প্রতীকের আত্মহত্যা
তদন্ত কমিটির লুকোচুরি চলছেই, বাড়ছে বোনের অপেক্ষা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০১৯, ১০:০৭ AM , আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৯, ০৫:৪৯ PM
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি (জিইবি) বিভাগের ২০১১-১২ সেশনের শিক্ষার্থী তাইফুর রহমান প্রতীকের আত্মহত্যার তিন মাস হতে চলেছে। আলোচিত ওই ঘটনার পর বিষয়টিকে ‘আত্মহত্যায় প্ররোচনা’ দাবি করে দোষীদের শাস্তির কথা জানিয়েছিলেন প্রতীকের পরিবার ও সহপাঠীসহ অনেকে। এরপর তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও এখনো তা আলোর মুখ দেখেনি।
এদিকে প্রতীকের ওই আত্মহত্যার পর শুধু শাবিপ্রবি নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। ওই ঘটনার তিনমাস পার হতে চললেও ঘটনার কারণ উদঘাটন না হওয়ায় এবং দোষীদের বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রিকালচারাল এন্ড মিনারেল সায়েন্সের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিনকে প্রধান করে গঠিত কমিটিতে আরও ছিলেন গণিত বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম, সহকারী প্রক্টর মো. সামিউল ইসলাম।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিনদ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘ব্যাপারটা নিয়ে আমরা অনেকখানি এগিয়েছি। অনেকবার বসেছি। প্রতীকের পরিবার বাদে বাকি সবার সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা হয়েছে। আশা করি খুব শিগগিরই বিষয়টি একটি প্রতিবেদন আমরা দিতে পারব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগামী সপ্তাহেই হয়ত আমরা তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করব। তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদন কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করব। পরবর্তীতে তারা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।’ এ তদন্ত কাজ ভালোভাবে চলছে বলেও জানান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন।
অনার্সে প্রথম হওয়া সত্ত্বেও মাস্টার্সের রেজাল্ট খারাপ হওয়া ও থিসিস করার জন্য সুপারভাইজার না দেওয়ায় হতাশাগ্রস্থ হয়ে আত্মহত্যা করেছে প্রতীক। বিভাগীয় শিক্ষকদের রাজনীতি এবং নম্বর কম দেওয়া তাকে আত্নহত্যায় প্ররোচিত করেছে। এমনটাই দাবি করছে নিহতের পরিবার। কিন্তু আলোচিত ওই ঘটনার পর দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও বিষয়টি নিয়ে এখনো লুকোচুরিতে তদন্ত কমিটি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতীকের আত্মহত্যার জন্য শাবিপ্রবি’র জিইবি বিভাগের শিক্ষকদের দায়ী করেছেন তার বড় বোন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন ডিসঅরডার বিভাগের শিক্ষক শান্তা তাওহিদা। বৃহস্পতিবার প্রতীক যেন ন্যয়বিচার পায়, সে দাবি জানিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি। সেটি হুবহু দেওয়া হল-
‘#প্রতীক যেন ন্যায়বিচার পায় মাননীয় উপাচার্য, শাবিপ্রবি
প্রতীক চলে যাওয়ার প্রায় তিন মাস হতে চলেছে। আমরা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলেও এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পাইনি। প্রতীকের সাথে শাবিপ্রবির জিইবি বিভাগের একজন শিক্ষক যে অন্যায় করছে আমরা তা মাননীয় ভিসি স্যারকে জানিয়েছিলাম। উনি আমাদের আশ্বাসও দিয়েছিলেন তিনি বিষয়টি দেখবেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে সেই শিক্ষক ভিসি স্যারের অনুরোধ না রেখে উল্টো আরো কয়েকজন শিক্ষকদের নিয়ে প্রতীককে হুমকি দিয়েছে, তাকে সুপারভাইজার, রেকমেন্ডেশন লেটার দিবে না বলে। সুপারভাইজার না দেয়া, নম্বর কম দিয়ে তার রেজাল্ট Hons. ১ম (3.82) থেকে MS এ ৭ম (3.08) এ নামিয়ে এনেছেন সেই কয়েকজন শিক্ষক। এমন কী শেষমেষ প্রতীককে USA ভর্তি হবার জন্য রেকমেন্ডেশন লেটার পর্যন্ত দেননি।
যে যে শিক্ষকরা প্রতীকের সাথে অন্যায় করেছে তাদের নাম জিইবি বিভাগের শিক্ষার্থীরা আমাদের ফোন করে জানিয়েছে। এমনকি প্রতীকের বন্ধু নাফিসা, প্রতীক মারা যাবার পরদিন ১৪ জানুয়ারি আমাকে নাম পাঠিয়েছে।
কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে স্ট্যাটাসে শান্তা লিখেছেন, আমি কখনোই কারোর ইনবক্স এর ছবি তুলে প্রকাশ করি না। আমাকে ক্ষমা করবেন, এই বিষয়ে প্রমাণ হিসেবে ছবি দেয়াটি এক প্রকার বাধ্য হয়েছে। এই তথ্য আমার নিজের বয়ান নয়। তাই আমরা পরিবার থেকে চাই, মাননীয় উপাচার্য আপনার গঠিত তদন্ত কমিটি যেন তথ্যগুলো আমলে নেন। হয়ত এতে তাদের তদন্ত করতে কিছুটা সুবিধে হবে।
শান্তার স্ট্যাটাস থেকে
তিনি আরো লিখেন, প্রতীক আর কোনদিন ফিরে আসবে না। কিন্তু আর কোন মেধাবী ছাত্র হারিয়ে যাক আমরা চাই না। আমরা কয়েকজন শিক্ষকের দুর্নীতির দায় পুরো শিক্ষক সমাজ নিতে চাই না। মাননীয় উপাচার্য আপনি জানেন, আমি নিজে একজন শিক্ষক। আপনি আমাদের শিক্ষক সমিতির সম্মানীত সভাপতি ছিলেন। আপনি আমাদের প্রতিনিধি।
তাই মাননীয় উপাচার্য আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ, প্রতীকের মত মেধাবী ছাত্রের সাথে কয়েকজন শিক্ষক যে অন্যায় করেছে আপনি এর সুষ্ঠু তদন্তের দেখভাল করুন। যে সকল শিক্ষকের নাম আমাদেরকে জানানো হয়েছে তারা যদি দোষী হয়ে থাকে তাহলে তাদের শাস্তি দিন। প্রতীক যেন ন্যায়বিচার পায়।
আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত রিপোর্টের অপেক্ষায় আছি...’
প্রসঙ্গত, গত ১৪ জানুয়ারি সোমবার বিকালে সিলেট নগরীর কাজলশাহ এলাকার একটি বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত থাকা শাবিপ্রবি শিক্ষার্থী তাইফুর রহমান প্রতীকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রতীক বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১১-১২ সেশনের ছাত্র। তার গ্রামের বাড়ি নরসিংদী জেলায়।