দাবাদাহ গ্রীষ্মের শেষে বর্ষার পরশ

বর্ষার পরশ
বর্ষার পরশ  © সংগৃহীত

বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। ঋতুর পালাবদলে প্রকৃতি এদেশে বারবার বদলায় তার সাজ। গ্রীষ্মের প্রখর রোদ আর দাবদাহে পুড়ে যাওয়া বাংলার মাঠ-ঘাট, নগর-প্রান্তর এখন বর্ষার প্রতীক্ষায়। ধূলিঝড়ে বিবর্ণ আকাশে ধীরে ধীরে জমা হচ্ছে মেঘের আস্তরণ। আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসকে ঘিরেই বর্ষাকালের বিস্তার। ইতিহাস বলে, এ সময় দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু সক্রিয় হয়ে ওঠে। বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্পবাহী বাতাস ছুটে আসে দেশের আনাচে-কানাচে, আর তার প্রভাবে হয় প্রচুর বৃষ্টি। বছরের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয় এ সময়। তাই বর্ষা শুধু প্রাকৃতিক ঋতুই নয়, কৃষিভিত্তিক এই দেশের প্রাণচাঞ্চল্যের উৎস।

গ্রামবাংলার মাঠে মাঠে বৃষ্টির জল জমে নতুন প্রাণের সঞ্চার করে। চাষির মুখে ফুটে ওঠে হাসি—ধানের চারা রোপণের মৌসুম আসে। আবার কোথাও নদ-নদীর বানের পানি জনজীবনকে করে তোলে বিপর্যস্ত। নগর জীবনেও বৃষ্টি আনে নানা বৈচিত্র্য। একপাশে রিকশা-যাত্রীরা ভিজে ছুটছে গন্তব্যে, অন্যপাশে স্কুল-ফেরত শিশুদের পা থামে কাদার ভেলায়।

বর্ষা কেবল প্রকৃতির পরিবর্তন নয়, বাঙালির সংস্কৃতি ও সাহিত্যেরও অবিচ্ছেদ্য অংশ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্যে বর্ষার রূপ ধরা পড়েছে এমনভাবে—

“মন মোর মেঘের সঙ্গী,
উড়ে চলে দিগ দিগন্তের পানে
নিঃসীম শূন্যে শ্রাবণবর্ষণ সঙ্গীতে
রিমঝিম রিমঝিম রিমঝিম।”

নজরুল লিখেছেন—
“রিমিঝিম রিমিঝিম ঘন দেয়া বরষে
কাজরি নাচিয়া চল, পুর-নারী হরষে
কদম তমাল ডালে দোলনা দোলে
কুহু পাপিয়া ময়ূর বোলে,
মনের বনের মুকুল খোলে
নট-শ্যাম সুন্দর মেঘ পরশে।”

বর্ষা আমাদের কাব্যে-সঙ্গীতে, হৃদয়ে-জীবনে মিশে আছে গভীরভাবে। বর্ষাকালকে ঘিরে রচিত হয়েছে অসংখ্য গান, কবিতা, গল্প। গ্রামীণ মেলার সাথে বর্ষার বৃষ্টিধারার মেলবন্ধন সৃষ্টি করে অন্যরকম আবহ।

শৈশবের স্মৃতি খুঁজলে দেখা যায়, টিনের চালে বৃষ্টির টাপুর টুপুর শব্দ আর মাটির গন্ধ মিলে মিশে এক অদ্ভুত আবেশ তৈরি করে। গ্রামের কিশোরেরা তুমুল বৃষ্টিতে ফুটবল খেলায় মেতে ওঠে, মেয়েরা কদমফুল হাতে নাচে বৃষ্টির ছন্দে। শহরের ছাদেও দেখা যায় শিশুদের বৃষ্টিতে ভেজার উচ্ছ্বাস। বর্ষার এমন রূপ কি সহজে ভোলা যায়?

তবে বর্ষা শুধু আনন্দ নয়, বেদনারও বাহক। অতিবৃষ্টি আর নদ-নদীর প্লাবনে ক্ষতিগ্রস্ত হয় গ্রামীণ জনপদ। তবু বাঙালি বর্ষাকে বরণ করে নেয় হৃদয়ের অন্তস্তল থেকে, কারণ বর্ষা বয়ে আনে নতুন জীবনের আশা, সৃষ্টির বার্তা।

প্রকৃতি আমাদের সাথে যে আচরণই করুক, আসুন আজ এই বর্ষার আগমনে মনটাকে ধুয়ে ফেলি প্রতীকী বর্ষার জলে। মেঘের গর্জন আর কদমফুলের হাসিতে আমাদের জীবন হোক সতেজ ও আশাব্যঞ্জক।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence