কুবির শতকরা সাতজন শিক্ষার্থী বিষণ্নতায় ভুগছেন: মেডিকেল অফিসার
- আকাশ আল মামুন, কুবি
- প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৫, ০২:১৬ PM , আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৫, ০২:২০ PM
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শতকরা সাতজন শিক্ষার্থী বর্তমানে বিষণ্নতা ও মানসিক অস্থিরতায় ভুগছেন বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের ডেপুটি চিফ মেডিকেল অফিসার ও মনোবিজ্ঞানী ড. মো. বেলায়েত হোসেন ভূঁইয়া।
দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেন, ‘আগে যেখানে মাসে গড়ে ১০–১২ জন শিক্ষার্থী মানসিক সমস্যার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে আসতেন। সেখানে এখন প্রতিদিনই ৩-৪ জন করে মনোবিজ্ঞানী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ বেড়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের জন্য সেভাবে এখনো স্থায়ীভাবে কোনো মানসিক সহায়তা কেন্দ্র বা হেল্প ডেস্ক নেই এখানে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রেমে ব্যর্থতা, ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তা, একাডেমিক ফল খারাপ, পারিবারিক সংকট, অর্থকষ্ট এমনকি পর্নোগ্রাফি আসক্তির কারণেও শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন।’
উদাহরণ হিসেবে তিনি জানান, সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর এক শিক্ষার্থী দীর্ঘদিন ধরে বিষণ্নতায় ভুগছেন, এমনকি বর্তমানে শিক্ষকতা শুরু করলেও মানসিক অস্থিরতা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। আবার আরেক শিক্ষার্থী ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েন, বাড়ি থেকে মা বলছেন বিসিএস পরীক্ষা দেয়ার জন্য কিন্তু সে প্রস্তুতি নেয়নি। তিনি কাঁদতে কাঁদতে আমাকে জানান।
ড. বেলায়েত মনে করেন, এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সবচেয়ে জরুরি জনসচেতনতা। সেমিনার, আলোচনা আর শিক্ষার্থীদের সেল্ফ মোটিভেশন ছাড়া এটা ঠেকানো যাবে না।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, মানসিক অস্থিরতা বা বিষণ্নতা হলো এক ধরনের মানসিক রোগ, যেখানে দীর্ঘসময় ধরে দুঃখ, হতাশা ও আগ্রহহীনতা দেখা দেয়। এতে মানুষের স্বাভাবিক কাজকর্ম, পড়াশোনা, সামাজিকতা ও চিন্তাশক্তি ব্যাহত হয়। এটি শুধু সাময়িক মন খারাপ নয়, বরং চিকিৎসা প্রয়োজন এমন একটি অবস্থা। সঠিক পরিচর্যা, পরামর্শ ও চিকিৎসার মাধ্যমে বিষণ্নতা থেকে সুস্থ হওয়া সম্ভব।
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী দিলোয়ার হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি একজন স্থায়ী মনোবিজ্ঞানী থাকতেন, তাহলে শিক্ষার্থীরা সহজে কাউন্সেলিং নিতে পারতো। সেমিনার করলে সবাই একসঙ্গে শোনে, কিন্তু ব্যক্তিগত সমস্যার কথা বলা যায় না। তাই হেল্প ডেস্ক এবং কনসালটেন্ট খুব জরুরি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শক আব্দুল্লাহ আল মাহবুব দ্বীপু বলেন, “আমরা বছরের শুরুতে একটি সাইকোলজিক্যাল সেমিনার করেছি। কিন্তু সমাধান শুধু সেমিনানে নয়, বরং শিক্ষার্থীদের জন্য একজন দক্ষ স্থায়ী কনসালটেন্ট দরকার। সেমিনারে শুধু ৫০-৬০ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকতে পারেন।
তিনি জানান, প্রতিটি বিভাগে মানসিক স্বাস্থ্য–সচেতনতা বাড়াতে বিভাগীয় ছাত্র পরামর্শকদেরকে উদ্যোগ নিতে এবং বিভাগ ভিত্তিতে সেমিনার আয়োজন করার জন্য অনুরোধ করছি। স্থায়ী কনসালটেন্ট নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, “আলোচনা হয়েছে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রশাসন নেবে।”
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, আমরা এবছরে সাইকোলজির একজন শিক্ষক দ্বারা একটি সেমিনার আয়োজন করেছি। কিন্তু যারা আসলেই ফ্রাস্ট্রেটেড তারা সেই সেমিনারগুলোতে আসে না। আমরা যদি সরকারের কাছে একজন সাইকিয়াট্রিস্ট এর জন্য আবেদন করি সেটা অনুমোদন হতে হতে ছয়মাসও লাগতে পারে। আমরা এটা নিয়ে ভাবছি কীভাবে শিক্ষার্থীদেরকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়। ধর্মীয় বিশ্বাস এবং অনুশীলন এখানে ভালো একটি ভূমিকা রাখতে পারে।