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো স্বয়ংসম্পূর্ণ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন তারা।
তাদের দাবি, বর্তমান বাজারমূল্যে এসব প্রতিষ্ঠান ভাড়া দেওয়া হোক এবং সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হোক। অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, ভাড়া বাড়ানোর কাজ চলমান রয়েছে। তবে কোন মার্কেটের দোকানে কত টাকা ভাড়া হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি।
“বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সম্পদ আছে সেগুলোর সঠিক ব্যবহার করলে শুধুই সরকারের বাজেটের ওপর ভরসা করতে হত না। সবকিছুতে বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘বাজেট ঘাটতি’ বয়ান হাজির করতে হত না। সুতরাং, মার্কেট পরিচালনাসহ আমাদের সব প্রতিষ্ঠানে থাকা অবৈধ সিন্ডিকেট না ভাঙলে আমরা প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপে যাব।” - ডাকসু প্রতিনিধি।
জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানায় রাজধানীর কাটাবনে ৩৫৩ দোকানবিশিষ্ট দ্বিতল মার্কেট রয়েছে। অন্যদিকে, রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত ও বাণিজ্যিক এলাকা ফার্মগেটে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক প্রতিষ্ঠান চারতলা ভবনবিশিষ্ট গ্রীণ সুপার মার্কেট, যেখানে ১৫৩টি দোকান রয়েছে। কাটাবন মার্কেটের দোকানপ্রতি সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা ও গ্রীণ সুপার মার্কেটের দোকানের আয়তনভেদে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকামূল্যে ভাড়া নিয়ে একটি সিন্ডিকেট ৩০ থেকে ৫৫ হাজার পর্যন্ত টাকায় ভাড়া দিচ্ছে, যা সম্পূর্ণভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের দোকান বরাদ্দ নীতিমালা বহির্ভূত। সিন্ডিকেটটি পরিচালনা করে মার্কেটগুলোর মালিক সমিতি। তবে এ সিন্ডিকেট মোকাবেলা এবং বর্তমান বাজার অনুযায়ী মার্কেট পরিচালনায় বিশ্ববিদ্যালয় কোনো কার্যকর পদক্ষেপই গ্রহণ করছে না। এক্ষেত্রে পদক্ষেপ থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় কোষাগারে বছরে ২২ কোটি টাকারও বেশি যুক্ত হত।
“দুই মার্কেটেরই ভাড়া বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই তা বাস্তবায়নের দিকে যাবে বিশ্ববিদ্যালয়।” - কোষাধ্যক্ষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের অনুসন্ধান বলছে, কাটাবন মার্কেটে গিফট ও অ্যাওয়ার্ড আইটেম, ফুল, পশুপাখি, অ্যাকুরিয়াম, ফার্নিচার এবং মোটরসাইকেলের সার্ভিসিংসহ বিভিন্ন পণ্যের দোকান রয়েছে। এগুলোর বেশিভাগেরই আয়তন ১৬০ থেকে ১৮০ স্কয়ার ফুট (বর্গফুট) করে। এগুলো বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে সুলভ মূল্যে ভাড়া এবং ইজারা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়।
তাদের কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিমাসে দোকানপ্রতি ২২ টাকা স্কয়ার ফুট মূল্যে ভাড়া আদায় করে। সে হিসেবে দোকানগুলোর আয়তন গড়ে ১৭০ স্কয়ার ফুট ধরা হলে প্রতি দোকান থেকে মাসে বিশ্ববিদ্যালয় ভাড়া পায় মাত্র ৩ হাজার ৭৪০ টাকা করে। এ হিসেবে ৩৫৩টি দোকান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পায় মোট ১৩ লাখ ২০ হাজার ২২০ টাকা।
