গ্রীষ্মের বাহারি ফুলে সেজেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
- সুমন বাইজিদ
- প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৫, ১১:৩১ AM , আপডেট: ১৬ মে ২০২৫, ০৭:০৭ PM
প্রকৃতিতে জ্যৈষ্ঠের তপ্ত অনুভূতি। গনগনে সূর্য। প্রখর রোদ্দুরে হালকা বাতাস। প্রকৃতির ঠিক এই যখন অবস্থা কৃষ্ণচূড়া, জারুল, সোনালু ফুল তখন সৌন্দর্যের প্রতীক। প্রকৃতির এই সৌন্দর্যে ভরে গেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পুরো ক্যাম্পাস। গ্রীষ্মের কাঠফাটা রুক্ষতা মাড়িয়ে কৃষ্ণচূড়া, জারুলসহ বাহারি সব পুষ্প নিজেদের মেলে ধরেছে আপন মহিমায়। প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্যকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো উপভোগ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ দর্শনার্থীরা।
২৩০০ একরের ক্যাম্পাসের চারিদিকে এখন শোভা পাচ্ছে নানা রঙের ফুল। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা চত্বর, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, লাইব্রেরি, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ, জারুলতলাসহ বিভিন্ন স্থানে ফুটেছে এই ভালোবাসার প্রতীক।
কৃষ্ণচূড়াকে ভালবাসার রঙের সাথে তুলনা করে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার কবিতায় লিখেছেন, ‘গ্রীষ্মের এই কৃষ্ণচূড়ার মতো রক্তিম হয়ে ফুটেছিল ভালোবাসা— তারপর ঝরে গেছে নীরবে, ধুলোয় মিশে গেছে বিস্মরণের মতো।’
অন্যদিকে কবি শামসুর রাহমান কৃষ্ণচূড়াকে আমাদের চেতনারই রঙ উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘আবার ফুটেছে দ্যাখো কৃষ্ণচূড়া থরে থরে শহরের পথে কেমন নিবিড় হয়ে। কখনো মিছিলে কখনো-বা একা হেঁটে যেতে যেতে মনে হয়- ফুল নয় ওরা শহীদের ঝলকিত রক্তের বুদ্বুদ, স্মৃতিগন্ধে ভরপুর। একুশের কৃষ্ণচূড়া আমাদের চেতনারই রঙ.....।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। আর প্রকৃতি এই ক্যাম্পাসকে তার সবটুকু নিংড়ে দেয় গ্রীষ্মের এই সময়টাতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্লাসের ফাঁকে, বিকেলে ঘুরে ঘুরে দেখেন, তাদের সাথে ভিড় করেন বিভিন্ন স্থান থেকে আসা দর্শনার্থীরাও।
বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ফারুক হোসেন বলেন, কৃষ্ণচূড়া, জারুল, হিজল, সোনালু, বন বেলির সৌন্দর্য শুধু আমাদের চোখ জুড়ায় না, মননের সুস্থ বিকাশেও সাহায্য করে। দুপুরের পর ক্লাস শেষে আমরা যখন শহরে ফিরি কিংবা কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের দিকে যাই তখন নানান ফুলের সৌন্দর্য আমাদের অনুপ্রাণিত করে। আশাকরি চবির এ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমাদের মানুষ হয়ে উঠতে সুস্থ মনন গঠনে আরো সহায়ক হবে।
উত্তরবঙ্গ থেকে আসা এক দর্শনার্থী বলেন, আমরা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে যাওয়ার জন্য এসেছি। তবে এখানে পরিচিত আত্মীয় থাকায় ঘুরতে এসে মুগ্ধ হয়েছি প্রকৃতির এই সৌন্দর্যে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস এমনিতেই অনেক সুন্দর, তাকে দ্বিগুণ বৃদ্ধি করেছে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ফুটে থাকা হরেকরকম ফুল। সত্যিই অনেক ভালো লাগছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক মো. নুরুল হামিদ বলেন, ‘বছরের এই সময়টাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নানান রকমের ফুল ফুটে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্যকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অসংখ্য দর্শনার্থী প্রতিদিন বিকেলে ক্যাম্পাসে ভিড় করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা গেলে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পাবে। প্রতিবছর ফলজ বৃক্ষের পাশাপাশি আরো বেশি ফুল গাছে চারা রোপণ করার উদ্যোগ নেওয়া দরকার।’