‘গবেষণা পদ্ধতি শেখানো’র ক্লাস নেবেন গবেষণা প্রবন্ধ জালিয়াতিতে অভিযুক্ত রাবি অধ্যাপক
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৫, ০৮:০৫ PM , আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২৫, ০১:৪৪ PM
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. সাহাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে গবেষণা প্রবন্ধ জালিয়াতির অভিযোগ আনেন তারই সহকর্মী ও আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোরশেদুল ইসলাম। এ নিয়ে গত বছরের ২৪ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও জমা হয়নি প্রতিবেদন। নিয়মানুযায়ী তাকে দেওয়া হয়নি কোনো অব্যাহতি, বরং বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে তাকে রিসার্চ মেথডোলজি (গবেষণা পদ্ধতি শেখানো) ক্লাস নেওয়ার সুযোগ দিয়ে করা হয়েছে সম্মানিত। এতে চরম ক্ষুব্ধ প্রকাশ করেছেন বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকেরা।
অধ্যাপক সাহাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ২০১২ সালের ৮ আগস্টে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদায়নের জন্য আবেদন করেন। আবেদনপত্রে তিনি তিনটি প্রকাশনার কথা উল্লেখ করেন। যার মধ্যে একটি বাংলা প্রকাশনা আছে। ইংরেজিতে লেখা দুটি প্রকাশনা হলো ‘দ্য আনহোলি ডিলে অব দ্য লাস্ট কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট: বাংলাদেশ ইজ অন দ্য ভার্জ অব আ কনস্টিটিউশনাল ক্রাইসিস এবং কনফ্লিক্ট অব লজ অ্যান্ড ইটস ইমপ্যাক্ট অন চাইল্ড লেবার ইস্যুজ: বাংলাদেশ পার্সপেক্টিভ।
প্রকৃতপক্ষে অন্য লেখকের এবং তা তিনি জালিয়াতির মাধ্যমে নিজের নামে প্রকাশ করেছেন বলে অভিযোগ করেন তারই সহকর্মী অধ্যাপক মোরশেদুল ইসলাম। তিনি অভিযোগ করেন, উল্লিখিত প্রকাশনাগুলোতে প্লেজিয়ারিজমের হার যথাক্রমে ৬৪ শতাংশ ও ৭৬ শতাংশ।
আরও পড়ুন: দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বোর্ড-বিষয় পরিবর্তনের তারিখ ঘোষণা
তিনি আরও অভিযোগ করেন, পুনরায় ২০১৮ সালের ৪ জানুয়ারিতে ড. সাহাল উদ্দিন অধ্যাপক পদে পদায়নের জন্য যে ছয়টি প্রকাশনা তার নিজের বলে দাবি করেছেন, সেগুলোর সবই অন্যের কাজ থেকে চুরি করে প্রকাশিত বলে প্রমাণিত হয়েছে। প্রকাশনাগুলো হলো ‘পলিসি অ্যান্ড প্র্যাকটিস অব ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি ল: বাংলাদেশ পার্সপেক্টিভ), ইন্টারন্যাশনাল লিগ্যাল অবলিগেশন্স অব বাংলাদেশ ইন আর্বিট্রারি অ্যারেস্ট, রিম্যান্ড অ্যান্ড টর্চার: এ ক্রিটিকাল অ্যানালাইসিস, রোল অব ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন ইন কমব্যাটিং টেরোরিজম ইন দ্য এয়ার স্পেস: এ লিগ্যাল স্ট্যাডি উইথ রিলেভ্যান্ট ইন্টারন্যাশনাল ইনস্ট্রুমেন্টস, রেকগনিশন অব লেবার রাইটস ইন বাংলাদেশ: ক্রিটিকাল স্ট্যাডি উইথ স্পেশাল রেফারেন্স টু দ্য স্ট্যান্ডার্ড অব আইএলও, চাইল্ড লেবার লজ অ্যান্ড পলিসিস ইন হোম অ্যান্ড অ্যাব্রড: ইশুজ অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস উইথ স্পেশাল রেফারেন্স টু বাংলাদেশ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিসপিউট সেটলমেন্ট মেকানিজম অ্যান্ড ইটস ইফেক্টিভনেস বাংলাদেশ পার্সপেক্টিভ।