‘বিশ্বের অধিকাংশ উন্নত বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সম্পদ কৌশলগতভাবে পরিচালনা করে উল্লেখযোগ্য রাজস্ব অর্জন করে, যা শিক্ষা ও গবেষণায় ব্যয় করা হয়। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেই মানদণ্ড থেকে অনেকটাই পিছিয়ে ।’ - অধ্যাপক, মার্কেটিং বিভাগ, ঢাবি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাটাবন মার্কেটের আশেপাশের এলাকা- যেমন: কাটাবন মোড়, শাহবাগ, হাতিরপুল ও বাটা সিগন্যাল এলাকার ১৭০ স্কয়ার ফুট আয়তনের দোকানগুলো ভাড়া নিতে ৩ থেকে ১০ লাখ টাকা জামানত দিয়ে দোকান নেওয়ার পর মাসিক ভাড়া হিসেবে অবস্থানভেদে ৩৫ থেকে ৫৫ হাজার টাকা বা তার বেশিও ভাড়া দিতে হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কাটাবন মার্কেটের দোকানগুলো থেকে যে ভাড়া পাচ্ছে, সেটির পরিমাণ আশেপাশের দোকানগুলোর ১০ থেকে ১২ গুণেরও কম।
সূত্র বলছে, বিশ্ববিদ্যালয় ৩ হাজার ৭৪০ টাকা করে ভাড়া পেলেও এ মার্কেটের প্রতিটি দোকান থেকে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া নেওয়া হয়। কারা এ ভাড়া নেয় সে ব্যাপারে মার্কেটের দোকানদারদের কাছে কৌশলে জানতে চাইলে তারা জানান, দোকানগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ভাড়া নিয়ে তৃতীয় পক্ষকে অর্থাৎ তাদের কাছে ভাড়া দেয়।
তাদের (ভাড়াটিয়া) কাছ থেকে শুরুতে মোটা অংকের জামানত নিয়ে প্রতি মাসে দোকানপ্রতি ভাড়া নেওয়া হয় ৩০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে প্রতি দোকানের ভাড়া গড়ে ৩৫ হাজার টাকা করে ধরা হলেও ৩৫৩ দোকান থেকে মাসে ১ কোটি ২৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকা আসে, যার হিসেব ১ বছরে ১৪ কোটি ৮২ লাখ ৬০ হাজার টাকা দাঁড়ায়।
“দ্বিতীয় পক্ষ দোকান অপর কাহারো নিকট ভাড়া প্রদান/সাবলেট বা বণ্টন করিয়া দিতে পারিবেন না।” - দোকান বরাদ্দ নীতিমালা বা চুক্তিনামা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
দোকানদাররা জানান, কোনো কোনো ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে একাধিক দোকান রয়েছে। এ বিষয়ে পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানদার বলেন, কারো কারো ১৫ থেকে ১৭টি দোকান থাকার কথাও শুনেছি। তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক ও আর্থিক প্রভাব খাটিয়ে এগুলো বরাদ্দ নিয়েছেন এবং ভাড়া দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের দাবি, মার্কেট যতদিন থাকবে, ততদিন তাদের স্থায়ী মালিকানা সত্ত্ব কিনে নেওয়া আছে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের ম্যানেজার (ভারপ্রাপ্ত) ফাতেমা বিনতে মুস্তাফা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, কোনো ব্যক্তি ২টি এবং প্রতিষ্ঠান ৫টির বেশি দোকান নিতে পারে না।
অন্যদিকে, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে নির্মিত হয় ফার্মগেটের গ্রীণ সুপার মার্কেট। চার তলা ভবনবিশিষ্ট এ মার্কেটে বিভিন্ন আয়তনের মোট ১৫৮ টি কক্ষ বা দোকান রয়েছে। যেগুলোতে সেনিটারি আইটেম, বিভিন্ন অফিস, চিকিৎসালয়সহ বিভিন্ন পণ্যের দোকান ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মেসার্স আবদুস সাত্তার এন্ড ব্রাদার্স কোম্পানির কাছে ২১ বছরের মেয়াদে ইজারা দিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এক সূত্র জানায়, এই প্রতিষ্ঠানটিই এ মার্কেট নির্মাণ করে দেয়, যার বিনিময়স্বরূপ ২১ বছরের মেয়াদে ইজারা দেওয়া হয়। যেটির মেয়াদ শেষ হয় ১৯৯৭ সালে।
