রাজনীতি নিষিদ্ধ বেরোবিতে প্রশাসনের নাকের ডগায় ছাত্রনেতাদের সক্রিয় কার্যক্রম

বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে আবু সাঈদ চত্বরে বেরোবি ছাত্রদলের সদস্য সংগ্রহ ফরম বিতরণ
বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে আবু সাঈদ চত্বরে বেরোবি ছাত্রদলের সদস্য সংগ্রহ ফরম বিতরণ  © টিডিসি

রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ—এমন ঘোষণা থাকলেও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) সেই নিষেধাজ্ঞা যেন শুধুই কাগজে-কলমে। বাস্তবে, প্রশাসনের চোখের সামনেই আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে ছাত্ররাজনীতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গেট-সংলগ্ন আবু সাঈদ চত্বরে প্রকাশ্যেই সদস্য সংগ্রহ করেছে ছাত্রদল, যেন তারা স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা কেবলই লোকদেখানো।

রবিবার (২০ জুলাই) দুপুরে গেটের বাইরে ব্যানার ও টেবিল বসিয়ে সদস্য ফরম বিতরণ করে বেরোবি ছাত্রদল। এ সময় সংগঠনটির নেতাকর্মীরা জনসমক্ষে গণসংযোগ চালান, যা ক্যাম্পাসের নীতিমালা ও প্রশাসনিক অবস্থানকে প্রকাশ্যেই বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের শামিল বলে মনে করছেন সচেতন শিক্ষার্থীরা।

এর আগে ৯ জুলাই ক্যাম্পাসে গোপনে ছাত্রশিবিরের কমিটি গঠন নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। সেই বিতর্ক কাটতে না কাটতেই এবার ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সরাসরি মাঠে এনে ফুটবল ফাইনালে অতিথি করা এবং পুরস্কার বিতরণে অংশ নেওয়ার ঘটনায় সমালোচনার ঝড় ওঠে।

আরও পড়ুন: ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তির সুপারিশ নিয়ে যা জানাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়

গত শুক্রবার (১৮ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ১৪, ১৫ ও ১৬ ব্যাচের অংশগ্রহণে আয়োজিত আন্তঃব্যাচ ফুটবল ফাইনালে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও বহিরাঙ্গন পরিচালক ড. মো. ফেরদৌস রহমান। তার সঙ্গে ছিলেন রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শামসুজ্জামান সামু, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মোল্লা মোহাম্মদ মুসা, যুগ্ম সম্পাদক সালেহ মো. আদনান ও তাইজুল খান। মাঠে দাঁড়িয়ে তারা খেলা উদ্বোধন করেন, বক্তব্য দেন এবং পুরস্কার বিতরণ করেন—যেন কোনো রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞার অস্তিত্বই নেই।

এই ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। প্রশ্ন ওঠে—নিষিদ্ধ রাজনৈতিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা কীভাবে প্রশাসনের আনুকূল্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে প্রকাশ্যে অনুষ্ঠান করতে পারে? প্রশাসন কী এসব দেখেও না দেখার ভান করছে?

সাধারণ শিক্ষার্থীদের বক্তব্য, ‘যেখানে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীন পরিবেশ চাই, সেখানে প্রশাসন নিজেই দলীয় ছাত্ররাজনীতির পথ সুগম করছে। ছাত্রদলের মাঠ দখল আর প্রশাসনের মৌন সম্মতি—দুটোই একই ষড়যন্ত্রের অংশ।’

বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মো. শামসুর রহমান সুমন বলেন, একদিকে মুখে রাজনীতি নিষিদ্ধ বলে প্রশাসন কৃতিত্ব দাবি করে, অন্যদিকে আবার রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দাওয়াত দিয়ে তাদের সামনে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা শোনে, এটা দ্বিচারিতা নয় তো কী? এমন হঠকারিতায় শিক্ষার্থীরা হতাশ।

আরও পড়ুন: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিরোধ দিবস নিয়ে ডকুমেন্টারি, ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ শিক্ষার্থীদের

অন্যদিকে ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. আল আমীন বলেন, ‘আমরা সংঘাত চাই না, শান্তিপূর্ণভাবে সদস্য ফরম বিতরণ করছি। ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকায় বাইরে কর্মসূচি পালন করছি, এটাই গণতন্ত্রের চর্চা।’

তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্রদল দেশের আন্দোলন-সংগ্রামের পুরোনো সংগঠন, অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এখানেও আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলী বলেন, ‘শিবিরের বিষয়টি নিয়ে আমরা আগেও বসেছিলাম। এখন ছাত্রদলের সদস্য ফরম বিতরণ প্রসঙ্গেও মিটিং ডেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!