জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ অনিশ্চিত দ্বীপাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের

ঘূর্ণিঝড়ে নৌ চলাচল বন্ধ উপকূলীয় জেলা গুলোতে
ঘূর্ণিঝড়ে নৌ চলাচল বন্ধ উপকূলীয় জেলা গুলোতে  © টিডিসি ফটো

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে নৌ চলাচল বন্ধ থাকায় চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপ, নোয়াখালীর হাতিয়াসহ বেশ কয়েকটি উপকূলীয় অঞ্চল কার্যত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এসব এলাকার শিক্ষার্থীরা। আগামীকাল শনিবার (২২ মে) সকাল ১১টা থেকে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

জানা যায়, সন্দ্বীপ থেকে শত শত শিক্ষার্থী চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে তাদের অংশগ্রহণ এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাট থেকে একটি কাঠের নৌযানে করে ৪০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেন। তাদের সঙ্গে ছিলেন আরও ১০ জন বিদেশগামী যাত্রী। তবে দেড় ঘণ্টা সাগরে ভেসে থাকার পর প্রবল স্রোত ও উত্তাল ঢেউয়ের মুখে অবশেষে সবাইকে ফিরে আসতে হয়।

নৌঘাট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বাতাস কিছুটা কমলেও এখনো নৌ চলাচলের উপযোগী পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। শুক্রবার রাত বা শনিবার সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আগামীকাল সকালেও যাত্রা করা সম্ভব হবে না।

আরও পড়ুন: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে যা বললেন উপাচার্য

সন্দ্বীপে নৌঘাট পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, বাতাসের তীব্রতা কিছুটা কমলেও নৌ চলাচলের মতো পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি। আগামীকাল সকাল পর্যন্ত নৌ চলাচল শুরু করা যায় কি না, তা এখনো অনিশ্চিত। সুমন মিয়াজী নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, এই দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত পরীক্ষা পেছানো।

এদিকে পরিবারের নিষেধ উপেক্ষা করেই বেরিয়ে পড়েছিলেন চট্টগ্রামের পথে। চোখে তখন শুধুই স্বপ্ন—বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। কিন্তু সে স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় প্রকৃতি। দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে উত্তাল সাগরের বুকে ছোট একটি নৌযানে জীবন হাতে নিয়েই পারি দিতে হয়েছে পথ। ভয় আর উৎকণ্ঠায় মুহূর্তে মুহূর্তে মনে হচ্ছিল, বুঝি আর ফেরা হবে না।

এভাবেই দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন মিরাজুল ইসলাম মুন্না। তিনি বলেন, ভেবেছিলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির লড়াইয়ে নামবো, কিন্তু সাগরের মাঝে এসে মনে হচ্ছিল—এই বুঝি জীবনটাই শেষ হয়ে যাবে।

শনিবারও আবহাওয়ার উন্নতির সম্ভাবনা ক্ষীণ জানিয়ে এই শিক্ষার্থী বলেন, এখন আমাদের ভাবতে হচ্ছে, আমরা কি উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করবো, নাকি জীবনটা আগে রক্ষা করবো?

আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কার মধ্যেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা হচ্ছে শনিবার

নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার শিক্ষার্থী তাসনিম আক্তার জানান, আজ সকাল থেকে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে, যার কারণে আমরা বাসা থেকে বের হতে পারছি না। আমাকে পরীক্ষা দিতে যেতে হবে জেলা শহরের নোয়াখালী সরকারি কলেজে, কিন্তু এখনই যাত্রা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। খুব দুশ্চিন্তায় আছি কিভাবে পরিক্ষা দিতে যাবো কারণ আমাদের এখানে নৌ চলাচল বন্ধ রয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবদুর রহমান খান বলেন, আজ আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা কম। কাল বা আগামী রোববার অবস্থার উন্নতি হতে পারে।

এ বিষয়ে আজ শুক্রবার (৩০ মে) রাজধানীর ধানমন্ডি বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে পরিক্ষার তথ্য জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এস এম আমানুল্লাহ।

উপাচার্য বলেন, প্রায় এক যুগ পরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের অনার্স প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষা হচ্ছে। এক যোগে দেশের ৬৪ জেলায় আগামীকাল শনিবার অনুষ্ঠিত হবে। এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন ৫ লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী। পরীক্ষার জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে আমাদের পরীক্ষার প্রশ্ন ওএমআর শিট কেন্দ্রে চলে গেছে। 

তিনি আরও বলেন, কোথাও যদি বিশেষ করে উপকূলীয় দ্বীপ অঞ্চলগুলোতে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পারে তাহলে তাদের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ ব্যবস্থায় পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার চিন্তা করবে।


সর্বশেষ সংবাদ