“বিশ্ববিদ্যালয় ভাড়া বাড়ালে মালিকদের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে, সেই চাপ আবার ভাড়াটিয়া বা ব্যবসায়ীদের ওপর এসে পড়লে জুলুম হয়ে যায়। এজন্য ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলে আমরা আমাদের পদক্ষেপ নেব।” - ব্যবসায়ী সমিতির নেতা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালের পর থেকে এ মার্কেটেও দোকান ভাড়ার পদ্ধতি কাটাবন মার্কেটের মডেলেই চলমান রয়েছে। মার্কেটটির বেশিরভাগ দোকানই ইজারাদাররা তৃতীয় পক্ষের কাছে ভাড়া দিয়েছে। তারা দোকান প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়কে দোকানের আয়তনভেদে মাত্র ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা দিয়ে থাকে। আর তৃতীয় পক্ষ অর্থাৎ ভাড়াটিয়া দোকানদারদের কাছ থেকে ৩৫ থেকে ৫৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বা তারও বেশি নিয়ে থাকে। এ প্রেক্ষিতে, মার্কেটটির প্রতি দোকান থেকে গড়ে ১৫ হাজার টাকা করে ভাড়া ধরা হলে বিশ্ববিদ্যালয় মাসে মাত্র ২৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা পায়।
বিশ্ববিদ্যালয় যদি বর্তমান বাজার মূল্য ধরে দোকান ভাড়া দিতো তাহলে প্রতি দোকানের ভাড়া গড়ে ৩৫ হাজার টাকা করে ধরা হলে কাটাবনের ৩৫৩ দোকান থেকে মাসে ১ কোটি ২৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকা আয় হত; যার হিসেব এক বছরে ১৪ কোটি ৮২ লাখ ৬০ হাজার টাকা দাঁড়ায়। সেখানে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় মাসে পাচ্ছে মাত্র ১৩ লাখ ২০ হাজার ২২০ টাকা এবং বছরে মাত্র ১ কোটি ৫৮ লাখ ৪২ হাজার ৬৪০ টাকা।
অন্যদিকে, গ্রীণ সুপার মার্কেটের প্রতি দোকান থেকে গড়ে ৪২ হাজার টাকা করে ধরলেও প্রতি মাসে ১৫৮টি দোকান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় মাসে পেত ৬৬ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। প্রতি বছরে যার হিসেব দাঁড়াতো ৭ কোটি ৯৬ লাখ ৩২ হাজার। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় মাসে পাচ্ছে মাত্র ২৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা; বছরে যার হিসেব দাঁড়ায় মাত্র ২ কোটি ৮৪ লাখ ৪০ হাজার টাকায়।
আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ধাওয়া খেয়ে পালালেন ঢাবি অধ্যাপক আ ক ম জামাল
হিসেব অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় কাটাবন মার্কেটে প্রতি বছর ১৩ কোটি ২৪ লাখ ১৭ হাজার ৩৬০ হাজার টাকা এবং গ্রীণ সুপার মার্কেটে ৫ কোটি ১১ লাখ ৯২ হাজার টাকা গচ্চা দিচ্ছে। অর্থাৎ এই দুই মার্কেটে বছরে মোট ১৮ কোটি ৩৬ লাখ ৯ হাজার ৩৬০ টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, কম মূল্যে নিয়ে চওড়া মূল্যে ভাড়ার দেওয়ার সিন্ডিকেট টিকিয়ে রেখেছে মার্কেটেগুলোর মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতিগুলো। তারা এ কাজ বাস্তবায়নে এক হয়ে কাজ করে। তারা চান না বিশ্ববিদ্যালয় দোকান ভাড়া বাড়াক। এ বিষয়ে কাটাবন মার্কেটের অ্যাওয়ার্ড অ্যান্ড গিফট আইটেম ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্বদেশ মেটালিকের স্বত্বাধিকারী মুহসীন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ভাড়া বাড়ালে মালিকদের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে, সেই চাপ আবার ভাড়াটিয়া বা ব্যবসায়ীদের ওপর এসে পড়লে জুলুম হয়ে যায়। এজন্য ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলে আমরা আমাদের পদক্ষেপ নেব।