তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া © টিডিসি সম্পাদিত
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিরল এক নজির গড়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। প্রায় চার দশকের রাজনৈতিক জীবনে তিনি যেসব জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরাসরি প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়েছেন, তার কোনোটিতেই পরাজয়ের মুখ দেখেননি। দেশের প্রথম নির্বাচিত নারী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দেশের সংসদ নির্বাচনের ইতিহাসে একমাত্র নেতা। তিনি ৫টি সংসদ নির্বাচনে মোট ২৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রতিটিতেই জয়ী হয়েছেন।
খালেদা জিয়ার নির্বাচনী ইতিহাসে ভোটে হারের কোনো গল্প নেই। এমনকি যেসব নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করতে পারেনি, সেসব নির্বাচনেও তিনি যতটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন, সবকটিতেই বিজয়ী হয়েছেন।
১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বগুড়া–৭, ঢাকা–৫, ঢাকা–৯, ফেনী–১ ও চট্টগ্রাম–৮ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পাঁচটিতেই বিপুল ভোটে জয় লাভ করেন। এই নির্বাচনে বিএনপি ১৪০টি আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে এবং খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন। একইসঙ্গে তিনি বিশ্বের মুসলিম প্রধান দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় নারী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি এককভাবে অংশ নেয়। সে নির্বাচনে খালেদা জিয়া ফেনী–১ ও ২, বগুড়া–৭, সিরাজগঞ্জ–২ ও রাজশাহী–২ আসনে প্রার্থী হয়ে পাঁচটি আসনেই বিজয়ী হন। এই সংসদেই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পাস হয় এবং মাত্র ১১ দিনের মাথায় তিনি প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেন; পরবর্তীতে সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: ‘আপসহীন’ খালেদা জিয়াকে আজ চিরবিদায় জানাবেন দেশের মানুষ
একই বছরের জুনে অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলেও খালেদা জিয়া বগুড়া–৬, বগুড়া–৭, ফেনী–১, লক্ষ্মীপুর–২ ও চট্টগ্রাম–১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সব কটিতেই বিজয়ী হন এবং সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বগুড়া–৬, বগুড়া–৭, খুলনা–২, ফেনী–১ ও লক্ষ্মীপুর–২ আসনে নির্বাচন করে প্রতিটি আসনেই বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। বিশেষ করে বগুড়া–৬ আসনে তিনি ২,২৭,৩৫৫টি ভোট পেয়ে (৭৮.৯ শতাংশ) রেকর্ড বিজয় অর্জন করেন। এই নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় এলে তিনি তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন।
২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশনের বিধান অনুযায়ী একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন বিধায় খালেদা জিয়া বগুড়া–৬, বগুড়া–৭ এবং ফেনী–১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং সবগুলোতেই বিপুল ব্যবধানে জয় লাভ করেন। বগুড়া–৬ আসনে তিনি ১,৯৩,৭৯২টি এবং বগুড়া–৭ আসনে ২,৩২,৭১৬টি ভোট পান।
সব মিলিয়ে ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত পাঁচটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়া মোট ২৩টি সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবকটিতেই জয়ী হয়ে বাংলাদেশের নির্বাচনী রাজনীতিতে এক অনন্য নজির স্থাপন করেন।
২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন বিএনপি বয়কট করে। পরে মামলার কারণে ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি খালেদা জিয়া। সর্বশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনও বিএনপি বর্জন করে। ফলে ২০১৪ সাল থেকে তিনি নির্বাচনী রাজনীতির বাইরে ছিলেন। তবে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার বগুড়া–৭, দিনাজপুর–৩ ও ফেনী–১ আসন থেকে অংশ নেওয়ার কথা ছিল।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার ভোর ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেগম খালেদা জিয়া ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।