ট্রাম্পের শান্তি পুরস্কার পাওয়ার বিষয়ে যা বলল নোবেল কমিটি

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প  © সংগৃহীত

এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার নিয়ে একটি বিষয় প্রায় নিশ্চিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবারও পুরস্কার পাচ্ছেন না, যতই তিনি তা প্রত্যাশা করুন না কেন। তবে ট্রাম্প নোবেল না পেলে তিনি কী করবেন, তা নিয়ে নরওয়েতে উদ্বেগ বিরাজ করছে। কারণ নরওয়ের রাজধানী অসলোতেই নোবেল শান্তি পুরস্কারের বিজয়ী নির্ধারণ ও ঘোষণা করে থাকে নোবেল কমিটি। যদিও কমিটির সঙ্গে নরওয়ে সরকারের কোনো আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক নেই।

স্থানীয় সময় শুক্রবার সকাল ১১টা (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টা) নরওয়ের নোবেল কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২৫ সালের শান্তি পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করবে।

নরওয়ের সোশ্যালিস্ট লেফট পার্টির বৈদেশিক নীতির মুখপাত্র বলেন, ‘ট্রাম্প যে কোনো কিছু করতে পারেন এটা মাথায় রেখে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে।’

বিশ্বজুড়ে বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ১৯৪৬ সালে সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয় বৈশ্বিক সংঘাতের তথ্যভান্ডার তৈরি শুরু করার পর থেকে ২০২৪ সালের মতো এত বেশি রাষ্ট্র-সংযুক্ত সশস্ত্র সংঘাত আর কখনো দেখা যায়নি।

ট্রাম্প দাবি করে আসছেন, তিনি অন্তত আটটি সংঘাতের সমাধান করেছেন, যা তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য করে তোলে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, অন্তত এ বছর নোবেল কমিটি তাঁকে বেছে নেবে না।

আরও পড়ুন: আজ শান্তিতে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা, ট্রাম্প কি পাচ্ছেন?

সুইডেনের আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক পিটার ভ্যালেনস্টিন বলেন, ‘না, এ বছর ট্রাম্প নোবেল পাচ্ছেন না। হয়তো পরের বছর পাওয়া যেতে পারে তখন তার বিভিন্ন উদ্যোগ, বিশেষ করে গাজা সংকট মোকাবিলায় ভূমিকা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে।’

বিশেষজ্ঞরা আরও মনে করেন, ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তার একতরফা সিদ্ধান্ত নোবেল শান্তি পুরস্কারের মূল উদ্দেশ্যের পরিপন্থি।

অসলো পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান নিনা গ্রেগার বলেন, ‘গাজায় শান্তি আনার প্রচেষ্টার বাইরেও আমরা (ট্রাম্পের) এমন অনেক নীতি দেখেছি, যা নোবেলের (আলফ্রেড নোবেল) উইলে বর্ণিত উদ্দেশ্যের বিপরীত। সেই উদ্দেশ্য ছিল আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, জাতির ভ্রাতৃত্ব ও নিরস্ত্রীকরণকে উৎসাহিত করা।’

তিনি বলেন, ট্রাম্পের কর্মকাণ্ড নোবেল শান্তি পুরস্কারের মূল নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তার নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ও চুক্তি থেকে সরে এসেছে, মিত্র ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছে, ডেনমার্ক থেকে গ্রিনল্যান্ড দখলের হুমকি দিয়েছে, মার্কিন শহরে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেছে, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপরও আঘাত হেনেছে।

নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান ইয়োরগেন ওয়াতনে ফ্রিডনেস বলেন, ‘আমরা পুরস্কার প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তির সামগ্রিক চরিত্র, নীতি ও বাস্তব শান্তি অর্জনের কার্যক্রম বিবেচনা করি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তিনি বাস্তবে শান্তির জন্য কী করেছেন।’

এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ৩৩৮ জন ব্যক্তি ও সংস্থা মনোনীত হয়েছে, যার তালিকা পরবর্তী ৫০ বছর গোপন রাখা হবে। প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়ার অধিকার রয়েছে সংসদ সদস্য, মন্ত্রিসভার সদস্য, আগের বিজয়ী, নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও নোবেল কমিটির সদস্যদের।

২০২৪ সালে এই পুরস্কার পেয়েছিল জাপানে পারমাণবিক বোমা হামলায় বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের সংগঠন ‘নিহোন হিদানকিও’, যারা দীর্ঘদিন ধরে পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধে কাজ করছে।

এ বছর নির্দিষ্ট কোনো প্রার্থীকে নিয়ে একমত নন বিশেষজ্ঞরা। অসলোতে ঘোষণার আগে আলোচনায় রয়েছে একাধিক নাম। এর মধ্যে রয়েছে সুদানের ‘ইমার্জেন্সি রেসপন্স রুমস’ যারা যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত মানুষদের সহায়তায় জীবন ঝুঁকিতে রেখে কাজ করছে।

তাছাড়া সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন রুশ বিরোধীদলীয় নেতা অ্যালেক্সি নাভালনির বিধবা ইউলিয়া নাভালনায়া এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা অফিস ফর ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউশনস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস।

নরওয়ের ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক হালভার্ড লেইরা বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নোবেল কমিটি শান্তির প্রচলিত ধারণার কাছাকাছি ফিরে এসেছে। মানবাধিকার, গণতন্ত্র, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নারী অধিকার এখন পুরস্কার প্রদানের মূল অগ্রাধিকার পাচ্ছে। তাঁর মতে, “সম্ভবত এ বছর এমন একজন প্রার্থীর পক্ষেই রায় যাবে, যিনি বিতর্কমুক্ত।”

এ ছাড়া বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার প্রতি অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করতে নোবেল কমিটি জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর, কিংবা ফিলিস্তিনের সহায়তা সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর মতো সংস্থাকে পুরস্কার দিতে পারে।

একইভাবে আন্তর্জাতিক বিচারব্যবস্থা রক্ষায় ভূমিকার জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) বা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকেও (আইসিসি) বিবেচনায় নেওয়া হতে পারে।

অন্যদিকে, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা আজ যেভাবে চাপে আছে, তাতে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) বা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের মতো সংস্থাও এ পুরস্কার পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে আগের অনেক বছরের মতো এবারও নোবেল কমিটি সবাইকে চমকে দিতে পারে, একজন সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত বিজয়ীকে বেছে নিয়ে।

সূত্র: এএফপি, দ্য গার্ডিয়ান


সর্বশেষ সংবাদ