শিক্ষার্থীদের কাড়াকাড়িতে মুহূর্তেই শেষ ইবি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ৪৭ পাউন্ডের কেক
- ইবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:২১ PM
৪৭তম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে বর্ণাঢ্য উদযাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরই অংশ হিসেবে ৪৭ পাউন্ডের কেক কেটে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করে ইবি প্রশাসন। তবে, কেক কাটার সময় একদল শিক্ষার্থীর কাড়াকাড়িতে মুহূর্তের মধ্যেই উধাও হয়ে যায় ৪৭ পাউন্ডের কেকটি৷ এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছড়িয়ে পড়লে তা ভাইরাল হয়ে যায়।
জানা গেছে, ঘটনার সূত্রপাত হয় শনিবার (২২ নভেম্বর) সকাল ১১টার দিকে ইবির কেন্দ্রীয় ফুটবল মাঠে। ৪৭তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে বিশেষ কেকের ব্যবস্থা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠান উদ্বোধনের পর শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে কেক কাটতে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ, উপ-উপাচার্য ড. এম এয়াকুব আলী, ট্রেজারার ড. জাহাঙ্গীর আলম, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ড. মনজুরুল হক, আয়োজক কমিটির আহবায়ক ড. আলীনূর রহমানসহ সংশ্লিষ্টরা।
এসময় কেক কাটার আগেই কেকের চারপাশে ভিড় জমাতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। সবার উপস্থিতিতে কেক কেটে প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা একে অপরকে খাইয়ে দেওয়ার পর স্থান ত্যাগ করেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নিজ তত্ত্বাবধানে ৪৭ পাউন্ডের কেকটি ছোট ছোট টুকরায় কেটে রাখছিলেন। এসময় মুহুর্তের মধ্যেই উপস্থিত শিক্ষার্থীরা থাবা মেরে এবং কাড়াকাড়ি করে কেক নিতে থাকেন। কেক নেওয়ার সময় তাদের ধাক্কাধাক্কির একপর্যায়ে কেকের টেবিলটিও ভেঙে যায়৷ তারপর অনেককে মাটিতে পড়ে যাওয়া সেই টেবিলে লেগে থাকা কেকও মুঠোভরে তুলতে দেখা যায়। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামানের পোষাকে কেকের ক্রিম লেগে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
এদিকে, কেক নিয়ে কাড়াকাড়ির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করলে মুহূর্তের মধ্যেই তা ভাইরাল হয়ে যায়। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও নেটিজেনরা ঘটনার ভিডিও শেয়ার করে ব্যাঙ্গাত্মক ক্যাপশন দিয়ে ট্রল করতে থাকেন। কেউ কেউ ইবির এসব শিক্ষার্থীদের মন-মানসিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন৷
এ বিষয়ে শিক্ষার্থী মির্জা শাহরিয়ার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের কেক নিয়ে এরকম ছোটলোকী আমি কখনো দেখিনি৷ কেক তো দূর্লভ কোন খাদ্য নয়, ক্যাম্পাসের সামনেই কেকের দোকান রয়েছে। এমনিতেই বিভিন্ন ভাইবা বোর্ডে বা চাকরির পরীক্ষার আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্য চোখে দেখা হয়। আজকের লজ্জাজনক এই ঘটনার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসম্মান ধুলোয় মিশে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিৎ ছিলো বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে আরও সুন্দর ব্যবস্থাপনা করা।
আরও পড়ুন: জাতীয় দলের গণসংযোগে বিএনপি নেতার নেতৃত্বে হামলায় গুলিবিদ্ধ ২, আহত ২০
মার্কেটিং বিভাগের মনির হোসেন ফেসবুকে লিখেছেন, কিছু ছোটলোকের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিবসে নিজেরই এখন হীনমন্যতায় ভুগতে হচ্ছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়ে? সামান্য কেক খাওয়ার জন্য যারা মরিয়া হয়ে, হুমড়ি খেয়ে পড়ে তারা পড়ে? এত নিচু জাতের প্রাণী একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, ভাবতেই লজ্জার লাগছে। ৫টা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৫ জন বন্ধু মেনশন করেছে, এই কেক কাণ্ডের ভিডিওতে। এই মুহূর্তে ইবির স্টুডেন্ট হিসেবে এর থেকে লজ্জার আর কি হতে পারে? একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসন্মান তো নষ্ট হলোই, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে মর্যাদাটুকুও ক্ষুণ্ন হলো।
আল ফিকহ বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিব লেখেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হলো। একটা ভিডিও প্রায় সব ভার্সিটি ইনসাইডার পেজগুলো থেকে শেয়ার করা হচ্ছে এবং সেখানে হা হা রিয়েক্রটের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। কারণ কি, জানেন? ঐখানে কিছু অদ্ভুত প্রাণী হুমড়ি খেয়ে পড়ে কেকগুলো দুহাতে মাখিয়ে নিচ্ছিলো, যা দেখতে নিতান্তই বস্তি লাগছিলো। অন্যান্য ভার্সিটির বন্ধুরা মেনশন দিয়ে মজা নিচ্ছে। কিন্তু আমি তো এরকম পাগলামির শামিল হইনি, তাহলে আমি কেন অন্য ভার্সিটির বন্ধুদের কাছে অপমানিত হবো? আর কতভাবে ট্রল হতে চান আপনারা? দয়াকরে একটু সভ্য হোন। ধৈর্য ধারণ করতে শিখুন, মিনিমাম ম্যানার দেখানো উচিত। আপনাদের সাথে টিকটকার দের কোনো পার্থক্য নেই।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, কেক মূলত শিক্ষার্থীদের জন্যই আনা হয়েছিল। আমাদের নিয়ত ছিল উপস্থিত প্রতিটি শিক্ষার্থীকে কেক দেওয়া৷ একটি অনুষ্ঠানকে সাফল্যমণ্ডিত করার দায়িত্ব শুধু প্রশাসনের নয়, শিক্ষার্থীদেরও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়ালে ওখানে উপস্থিত সবাই কেক পেত। আমি সুন্দরভাবে কেটে সবাইকেই দিতাম। তবুও এভাবে নেওয়ায় আসলে আমাদের কী বা বলার আছে। অন্য কোন জিনিস হলে কিছু বলা যেত কিন্তু খাওয়ার জিনিস নিয়ে আসলে কিছু বলা যায়না।