শিক্ষার্থীদের জটিল পড়াশোনা সহজ করতে গুগলের ৯ ফিচার

শিক্ষার্থীদের কঠিন পড়াশোনা সহজ করতে গুগলের নতুন ফিচার
শিক্ষার্থীদের কঠিন পড়াশোনা সহজ করতে গুগলের নতুন ফিচার  © এআই সম্পাদিত ছবি

আগে পড়াশোনা মানে ছিল বইয়ের পর বই উল্টে দেখা, হাতে লিখে নোট নেওয়া, আর মুখস্থের ওপর নির্ভর করে শেখা বিষয়টা কতটা বোঝা হলো, তা গৌণ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) আসার পর সেই শেখার ধরন বদলে গেছে। এখন শিক্ষার্থীদের হাতে এসেছে এমন কিছু প্রযুক্তি, যা তাদের স্মার্টভাবে শেখায় সাহায্য করছে। কঠিন পরিশ্রম নয়, বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে অধ্যয়ন।

গুগল জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের হাতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি তুলে দিতে তারা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। বর্তমানে ভারতের দুই মিলিয়নেরও বেশি শিক্ষার্থী গুগলের সাম্প্রতিক Google AI Pro Student Offer-এর সুবিধা পাচ্ছে। এর মাধ্যমে তারা আগামী এক বছর বিনামূল্যে গুগলের সর্বাধুনিক এআই টুলগুলো ব্যবহার করতে পারবে।

গুগলের দাবি, তাদের এআই-চালিত শেখার সরঞ্জাম শুধু তাৎক্ষণিক উত্তর দেওয়ার জন্য নয়, বরং শিক্ষার্থীদের শেখার প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করার জন্য তৈরি। কোম্পানিটি বলছে, এসব টুল মানুষের শেখার মনোবিজ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে তৈরি।

সম্প্রতি গুগল তার তিনটি মূল টুল—Gemini, NotebookLM এবং Search এর মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে শেখার নয়টি কার্যকর উপায় প্রকাশ করেছে। নিচে গুগলের সেই নির্দেশনাগুলোর সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হলো—

আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় সেরা ৫টি অ্যাপ

প্রথমত, Guided Learning বা দিকনির্দেশনাভিত্তিক শেখার সুবিধা। এখানে প্রশ্ন করলে সরাসরি উত্তর না দিয়ে টুলটি সমস্যাকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে চিন্তা করতে শেখায়। উদাহরণস্বরূপ, পদার্থবিজ্ঞানের একটি ধারণা না বুঝলে এটি বলে, ‘এই অনুমানটা বদলালে কী হয়, চলুন ধাপে ধাপে দেখি।’

দ্বিতীয়ত, এআই-চালিত ফ্ল্যাশকার্ড ও গাইড তৈরি। শিক্ষার্থীরা তাদের ক্লাস নোট, খাতার ছবি বা টাইপ করা লেখা থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফ্ল্যাশকার্ড, কুইজ বা গাইড তৈরি করতে পারে। যেমন, জীববিজ্ঞানের খাতার ছবি তুললে প্রতিটি অধ্যায়ের ওপর ভিত্তি করে প্রশ্ন তৈরি হয়ে যায়।

তৃতীয়ত, ভয়েস ও ক্যামেরা ব্যবহার। ফোনের ক্যামেরা দিয়ে জ্যামিতির সমস্যা বা কোনো চিত্র দেখিয়ে প্রশ্ন করলে এআই তাৎক্ষণিকভাবে কথার মাধ্যমে গাইড দেয়। আর টাইপ করার ঝামেলা নেই।

চতুর্থত, দীর্ঘ লেখা বা জটিল ডকুমেন্টের সারাংশ তৈরি। কোনো ৩০ পাতার গবেষণাপত্র আপলোড করলে টুলটি সহজ ভাষায় অডিও বা ভিডিও সারাংশ তৈরি করে দেয়, এমনকি ভারতীয় আঞ্চলিক ভাষাতেও।

পঞ্চমত, ভিজ্যুয়াল মানচিত্রে ধারণাগুলোর সংযোগ দেখানো। এতে আলাদা আলাদা নোটের বদলে ধারণাগুলোর সম্পর্ক বোঝা যায়। যেমন, ‘ইনপুট ডেটা’, ‘ইউজার বিহেভিয়ার’, ‘আউটকাম’, ‘বায়াস’—এই উপাদানগুলো কীভাবে যুক্ত, তা মানচিত্রে দেখা যায়।

ষষ্ঠত, নিজস্ব উপকরণ থেকে ইন্টারঅ্যাকটিভ সিলেবাস তৈরি। ক্লাস নোট, পিডিএফ, স্লাইড আপলোড করলে টুলটি সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে কুইজ ও ফ্ল্যাশকার্ড তৈরি করে দেয়।

সপ্তমত, নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর তাৎক্ষণিক স্টাডি গাইড তৈরি। যেমন, Graph Neural Networks নিয়ে আমার স্লাইডগুলো থেকে একটি স্টাডি গাইড বানাও, বললেই সম্পূর্ণ সাজানো স্টাডি গাইড তৈরি হয়।

অষ্টমত, Lens-এ এআই মোডে সার্চ করা। এখানে লেখার বদলে বইয়ের পৃষ্ঠার ছবি তুলে প্রশ্ন করা যায়। যেমন, রসায়নের জটিল গঠনবিশিষ্ট ছবি তুলে প্রশ্ন করলে এর পরের বিক্রিয়াটি কী? —টুল ব্যাখ্যা করে দেয়।

নবমত, রিয়েল-টাইম ভয়েস ও ক্যামেরা প্রশ্নোত্তর। ইংরেজি বা হিন্দিতে সরাসরি প্রশ্ন করলে তাৎক্ষণিকভাবে দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়।

এই দ্রুত উন্নয়নশীল এআই টুলগুলো শেখাকে করছে মজাদার, ইন্টারঅ্যাকটিভ ও বহুমাত্রিক। শিক্ষার্থীরা এখন তাদের নিজের নোট ব্যবহার করে ভিজ্যুয়াল ও অডিও দুইভাবেই পড়াশোনা করতে পারছে এবং ভাষাগত বাধাও কাটিয়ে উঠছে। তবে গুগলের পরামর্শ—এসব টুল শেখাকে সহজ করবে ঠিকই, কিন্তু মানুষের মনোযোগ, পরিশ্রম ও অনুপ্রেরণার বিকল্প নয়।

গুগল বলছে, ‘এআই আপনাকে শেখার পথে দিকনির্দেশনা দেবে, কিন্তু শেখার দায়িত্ব শেষ পর্যন্ত আপনারই।’


সর্বশেষ সংবাদ