দেশে একটি মহল ধর্মের নামে বিভাজন তৈরি করছে: মির্জা ফখরুল
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৪৫ AM , আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:১৭ PM
দেশে একটি মহল বা গোষ্ঠী ধর্মের নামে বিভাজন তৈরি করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ অবশ্যই ধর্মভীরু, কিন্তু তারা কখনও ধর্মান্ধ না। কিন্তু দূ:খজনক হলেও সত্য আমাদের সেই বাংলাদেশে একটি মহল বা গোষ্ঠী আজ নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থে ধর্মকে অপব্যবহার করছে।
আজ রবিবার (৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বিজয়ের মাসে ৭দিন ব্যাপী ‘বিএনপির দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ কর্মসূচির উদ্বোধনী অধিবেশনে এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি এর উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
তারা মানুষের মাঝে ধর্মের বিভাজন তৈরি করছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তারা বিরোধ তৈরি করছে, যা আমরা কখনও মেনে নিতে পারি না। এই চক্রকে প্রতিহত করতে হবে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
আরও পড়ুন : ১৫ ডিসেম্বরের আগে যে কোনো দিন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে বাংলাদেশে একটা বড় বিভাজনের পথ তৈরি করার চেষ্টা চলছে….একটা গোষ্ঠী, একটা মহল ধর্মের নামে বাংলাদেশে একটা বিভাজনের পথ সৃষ্টি করতে চায়। আমরা বাংলাদেশের মানুষ অবশ্যই ধর্মভীরু মানুষ, অবশ্যই ধর্মকে এখানে আমরা সবাই মেনে চলি। কিন্তু ধর্মকে নিয়ে রাষ্ট্রকে বিভাজন করা বা সমাজকে বিভাজন করা আমরা এটাতে বিশ্বাস করি না। আমরা মনে করি বাংলাদেশে সকল ধর্মের মানুষ একসাথে বাস করবে, একইভাবে থাকবে এবং ১৯৭১ সালে যে স্বাধীনতার যুদ্ধ হয়েছিল সেই যুদ্ধের মূল যে ভিত্তি ছিল সেটা হলো সকলের বাংলাদেশ।
‘সবার আগে বাংলাদেশ’ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে আমাদের নেতা যে স্লোগানটি দিয়েছেন, সেই স্লোগানটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে যেমন জাতীয় ক্ষেত্রে কিংবা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ ‘সবার আগে বাংলাদেশ’। এই কথাটা আমাদের মুখের মধ্যে গেঁথে নিতে হবে। এই বিষয়টা নিয়েই আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমি আশা করব, আজকে সমস্ত প্রতিবন্ধকতা দূর করে, তাদেরকে পরাজিত করে সমস্ত অপ-প্রয়াসকে পরাজিত করে আমাদেরকে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে এবং তার সামনের সারিতে যারা থাকবে তারা হচ্ছে এই ছাত্রদল যারা ভ্যানগার্ড হিসেবে, অগ্রবর্তী সৈনিক হিসেবে থাকবে।
‘তারেকের নেতৃত্বে এগিয়ে যেতে হবে’ মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের যে পরিকল্পনা সেগুলোকে বাস্তবায়িত করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে সামনের দিকে নিয়ে গিয়ে জনগণের কাছে নিয়ে যেতে হবে। বিএনপি হচ্ছে, সেই দল যেই দল অতীতে যেমন সমস্ত সংস্কার করেছে, রাজনৈতিক সংস্কার এবং অর্থনৈতিক সংস্কার বাংলাদেশের সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে। ঠিক একইভাবে আগামীতেও বাংলাদেশ অবশ্যই তারেক রহমান সাহেবের নেতৃত্বে বিএনপির নেতৃত্বে অন্যতম একটা সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত হবে এই বিশ্বাস আমাদের আছে।
আরও পড়ুন : আখতারের বক্তব্যের কড়া প্রতিবাদ জামায়াতের, কী বলেছিলেন এনসিপি সদস্য সচিব?
