নবধারার নবান্ন; কুবিতে প্রতিবর্তনের সুর-ছন্দের উৎসব
- আকাশ আল মামুন, কুবি
- প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:১৬ AM , আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৩১ AM
হেমন্তের গোধুলি লগ্নে কুয়াশার চাঁদর মুড়িয়ে হিম বাতাস নেমে আসে ধরনীতে। শীতল বাতাসের তীব্র কামড়ে যখন মানুষের দেহ জমে স্থির হয়ে যায় তখনই গানের সুর হৃদয়কে মাতিয়ে তুলে আপন ছন্দে।
ততক্ষণে মুক্তমঞ্চে আলো ফুটল বাঁশির সুর আর তবলা ও এসরাজের মেলবন্ধনে। প্রতিবর্তনের অনুষ্ঠানে জড়ো হয়েছেন কয়েক শ শ্রোতা ও দর্শক। অনুষ্ঠান শুরু হয় বিখ্যাত গীতিকার আব্দুল লতিফ এর কোরাজ সংগীত ‘ও ধান ভানিরে ঢেঁকিতে পার দিয়া’ দিয়ে।
আজ বৃহস্পতিবার ছিলো কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) সাংস্কৃতিক সংগঠন 'প্রতিবর্তন' এর উদ্যোগে আয়োজিত হয়েছে 'প্রতিবর্রন নবান্ন উৎসব - ১৪৩২'। হেমন্ত উৎসব ঘিরে নবধানের আনন্দে কোরাজ, লোকসঙ্গীত, নৃত্য ও আবৃত্তির পরিবেশন করেছে প্রতিবর্তনের সদস্যরা।
পূর্ণিমার চাঁদের জ্যোৎস্না তখন কুয়াশাজড়ানো রাতের অন্ধকার কাটিয়ে আলোতে ঝলমল করছে। অনুষ্ঠান তখনো চলছে। বাংলার সমতট অঞ্চল কুমিল্লা'র স্থানীয় একটি ব্যান্ড 'সমান্তরাল' এবং 'প্রতিবর্তন' এর সদস্যরা তখন পরিবেশন করছিলো কোরাজ ও লোকসংগীত 'কলকল চলচল,নদী করে টলমল', 'বড় সাধ করে পড়েছি গলে', 'নারী হয় লজ্জাতে লাল', 'কালো জলে কুচলা তলে', 'আমি তোমায় না দেখি', 'আয়নাতে অই মুখ', 'ওকি গাড়িয়াল ভাই', 'অন্ধ দেয়াল', 'হাড় কালা করলাম রে', 'এই যে দুনিয়া', 'দেখেছি রূপসাগরে', 'ভেংগে মোর ঘরের চাবি', 'আমায় ডেকো না'।
তখন দর্শক-শ্রোতায় কানায় কানায় পূর্ণ মুক্তমঞ্চের প্রাঙ্গণ। উজ্জীবিত দর্শক-শ্রোতার হাততাল ও আনন্দ ধ্বনিতে অনুপ্রাণিত হন শিল্পীরা।
লালমাই পাহাড়ের কুবি ক্যাম্পাসে তখন অগ্রহায়ণের কোমল শীতল বাতাস বয়ে যায়। শিল্পীদের শব্দ এবং সুরের ঝংকারে তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের আকাশে তৈরি হয়েছে এক নবসৃষ্টির আবহ। কণ্ঠশিল্পী ও আবৃত্তিকারগণ ফুটিয়ে তোলেছেন আবহমান বাংলার আপামর জনতা ও কৃষকদের জীবনের প্রতিচ্ছবি - এ যেন জীবনানন্দের বাংলার এক চিরায়ত রুপ।
অনুষ্ঠানে প্রাণ সঞ্চার করতে এবং শিল্পীদেরকে উজ্জীবিত করতে উপস্থিত ছিলেন গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জিল্লুর রহমান, অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. নাসির হোসাইন এবং প্রতিবর্তনের উপদেষ্টা সহকারী প্রক্টর মাহমুদুল হাসান।
প্রতিবর্তনের সভাপতি মাহমুদুল হাসান হৃদয় বলেন, 'প্রতিবর্তন সবসময় কাজ করে এসেছে বাংলা সংস্কৃতিকে লালন ও প্রচারের জন্য। আমাদের লক্ষ্য শুধু অনুষ্ঠান নয়—আমরা চাই তরুণ প্রজন্ম বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্যকে জানুক, উপলব্ধি করুক, এবং লালন করে ভবিষ্যতের হাতে তুলে দিক। কারণ যে জাতি তার সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে পারে, সেই জাতিই ভবিষ্যতে শক্ত ভিত্তিতে দাঁড় করাতে পারে।'