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সমিতির সভাপতি আতিউর রহমান রিপন তাদের অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে কথা বলতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। তাছাড়া, এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে সমিতির সাবেক সভাপতি সুজাউদ্দিন আহমেদকে একাধিকবার ফোনে কল দিয়ে পাওয়া যায়নি।
এই দুই মার্কেট নিয়ন্ত্রণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিস। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে এস্টেট ম্যানেজার (ভারপ্রাপ্ত) ফাতেমা বিনতে মুস্তাফা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, দোকান বরাদ্দের বিষয়ে আমাদের নতুন নীতিমালা প্রস্তুতের কাজ চলমান। শিগগিরই নতুন নীতিমালা অনুযায়ী দোকানগুলোর ভাড়া নির্ধারিত হবে।
আরও পড়ুন: মাকসুদ কামাল গংদের বিচার এই স্বাধীন দেশে হবে, ট্রাইবুনালে গিয়ে কড়া হুঁশিয়ারি ভিপি সাদিক কায়েমের
বিষয়টিতে উদ্বেগ জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের নির্বাচিত সদস্য মিফতাহুল হোসাইন আল মারুফ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, মার্কেট পরিচালনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের যথেষ্ট আন্তরিকতার অভাব ও অযোগ্যতার প্রভাব স্পষ্ট। আর প্রশাসনে কিছু ব্যক্তি রয়েছেন, যারা চান না বিশ্ববিদ্যালয়ের মঙ্গল হোক বা স্মুথলি চলুক। যার কারণে, এসব বিষয়ে তারা মাথা ঘামাতে চান না।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সম্পদ আছে সেগুলোর সঠিক ব্যবহার করলে শুধুই সরকারের বাজেটের ওপর ভরসা করতে হত না। সবকিছুতে বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘বাজেট ঘাটতি’ বয়ান হাজির করতে হত না। সুতরাং, মার্কেট পরিচালনাসহ আমাদের সব প্রতিষ্ঠানে থাকা অবৈধ সিন্ডিকেট না ভাঙলে আমরা প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপে যাব।
মতামত জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক এবং সাবেক সিনেট, সিন্ডিকেট ও টেন্ডার কমিটির সদস্য ড. মো. মিজানুর রহমান বলেন, বিশ্বের অধিকাংশ উন্নত বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সম্পদ কৌশলগতভাবে পরিচালনা করে উল্লেখযোগ্য রাজস্ব অর্জন করে, যা শিক্ষা ও গবেষণায় ব্যয় করা হয়। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেই মানদণ্ড থেকে অনেকটাই পিছিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ দুটি মার্কেটসহ অন্যান্য সম্পদ থেকে প্রত্যাশিত রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে শিক্ষা ও গবেষণায় ব্যয় করার পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে।
আরও পড়ুন: ছাত্রদলের পেশিশক্তির রাজনীতি চর্চার কারণে জুলাই পরবর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রথম মৃত্যু: ডাকসু