উপর্যুক্ত প্রকাশনাগুলোয় চৌর্যবৃত্তির হার উল্লেখ করে অধ্যাপক মোরশেদুল বলেন, উপর্যুক্ত প্রকাশনাগুলোতে চৌর্যবৃত্তির হার যথাক্রমে ৯৩ শতাংশ, ৮৫ শতাংশ, ৬৬ শতাংশ, ৬৪ শতাংশ, ৫৬ শতাংশ ও ৩৭ শতাংশ।
আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সালমা আক্তার খানম বলেন, ‘নরমালি কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠলে প্রমাণ সাপেক্ষে তাকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়। তবে কেন অধ্যাপক সাহালকে অব্যাহতি দেওয়া হলো না, এটা আমার জানা নেই। আমরা যখন জেনেছিলাম ক্লাস দেওয়ার বিষয়ে আমরা তখন এর বিরোধিতা করেছিলাম। উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে বলেছিলাম এটা দেওয়া ঠিক হবে না। তারপরও তারা দিয়েছেন। আমরা এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ।’
আরও পড়ুন: ম্যানহোলে পড়ে নিখোঁজ নারী, ২২ ঘণ্টায়ও সন্ধান না পেয়ে মহাসড়ক অবরোধ
আইন বিভাগের আরেক অধ্যাপক ড. মো. মোরশেদুল ইসলাম বলেন, ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রকাশনা জালিয়াতির অভিযোগ আছে, তাকে কীভাবে রিসার্চ মেথডলজির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ক্লাস দেওয়া হয়? তার তো গবেষণা নিয়ে কোনো জ্ঞানই নেই, তাহলে তিনি কীভাবে শিক্ষার্থীদের শেখাবেন? তিনি জানলে কি জালিয়াতি করতেন? ঘটনাটা একজন মূর্খকে শিক্ষিত মানুষদের পড়ানোর দায়িত্ব দেওয়ার মতো হয়ে গেল। এটা বাস্তবতা বর্জিত।
ক্লাস পাওয়ার বিষয়ে অধ্যাপক সাহাল উদ্দিন বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই, প্রশাসন থেকে আমি কোনো চিঠি পায়নি। আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। যে অভিযোগ করছে তার বিরুদ্ধে নিউজ করেন, সে ঠিকমতো ক্লাস নেয় না, শিক্ষার্থীদের নাম্বার দেয় না। তার জন্য শিক্ষার্থীরা সাফার করছে।’
তবে তদন্ত কমিটি গঠিত হওয়ার বিষয়টা স্বীকার করেন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক বেলাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘তদন্ত কমিটি চলমান। তবে এখনো তদন্ত কমিটির সব কাগজপত্র আমি পাইনি। এগুলো সামনের সপ্তাহে দেওয়ার কথা আছে। যদি সামনের সপ্তাহে দেয়, তাহলে আমরা দ্রুতই তদন্ত শেষ করব।’
আরও পড়ুন: ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা আগামীকাল
তদন্ত কমিটির স্বার্থে অব্যাহতি না দেওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ বলেন, কেউ যদি প্রশাসনিক বা একাডেমিক দুর্নীতি করে, সে ক্ষেত্রে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। কিন্তু তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগটা প্রকাশনা জালিয়াতির এটা ব্যক্তিগত একটা বিষয়। যার জন্য তাকে সিন্ডিকেট থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়নি।
তিনি আরও বলেন, পুলিশ একাডেমিতে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, এর জন্য প্রশাসন দায়ী না।