বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে ‘অদ্ভুত’ সিদ্ধান্ত
সাংবাদিক সংগঠনের সদস্য হতে পারবেন না ডেইলি ক্যাম্পাসের ইবি রিপোর্টার
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:৪২ PM
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগের শিক্ষার্থী এবং দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের সাংবাদিক ওয়াসিফ আল আবরারকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত কোনো সাংবাদিক সংগঠনের সদস্য হতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিন্ডিকেট। পাশাপাশি তাকে শাহ আজিজুর রহমান হলে থাকার জন্য সিটও দেওয়া হবে না। সিন্ডিকেটের এই ‘অদ্ভুত’ ও বিতর্কিত সিদ্ধান্তকে ঘিরে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন মহলে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মনজুরুল হক স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে এ তথ্য জানা গেছে। ২৮ আগস্ট অনুষ্ঠিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭০তম সাধারণ সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর আগে আবাসিক হলের সিট বরাদ্দ নিয়ে কেন্দ্রীয় ইস্যুতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের ইবি প্রতিনিধি ওয়াসিফ আল আবরারের ওপর হামলা চালানো হয় শাখা ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মী এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কিছু শাখা সমন্বয়কের অংশের দ্বারা।
হামলার ঘটনাকালে আবরারকে রক্ষা করতে গিয়ে লাঞ্ছিত ও আহত হন সমন্বয়কের অপর অংশের সদস্য, দুই সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। এই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ও সুপারিশের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারনী সভা সিন্ডিকেট এ কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
এদিকে সিন্ডিকেটের এ ধরনের সিদ্ধান্তকে অনেকেই ব্যক্তিস্বাধীনতা হরণের সামিল হিসেবে দেখছেন। তারা বলছেন, ‘শিক্ষার্থীর সংগঠনের স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের অধিকারকে সীমিত করা হচ্ছে, যা গণতান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থার জন্য উদ্বেগজনক বিষয়।’ পাশাপাশি তারা মনে করছেন, ব্যক্তিগত মতভেদকে রাজনৈতিক মিশ্রণের মাধ্যমে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে এবং এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সম্প্রদায়ের মাঝে বিভাজন ও অসহিষ্ণুতা বাড়াবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী ও সাংগঠনিক নেতা বলেন, ‘কোনো এক পক্ষের স্বার্থ রক্ষার নামে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ও ছাত্রজীবনের মুক্ত পরিবেশকে ক্ষুণ্ন করে।’ তারা প্রশাসনের কাছে আরও স্বচ্ছ ও ন্যায়সঙ্গত সমাধান চান, যাতে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে তাদের অধিকার ও দায়িত্ব পালন করতে পারে।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের ইবি সভাপতি ইসমাইল হোসেন রাহাত বলেন, ‘কলেজ জীবনে ছাত্রলীগ সন্দেহে শাস্তি প্রদান করলেন, সে ভালো কথা, কিন্তু সে তখন কোন পদে ছিলো তা একটু খুলে বলবেন? যেই ছেলেটা আন্দোলন চলাকালীন সময়ে বাসায় যায়নি, অনিরাপত্তার মধ্যেও ক্যাম্পাস আন্দোলনকে কাভার করেছিলেন, সে হলো জুলাই বিরোধী! আজব তো! আবরার সেদিন জুলাই যোদ্ধাদের সেইফ করতেই দুর্বৃত্ত শব্দটা লিখেছিলেন, আপনারা ক্যাম্পাস এরিয়াতে অনিরাপদ পরিস্থিতির অনুমোদন দিলেন এবং ভিন্নমতকে থামিয়ে দেওয়ার ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন। রাম রাজত্বের শেষ আছে, সেটাও জানা উচিত।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রেজারার ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম তদন্ত কমিটির সিদ্ধান্তের দিকে ইঙ্গিত করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ বডি হিসেবে সিন্ডিকেট একাডেমিকের বাইরে গিয়ে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে কিনা প্রশ্ন করলেও তদন্ত কমিটিকে দেখান বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় সর্বোচ্চ এই প্রধান। তার ভাষায়, ‘একটি ঝামেলা হয়েছিল, তখন তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল, সেই তদন্ত কমিটির সুপারিশের আলোকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঘটনা কি ঘটেছে না ঘটেছে সেটি তো তদন্ত কমিটির আলোকে সিন্ডিকেট শুধু এক্সিকিউট করেছে।’