তিনি বলেন, বাংলাদেশের বহু ক্ষেত্রে বিরাজমান সিন্ডিকেট স্বচ্ছতা ও সৎ উদ্যোগ গ্রহণের সবচেয়ে বড় বাধা। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রভাবকে বিন্দুমাত্র গুরুত্ব দেওয়া উচিত নয়। প্রশাসন যদি রাজনৈতিক চাপ উপেক্ষা করে বস্তুনিষ্ঠ উদ্যোগ গ্রহণ করে, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় উপকৃত হবে।
মার্কেটিং বিভাগের এই অধ্যাপক আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, কোষাধ্যক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সম্পদের রক্ষক। তিনি নিরপেক্ষতা, পেশাদারিত্ব ও বস্তুনিষ্ঠতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক সক্ষমতা নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে বলে আশা করা যায়।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমি দায়িত্বে আসার পর দুই মার্কেটেরই ভাড়া বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই তা বাস্তবায়নের দিকে যাবে বিশ্ববিদ্যালয়। আর ভাড়া কত করা হবে, সেটা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে কাজ চলমান আছে।
দুই মার্কেটের দোকান বরাদ্দ নীতিমালার কয়েকটি ধারা:
- জনস্বার্থে বা উন্নয়ন স্বার্থে যদি দোকানের দখল প্রথম পক্ষের (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) প্রয়োজন হয়, তবে প্রথম পক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত নোটিশ মতে নির্ধারিত সময়ে দ্বিতীয় পক্ষ (ইজারাদার/ভাড়াটিয়া) উহা খালি করিয়া দিবেন।
- প্রয়োজনীয় উন্নয়ন কাজের পর যদি দোকান পূনঃভাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, তাহা হইলে দ্বিতীয় পক্ষ পূনঃনির্ধারিত জামানত ও ভাড়ায় দোকান ভাড়া নিবার প্রথম অধিকারী হইবেন। যদি দ্বিতীয় পক্ষ পুনঃনির্ধারিত শর্তে দোকান নিতে রাজি না হন অথবা যদি প্রথম পক্ষ দোকানের উন্নয়নের পর তাহাকে দোকান ভাড়া দিতে ব্যর্থ হয়, তাহা হইলে দ্বিতীয় পক্ষ হইতে জামানত, প্রথম পক্ষে পাওনা (যদি থাকে) সমন্বয় করিয়া ফেরত দেওয়া হইবে।
- দ্বিতীয় পক্ষ দোকান অপর কাহারো নিকট ভাড়া প্রদান/সাবলেট বা বণ্টন করিয়া দিতে পারিবেন না।
- প্রথম পক্ষের স্বার্থের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় পক্ষ কোন প্রকার অনিষ্টকর অথবা অনিয়মতান্ত্রিক কার্যকলাপ কিংবা, প্রথম পক্ষের সময়োপযোগী আরোপিত যে কোন আদেশ বা নির্দেশ দ্বিতীয় পক্ষ অমান্য করিলে এক মাসের লিখিত নোটিশ প্রদানপূর্বক উক্ত ভাড়াটিয়া চুক্তি বাতিল হইবে।
- প্রথম পক্ষের পূর্ব অনুমোদন ব্যতিরেকে দ্বিতীয় পক্ষ ইজারাকৃত দোকানের ভাড়াটিয়া স্বত্ত্ব অন্য কাহারও নিকট হস্তান্তর করিবেন না। যদি উক্ত দোকানের দখল হস্তান্তর করার জন্য প্রথম পক্ষ হইতে অনুমোদন নেওয়া হয় তাহা হইলে দ্বিতীয় পক্ষ হস্তান্তর ফি বাবদ প্রথম পক্ষকে ১ লক্ষ টাকা প্রদান করিতে হইবে।
- প্রথম পক্ষের স্বার্থ সংরক্ষণের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় পক্ষ কোনো প্রকার অনিষ্টকর, অনিয়মতান্ত্রিক কার্যকলাপ কিংবা প্রথম পক্ষের সময়োপযোগী আরোপিত যে কোনো আদেশ বা নির্দেশ দ্বিতীয় পক্ষ কর্তৃক অমান্য করিলে এক মাসের লিখিত নোটিশ প্রদান পূর্বক উক্ত ইজারা/বরাদ্দ বাতিল হইবে।