শিক্ষার্থী না হয়েও শাবিপ্রবির পরিচয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় পদে মালেকা

মালেকা খাতুন সারা
মালেকা খাতুন সারা  © সংগৃহীত

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থী না হয়েও বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম ভাঙিয়ে ভুয়া পরিচয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক থেকে শুরু করে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যপদ ভাগিয়ে নিয়েছেন সিলেটের মালেকা খাতুন সারা। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শাবিপ্রবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। তবে শাবিপ্রবিতে ভর্তি হয়ে তা বাতিল করেছেন বলে দাবি করেন মালেকা।

মালেকা খাতুন জুলাই আন্দোলনের সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমের কাছে বক্তব্য কিংবা সাক্ষাৎকারের সময় নিজেকে পরিচয় দিতেন শাবিপ্রবি শিক্ষার্থী হিসেবে। কখনো কখনো সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী বলেও দাবি করেছেন তিনি। ভিন্ন ভিন্ন পরিচয় ব্যবহার করে বিভিন্নজনের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। প্রকৃতপক্ষে তার নাম মালেকা খাতুন সারা হলেও কৌশলে বিভিন্ন সময় তিনি নিজেকে সুরাইয়া সারা কিংবা রুবাইয়াত তৃণা নামে পরিচয় দিয়েছেন। 

জানা যায়, ২০২১ সালে মালেকা সিলেট সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করেন। এরপর শাবিপ্রবিতে ভর্তি হয়ে তা বাতিল করেছেন বলে দাবি করেন তিনি। তিনি নিজেকে ২০২১-২২ সেশনের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয় দিতেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে যাতায়াত করতেন। মালেকার ভাষ্য অনুযায়ী, এরপর আর কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হননি এবং বর্তমানে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী পরিচয়ে তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিলেট জেলা কমিটির মুখপাত্র হন। পরবর্তী সময়ে শাবিপ্রবির শিক্ষার্থী পরিচয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে মনোনীত হন। বিষয়টি জানাজানির পর শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া।

আরও পড়ুন: রাবি ভর্তি পরীক্ষা: শিক্ষার্থীদের পছন্দ কেন্দ্রেই পরীক্ষা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শাবিপ্রবির সংগঠক রবিউল ইসলাম মামুন বলেন, ‘শুনেছি মালেকা খাতুন সারা শাবিপ্রবিতে ভর্তি হয়েছিল। তবে অনেক আগেই তার ভর্তি বাতিল করেছে। এভাবে তো অনেক স্টুডেন্ট ভর্তি বাতিল করে চলে যায়। ভর্তি বাতিল করে সে কোনোভাবেই নিজেকে শাবিপ্রবির স্টুডেন্ট দাবি করতে পারে না।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শাবিপ্রবির সাবেক সহসমন্বয়ক আজাদ শিকদার বলেন, ‘মালেকা খাতুন সারাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে আন্দোলনের সময় সাস্টিয়ান হিসেবে চিনতাম। সে আমাদের সাস্টের সমন্বয়ক কমিটিতেও ছিল এবং আন্দোলনের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। তবে আন্দোলনের পর বিশেষ করে আগস্টের পর বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক হতে পারে জেনে তাকে স্পষ্টীকরণের জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু এরপরও জানতে পারছি, মালেকা খাতুন সারা বিভিন্ন জায়গায় সাস্টের পরিচয় ব্যবহার করে নিজেকে উপস্থাপন করেছে। সম্প্রতি সে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কমিটিতেও সাস্টের পরিচয় ব্যবহার করে পদ গ্রহণ করেছে, যা স্পষ্টতই মিথ্যাচার।’

Maleka Inner

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কমিটিতে মালেকা খাতুন সারার নাম (লাল বৃত্ত চিহ্নিত)

শাবিপ্রবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আসাদুল্লা আল গালিব বলেন, ‘আন্দোলনের সময় আমরা মালেকা খাতুনের প্রকৃত পরিচয় জানতাম না। আর তখন সেই সিচুয়েশন ছিলও না। কারণ আন্দোলনে সব প্রতিষ্ঠান এক কাতারে ছিল। পরবর্তী সময়ে জানতে পেরেছি, সে শাবিপ্রবির শিক্ষার্থী না।’

মালেকা লোকপ্রশাসন বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন কি না, জানতে বিভাগটির একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, ‘আমরা মালেকা খাতুন সম্পর্কে অবগত নই। তাকে আমরা কোনো দিন ক্লাসে কিংবা ডিপার্টমেন্টের আশপাশেও দেখিনি।’

লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষার্থী হেলাল খান বলেন, ‘আন্দোলনের সময় মালেকা খাতুন শাবিপ্রবির লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী দাবি করত। কিন্তু তাকে আমরা কোনো দিন বিভাগের আশপাশেও  দেখিনি। সে আমাদের বিভাগে ভর্তি হলে একদিন হলেও দেখতে পেতাম।’ মালেকা খাতুন কখনো বায়োকেমিস্ট্রি কিংবা বন ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী দাবি করতেন বলেও অভিযোগ করেন এই শিক্ষার্থী।

আরও পড়ুন: রুয়েট ভর্তি পরীক্ষা: মেধাতালিকায় স্থান পাওয়া শিক্ষার্থীদের বিভাগ পছন্দক্রম শুরু শনিবার

লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. আশরাফ সিদ্দিকী বলেন, ‘আন্দোলনের পর আমাদের বিভাগের অনেক শিক্ষার্থী আমার কাছে অভিযোগ করেছেন মালেকা খাতুন নাকি আমাদের বিভাগের আইডি কার্ড বানিয়ে সিলেটে শাবিপ্রবি শিক্ষার্থী পরিচয় দিত। বিষয়টি জানার পর আমি তাকে সতর্ক করে দিয়েছিলাম এবং বলেছিলাম এ রকম আবার শুনলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘সারা আমাদের বিভাগে ভর্তি হয়েছিন কি না, আমাদের বিভাগের কেউ অবগত নয়।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে মালেকা খাতুর সারা বলেন, ‘শাবিপ্রবিতে আমি ভর্তি হয়েছিলাম। তবে সেটা আবার বাতিল করেছি। বর্তমানে আমার কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি নেই। সে জন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে শাবিপ্রবিই দেখানো হয়েছে।’ শাবিপ্রবিতে কোন বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন জানতে চাইলে তিনি ফোন কেটে দেন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence