‘রাজনীতি নিষিদ্ধ’ কুবি ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে কার্যক্রম ছাত্রদলের

কুবি ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের কার্যক্রম
কুবি ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের কার্যক্রম  © টিডিসি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) প্রশাসন প্রজ্ঞাপন জারি করে ক্যাম্পাসে সব ধরনের ‘রাজনীতি নিষিদ্ধ’ করেছে। তবে প্রশাসনের উদাসীনতায় প্রকাশ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ছাত্রদল। এসব ঘটনার কিছুই জানে না বলে জানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

জানা যায়, ৪ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে মতবিনিময় ও ফর্ম বিতরণ সভা আয়োজন করতে চাইলে প্রশাসনের অনুমতি পায়নি। পরবর্তীতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে সভাটি আয়োজন করেন ছাত্রদল। এরপর প্রশাসনকে না জানিয়েই মাসব্যাপী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে (৭ নভেম্বর) শুক্রবার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের দেওয়ালে দলীয় পোস্টার লাগান শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। পরে বিজয়-২৪ হলের ৫০৪ নম্বর কক্ষের দরজায়ও একই পোস্টার লাগানো হয়। এর ধারাবাহিকতায় আজ শনিবার (৮ নভেম্বর) প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই দলীয় ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালন করে সংগঠনটি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তবে, আওয়ামী লীগের আমলে প্রশাসনের সাথে লিয়াজু করে দলীয় ও ছাত্ররাজনীতি করেন আওয়ামিলীগ পন্থি শিক্ষক ও ছাত্রলীগ। দীর্ঘ সময়ে নানা ধরনের সংঘাত ও অন্যায় কার্যক্রম চলে আসছিল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) ক্যাম্পাসে। একাধিকবার বিভিন্ন মতের শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক কারণে পড়াশোনা ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল। রাজনৈতিক কারনে বিশ্ববিদ্যালয়ে মারামারি, গোলাগুলি, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল। রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে ২০১৬ সালের গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী খালেদ সাইফুল্লাহ। 

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশের ছাত্রজনতা উৎখাত করার পর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে পুনরায় রাজনীতি ও ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সর্বশেষ চলতি বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুনরায় প্রজ্ঞাপন জারি করে ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করলে তাদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়। 

তবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল একাধিক কার্যক্রম পরিচালনা করলেও এখনো পর্যন্ত কোনো ব্যাবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, প্রশাসন চাইলে এসব রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ করতে পারে। তবে তারা তা করছেন না। 

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রশাসনের উদাসিনতায় ছাত্রলীগের মতো পুনরায় রাজনীতি ফিরে আসতে পারে। বিএনপিপন্থী প্রশাসন ছাত্রদলের সাথে লিয়াজু করে রাজনীতি চালু করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।  এ ছাড়াও, প্রশাসনকে না জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফারুক নাহিয়ান বলেন, ছাত্ররাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাসে বিভিন্ন জাতীয় দিবস সম্পর্কে আলোচনা সভা, সেমিনার, পাঠচক্র ইত্যাদি করা যায়। বিপ্লব ও সংহতি দিবস ও বাংলাদেশের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় একটি দিন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ছাত্রদলের ব্যানারে যখন এই প্রোগ্রাম হয় তখন সেইটা জাতীয় প্রোগ্রামের বদলে দলীয় প্রোগ্রামে রূপ নেয়। আমরা মেরুদণ্ডহীন প্রশাসনের সার্কাস দেখছি পাশাপাশি সচেতন শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা আমাদের ক্যাম্পাসকে ছাত্ররাজনীতি মুক্ত রাখার জন্য কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখাব।’

শিক্ষার্থী সাইদুল ইসলাম বলেন, গতবছর সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। পাশাপাশি গত ১৪ সেপ্টেম্বর, প্রক্টোরিয়াল বডি থেকে জরুরি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল যে, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক কার্যক্রম করলে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। অথচ আজকে একটি রাজনৈতিক দল বিশ্বিবদ্যালয় প্রশাসন ও সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে মুক্তমঞ্চে রাজনৈতিক অনুষ্ঠান করেছে। যা সম্পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দ্বিচারিতার প্রকাশ পায়। তারা আইন বাস্তবায়ন করতে পারছেন না বলেই রাজনৈতিক দল সাহস করে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক অনুষ্ঠান করতে পারছে। প্রশাসন ছাত্রদলকে সুবিধা দিচ্ছে কিনা সেটা ভাবার বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ ও আইন বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুরোধ করছি। রাজনীতি নিষিদ্ধ ক্যাম্পাসে আমরা আর কোনো রাজনৈতিক অনুষ্ঠান দেখতে চাই না। 

রাজনীতি নিষিদ্ধ ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক ব্যানারে পোস্টার এবং সভার করার বিষয়ে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি নিষিদ্ধ মানে আমার স্বাধীনতাকে হরণ করা হচ্ছে। আমার কথা বলার এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য যেন বিনষ্ট না হয় ক্যাম্পাসে অভ্যন্তরে কোনো পোস্টার লাগাইনি। ক্যাম্পাসের বাহিরে গেটের দেয়ালে দুইপাশে লাগিয়েছি। হলের ভিতরে পোস্ট লাগানোর বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমরা খোঁজ খবর নিয়েছি এটা ষড়যন্ত্র করে ছাত্রদলকে শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি করার জন্য তাদের কাজ এটা। তারা চায় ছাত্রদলকে কীভাবে বিতর্কিত করা যায়।

এ বিষয়ে প্রক্টর ড. মো. আব্দুল হাকিম বলেন, ছাত্রদল ক্যাম্পাসে কোনো কার্যক্রম চালাচ্ছে কিনা তা জানি না। যদি চালিয়ে থাকে, আমাদের কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেয়নি। তাদের বিষয় কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি জেনে আগামীকাল আমরা বসে সিদ্ধান্ত নিব।

ছাত্রদলের কার্যক্রম প্রতিবেদকের কাছ থেকেই প্রথম শুনেছেন বলে জানিয়েছেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল। তিনি বলেন, ছাত্রদলকে ক্যাম্পাসে কখনো কোনো কার্যক্রম চালাতে দেখিনি। আর তারা যে গতকাল ও আজকে কর্মসূচি পালন করেছে তা আপনার থেকে শুনলাম। 

রাজনীতি নিষিদ্ধ ক্যাম্পাসে প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর মতো কোনো কাজ করেছেন কিনা তা আগামীকাল জেনে তারপর বলতে পারবো।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence