খাগড়াছড়িতে ঐতিহ্যবাহী বলী খেলা অনুষ্ঠিত, অংশ নেন নারীরাও
চ্যাম্পিয়ন বাঘা শরীফ ও মাসিনু মারমা
- খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১০ জুন ২০২৫, ০৯:২৩ PM , আপডেট: ১১ জুন ২০২৫, ১০:২৬ AM
শক্তি, সাহস, সম্মান আর পাহাড়ি ঐতিহ্যের এক মেলবন্ধনে উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলো খাগড়াছড়ির বহুল প্রতীক্ষিত ঐতিহ্যবাহী বলী খেলা। মঙ্গলবার (১০ জুন) বিকেলে ঐতিহাসিক খাগড়াছড়ি স্টেডিয়াম পরিণত হয় এক বর্ণাঢ্য ক্রীড়াঙ্গনে।
খেলা চলাকালে গ্যালারিতে উপচে পড়া হাজারো দর্শকের করতালি, ঢাক-ঢোলের তালে তালে রিংয়ে বলীদের লড়াই—সবকিছু মিলে খাগড়াছড়ি যেন রূপ নেয় উৎসবের শহরে।
খাগড়াছড়ি বলী সংগঠনের সভাপতি মর্ম সিংহ ত্রিপুরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান মাহমুদ। এছাড়া, বলী খেলার উদ্বোধন করেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরা।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল, জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল খাদেমুল ইসলাম, স্টাফ অফিসার (জিটুআই) মেজর কাজী মোস্তফা আরেফিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) রুমানা আক্তার প্রমুখ।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান মাহমুদ বলেন, শুধু খেলাধুলা নয়, এই বলী খেলা হচ্ছে আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি। এই খেলার মাধ্যমে শান্তি ও সম্প্রীতির বন্ধন আরও দৃঢ় করার জন্য ভূমিকা রাখবে। এটি তরুণ ও যুবসমাজকে শৃঙ্খলা ও শারীরিক সক্ষমতার অনুপ্রেরণা জোগায়।
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরা বলেন, নারী বলীদের অংশগ্রহণ একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। আগামী দিনে মেয়েরা আরও বেশি এই খেলায় এগিয়ে আসবে বলে আশা করি।
জানা যায়, বলী খেলায় নারী ও পুরুষ মিলিয়ে সিনিয়র-জুনিয়র চারটি বিভাগে ৮২ জন বলী অংশ নেন। সিনিয়র পুরুষ বিভাগে কুমিল্লার বাঘা শরীফ চ্যাম্পিয়ন হন। তিনি বলেন, এই জয়ের পেছনে আছে কঠোর পরিশ্রম, পাহাড়ের দর্শকদের ভালোবাসা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে।
জুনিয়র বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হন নয়ন। যিনি বলেন, প্রথমবার এখানে খেলতে এসে এমন সাড়া পাবো ভাবিনি, দর্শকদের গর্জনে যেন আমি আরও সাহস পেয়েছি।
অন্যদিকে, নারী বিভাগে চমক দেখিয়ে চ্যাম্পিয়ন হন খাগড়াছড়ির মাসিনু মারমা। তিনি বলেন, অনেক কষ্ট করেছি এই খেলায় অংশ নেওয়ার জন্য। নারীরা সব পারে—এই বার্তাই দিতে চেয়েছি।
এছাড়া, গ্যালারিতে উপস্থিত দর্শক শ্রেষ্ঠী চাকা বলেন, প্রতিটি খেলা ছিল চোখধাঁধানো। সবচেয়ে ভালো লেগেছে নারী বলীদের সাহসিকতা।
মনিতা ত্রিপুরা পরিবারের সবাইকে নিয়ে এসেছেন খেলা দেখতে। তিনি বলেন, এত বড় আয়োজন আগে কখনো দেখিনি। মেয়েরা যেভাবে খেলেছে, তাতে গর্ব হয় খাগড়াছড়ির মেয়েদের ওপর।