‘বিএনপি সবসময় জানালা খুলে দিয়েছে’ মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তিনি প্রেসিডেন্সিয়াল ফর্ম অফ গভমেন্ট থেকে পার্লামেন্টারি ফর্ম অফ গভমেন্ট নিয়ে এসেছিলেন। তিনিই প্রথম আমাদের মেয়েদের শিক্ষার জন্যে ক্লাস টেন পরযন্ত অবৈতলিক শিক্ষার ব্যবস্থা শুরু করেছিলেন যার ফলে আজকে মেয়েরা অনেক দূরে এগিয়ে আসতে পারছে। আমাদের অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান সাহেব ছিলেন…রাজস্বে আয়ের জন্য ভিএটি-ভ্যাট প্রথা তিনি প্রথম শুরু করেছিলেন। তখন অনেকেই তার অনেক সমালোচনা করেছিল কিন্তু এখন সেটাই সবচাইতে উপযুক্ত পদ্ধতি। যে পদ্ধতি আমরা ভালোভাবে রাজস্ব আদায় করতে পারি। আমি যে কথা বলতে চাচ্ছি, বিএনপি সবসময় পথগুলো খুলে দিয়েছে, জানালা খুলেছে, রাস্তা খুলেছে, এভিনিউ তৈরি করেছে …এটা বিএনপির অবদান। সেজন্যই আমরা বলতে পারি, বাংলাদেশের যা কিছু অর্জনই অবশ্যই বিএনপির মাধ্যমে এসেছে।
‘চক্রান্ত-অপপ্রচার চলছে’ অভিযোগ করেমির্জা ফখরুল বলেন, ১৫ বছরের ফ্যাসিস্ট শাসনের পরে আমাদের গণতন্ত্রে ফিরে যাওয়ার এখন একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। অনেক বাধা- প্রতিবন্ধকতা আসছে। কিন্তু এগুলোকে এগুলোকে এড়িয়ে আমাদেরকে সাফল্য অর্জন করতে হবে। আজকে আমাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম চক্রান্ত হয়, প্রচারণা চলে, অপপ্রচার চলে। সবচেয়ে বড় একটা অপপ্রচার চলছে। এই প্রচারের বিরুদ্ধেও আমাদেরকে কাজ করতে হবে। আমি সবসময় বলি, সাইবার ওয়ারে যদি আমি যোদ্ধা হতে না পারি তাহলে কিন্তু আমি পরাজিত হয়ে যাব….এটা ইয়াং জেনারেশনকে করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা যখন ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছিলাম, আন্দোলন করছিলাম আমরা জেলায় বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে সবসময় একটি কথাই খুব জোর দিয়ে বলতাম যে, আমাদের তরুণদেরকে এগিয়ে আসতে হবে, যুবকদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। ছাত্রদেরকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তরুণরা বেরিয়ে এসে এই ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে লুখে দাঁড়াতে হবে। যেদিন সেটা হয়েছে সেদিনই এই পরিবর্তনটা এসেছে। আজকে আমাদেরকে এই কথাটি মনে রেখেই এই ছাত্রদল সামনের দিকে এগুতে হবে। তোমাদের সবচেয়ে বড় যে চ্যালেঞ্জ হবে, সামনের যে নির্বাচন আছে সেই নির্বাচনে এই সত্যকে প্রতিষ্ঠা করা যে, বিএনপি হচ্ছে একমাত্র রাজনৈতিক দল। যে রাজনৈতিক দল জাতিকে দেশকে একটা সমৃদ্ধ জাতিতে পরিণত করতে পারে এ কাজটা তোমাদেরকে সবার আগে করতে হবে।
আরও পড়ুন : জামায়াতের প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণায় বিএনপির প্রার্থী
‘ছাত্রদলের প্রতি পরামর্শ’ দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমার একটা অনুরোধ থাকবে আমাদের ছাত্রনেতাদের কাছে যে, তোমরা জিনিসগুলো উপলব্ধি করার চেষ্টা কর, একেবারে হৃদয়ে ধারণ করবে…. এটা যদি না করতে পারো শুধু শুনে গেলে আর চলে গেলে। এটাকে তোমার এলাকাতে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে না পার, তাহলে এটা কোনো কাজে দেবে না। ৩১ দফা অনেকে প্রচার করেছ না, এই ৩১ দফা কি সবার কাছে পৌছাতে পারছ? আমার কাছে মনে হয় না। কারণ আমি এই এলাকায় যাই, আমি দেখি যে, আমাদের ৩১ দফা সেইভাবে পৌঁছাতে পারেনি। কিন্তু এটা (দেশ গড়ার পরিকল্পনা) যেভাবে আছে এটা যদি সেভাবে তোমরা জনগণের নিয়ে যেতে পার, তাহলে এটা মানুষের কাছে পৌঁছাবে। মানুষ তোমাদের দিকে আকৃষ্ট হবে।
ফ্যামিল কার্ড, ফার্মাস কার্ড বিভিন্ন বিষয়গুলো তুলে ধরে ফখরুল বলেন, ছাত্রদলকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তোমাদের কমিটি বল বা পদচারণা বল বা কাজ বল সেটা সবচেয়ে বেশি বাড়াতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিন্তু তোমাদের যথেষ্ট একটা অভাব পরিলক্ষিত হয়। যে কারণে আমরা বিগত নির্বাচনগুলোতে ভালো করতে পারিনি। এই জায়গায় তোমাদেরকে আরো বেশি করে আসতে হবে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও দেশ গড়া পরিকল্পনা শীর্ষক কমিটির আহ্বায়ক রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।