ধানের শীষে ভোট চেয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক
- পাবনার (ঈশ্বরদী) প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:০৪ AM
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় অনুষ্ঠিত দোয়া মাহফিলে ধানের শীষে ভোট চেয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়েছেন পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার লক্ষীকুন্ডা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম।
গত শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) রাতে চররূপপুর এলাকায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বক্তব্যের সময় তিনি এমন মন্তব্য করেন। পরে এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে সমালোচনার ঝড় দেখা দিয়েছে।
ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায় প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় না থেকেও যে উন্নয়ন করছে, ক্ষমতায় এলে আরও বেশি উন্নয়ন করতে পারবে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেছিলেন। তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া শিক্ষক-কর্মচারীদের ৫শতাংশ ইনক্রিমেন্ট চালু করেছিলেন। আগামীতে যদি ধানের শীষকে নির্বাচিত করেন, আরও বেশি উন্নয়ন হবে। আপনারা সবাই দোয়া করবেন বেগম খালেদা জিয়ার যেন আবার সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসে। ধানের শীষের বিজয় অর্জনের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত থাকবে। জয় বাংলা, জয়...”। বক্তব্য শেষ করার আগেই তিনি মাইক্রোফোন অন্যজনের হাতে দিয়ে দেন।
আরও পড়ুন: ‘নিচুমানের পাঠ্যবই এবারও’
অনুষ্ঠানে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান শুনে উপস্থিত দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ মুখ টিপে হেসে ওঠেন। বিএনপির অনুষ্ঠানে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেয়ার বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দলের নেতাকর্মীরা। একজন প্রধান শিক্ষকের সরাসরি রাজনৈতিক প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ এবং ভোট চাওয়া নিয়ে ইতিমধ্যেই উপজেলায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা বিষয়টি খতিয়ে দেখে শিক্ষকের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিদ্যালয় ফান্ডের টাকা আত্মসাৎ সহ নানা অনিয়ম আড়াল করতে ৫ আগস্টের আগে সিরাজুল ইসলাম আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সান্নিধ্যে চলতেন। তবে সরকার পরিবর্তনের পর হঠাৎ বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন এবং সভা-সমাবেশে অংশ নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। তারা দাবি করেছেন, ‘তিনি মূলত আওয়ামী লীগের প্রোডাক্ট।’
এই বিষয়ে লক্ষীকুন্ডা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি রাজনীতি করি না, পূর্বেও কখনো করিনি। শিক্ষক হিসেবে রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে গিয়ে একটি দলের পক্ষে বক্তব্য দেওয়া আমার ঠিক হয়নি। আর ‘জয় বাংলা’ ভুলে বলে ফেলেছি। এজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঈশ্বরদী উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আজমল হোসেন সুজন। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় যুবসমাজের উদ্যোগে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছিল। এটি দলীয় আয়োজন ছিল না। সিরাজুল ইসলাম বক্তব্যের শেষে ‘জয় বাংলা’ বলেছিলেন এবং তাৎক্ষণিক ক্ষমাও চেয়েছেন। যেহেতু তিনি শিক্ষক, আমাদের দলের কেউ নন, তাই সাংগঠনিক কোনো ব্যবস্থা নেই।’
উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষকদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করা উচিত নয়। সিরাজুল ইসলামের বক্তব্য খতিয়ে দেখা হবে।’
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘একজন শিক্ষক ও সরকারি কর্মচারী হিসেবে রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই।’
এ সময় দোয়া মাহফিলে প্রধান আলোচক ছিলেন উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সুমন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন পাকশী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও পাবনা জেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এনামুল হক, ঈশ্বরদী উপজেলা জাসাসের সাবেক সভাপতি নূর মোহাম্মদ বিশ্বাস। পরে বিশেষ দোয়া পরিচালনা করেন হাফেজ মাওলানা শরিফুল ইসলাম।